হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যায় ভোগেন অনেকে কিন্তু হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণ, লক্ষণ ও মুক্তির উপায় কী তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননা অধিকাংশ মানুষ। যখন থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় কম থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে তখন সেই অবস্থাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। অর্থাৎ শরীরের এন্ডোক্রাইন সিস্টেম বা অন্তঃ-স্রাব তন্ত্রের অসুস্থতাই হল হাইপোথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড গ্রন্থি, প্রয়োজনীয় পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে না পারার কারণে শরীরের ঠাণ্ডা সহ্য করবার ক্ষমতা কমে যাবার পাশাপাশি ক্লান্তি-অবসাদ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিষণ্ণতা, ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হয়, যাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। গর্ভাবস্থায় হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা না হলে, বাচ্চার সার্বিক বৃদ্ধি এবং বুদ্ধির বিকাশ দেরীতে হয়, যাকে ক্রেটিনিজম বলে। কোষ, খাবার থেকে পাওয়া এনার্জিকে কীভাবে ব্যবহার করবে সেটাকে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করে এবং এই প্রক্রিয়াকে বিপাকক্রিয়া বা মেটাবোলিজম বলে। বিপাকক্রিয়া অন্যান্য কিছু বিষয়ের সাথে শরীরের তাপমাত্রা, হৃৎস্পন্দন এবং ক্যালোরি ঝরে যাওয়াকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোনের অভাবে শরীরের সব প্রক্রিয়া ব্যাহত হবার কারণে কম এনার্জি তৈরি হয় এবং বিপাকের হার কমে যায়। সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি দেখতে পাওয়া যায়৷ কিন্তু তা শুরু হতে পারে যেকোনো বয়সে।
থাইরয়েডজিমের প্রভাব সামান্য থাকলে ডাক্তারি পরিভাষায় তাকে সাবক্লিনিকাল হাইপোথাইরয়ডিজম বলা হয়।
ডাক্তাররা এই রোগের চিকিৎসায় সাধারণত যে ওষুধ গুলি প্রয়োগ করেন তাতে শরীরে কৃত্রিম হরমোন প্রবেশ করানো হয়। যাতে শরীর তার শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ সঠিক মাত্রায় বজায় রাখতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজমে বর্তমানে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। সাধারণত ৬০ বছরের অধিক বয়সী মানুষদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ১১% ভারতীয় হাইপোথাইরয়ডিজমের শিকার। প্রতি আট জন মহিলার মধ্যে একজন হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত।
এই রোগ অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে ধরা পড়ে না। থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগের লক্ষণগুলো এতটাই বৈচিত্র্যময় হয় যে খুব সহজেই তা চিকিৎসকদের সন্দেহকে এড়িয়ে যায়। তাই কিছু উপসর্গ আছে যা দেখে আপনি নিজেই সন্দেহ করতে পারবেন হয়তো আপনি হাইপোথাইরয়েডিজম এ ভুগছেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন৷
অনেকের ক্ষেত্রেই দীর্ঘ বছর ধরে ধীরে ধীরে এই লক্ষণ গুলির প্রকাশ ঘটে৷ অবশ্য বয়সের সাথে সাথে লক্ষণ গুলির মধ্যে বেশ কিছু স্বাভাবিক ভাবেই আসে।
হাশিমোটো‘স থাইরয়ডিটিস
হ্যাসিমোটো থাইরয়ডিটিসের মতন স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমস্যা হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণ। থাইরয়েড গ্রন্থির ব্যথা বা জ্বালাকে ‘থাইরয়েডিক্স’ বলে। শরীরে হ্যাসিমোটো থাইরয়ডিটিসের উপস্থিতিতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং সেই অ্যান্টিবডি থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে দেয়, অবশ্য একই জিনিষ ভাইরাল সংক্রমণ থেকেও হতে পারে।
সাধারণত এর প্রকোপ দেখা যায় মাঝবয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে। অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগটি কনজেনিটাল হিসেবেও ধরা দেয়।
হাইপোথাইরোডিজমের চিকিৎসার মধ্যে, প্রতিদিন সিন্থেটিক থাইরয়েড হরমোন লেভোথাইরক্সিন নেওয়াটা অন্যতম। থাইরয়েড হরমোন লেভোথাইরক্সিন একধরনের ওরাল ওষুধ, হাইপোথাইরয়ডিজমের লক্ষণকে বিপরীতমুখী করে দিয়ে হরমোনের মাত্রাকে আবার স্বাভাবিক করে দেয়।
সার্জারি?
হ্যাঁ, সার্জারির মাধ্যমে থাইরয়েড বাদ দিতে গেলে সেখান থেকে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে। সার্জারি করে থাইরয়েড গ্রন্থির কোন একটা অংশ বাদ দিয়ে দিলেও অবশিষ্ট গ্রন্থি কিন্তু প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোন তৈরি করতে সক্ষম।
এছাড়াও যেই পদ্ধতি গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি হলোঃ
রেডিয়েশন থেরাপি
লিম্ফোমার মতন নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসায় সময়ে, ঘাড়ে রেডিয়েশন দেবার জন্য থাইরয়েড কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন তৈরি করতে সমস্যার সম্মুখীন হয়।
খাবারে প্রয়োজন আয়োডিন
থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য থাইরয়েড গ্রন্থির আয়োডিনের দরকার লাগে। আয়োডিন আমাদের শরীরে তৈরি হয় না বলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে পাওয়া দরকার। কাঁচা নুনে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন থাক এবং পাশাপাশি। ডিম, শেল-ফিস, নোনা জলের মাছ, ডেয়ারি পণ্য এবং সমুদ্র-শৈবালেও আয়োডিন থাকে।
ওষুধের প্রয়োগ
যে ধরণের ওষুধ গুলি সাধারণত প্রয়োগ করা হয় সেগুলি হলো
সাধারণত যেগুলি দেখা যায়-
সাধারণত দু’রকম পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় যে কোনো রোগী হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত কিনা। তা হলো ডাক্তারি পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষা।
ডাক্তারি পরীক্ষা
ডাক্তাররা সাধারণত রোগীর শারীরিক পরীক্ষা ( রোগের লক্ষণ) এবং তার মেডিকেল হিস্ট্রির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসেন যে সেই রোগী হাইপোথাইরয়ডিজম বহন করছেন কিনা।
যেমনঃ
এছাড়াও ডাক্তার রা কিছু প্রশ্ন রোগীকে জিজ্ঞেস করেন যেমন গায়ে ব্যথা, মানসিক অবসাদ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা গুলি আছে কিনা৷
এছাড়াও সাধারণ কিছু রক্ত পরীক্ষা করাতে দেন।
রক্ত পরীক্ষা
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ বোঝা গেলে হরমোনের মাত্রা বোঝবার জন্য ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করান, যার মধ্যে আছে,
থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH)
T4 (থাইরক্সিন)
T4-এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হলে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়, যদিও অনেকেরই টিএসএইচ বেশী থাকলেও T4-এর মাত্রা কিন্তু স্বাভাবিক থাকে। এই অবস্থাকে সাব-ক্লিনিক্যাল (লঘু) হাইপোথাইরয়েডিজম বলে এবং একে হাইপোথাইরয়েডিজিমের প্রাথমিক পর্যায় হিসেবেই ধরা হয়।
কেউ কেউ আমৃত্যু এই সমস্যায় ভোগেন। তবে ওষুধ নিঃসন্দেহে রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।
হাইপোথাইরয়ডিজমের চিকিৎসায় ডাক্তার রা সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ মনে করেন Levothyroxine ( Levoxyl, Synthroid) কে। T4 হরমোনের এই সিন্থেটিক রূপটি শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ক্রিয়াকে নকল করে, যার ফলে শরীর নিজে থেকে থাইরয়েড হরমোন গুলি উৎপন্ন করে।
চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর মোটামুটি ভাবে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে রোগ নিরাময় প্রক্রিয়া শুরু হতে৷ তবে নিয়মিত রক্তপরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলতে হবে৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সারাজীবন হাইপোথাইরয়ডিজমের ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। ওষুধ ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটা জানার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর TSH এর মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
তার ফলের উপর ভিত্তি করে ডাক্তার ওষুধের ডোজ নির্বাচন করবেন।
প্রাণীদেহ থেকে নির্যাস সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে থাইরয়েড হরমোনগুলি থাকে। এটিও হাইপোথাইরয়ডিজমের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সাধারণত শূকরের দেহ থেকে এই নির্যাস সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে T3 এবং T4 দু’টি হরমোনই বর্তমান।লিভোথাইরক্সিনের মাধ্যমেযেখানে শুধুমাত্র T4 হরমোনটিই শরীরে প্রবেশ করানো যায়।
এছাড়াও গ্ল্যান্ডুলার নির্যাস কোনো কোনো ফুড স্টোরে কিনতে পাওয়া যায়। তবে মনে রাখা প্রয়োজন এটি কিন্তু ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ( FDA) অনুমোদিত নয়।
এছাড়াও সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি হাইপোথাইরয়ডিজম নিরাময়ে সহায়তা করে।
এছাড়াও হাইপোথাইরয়ডিজম বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভধারণ সংক্রান্ত না না জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণে শরীরে যে ঘাটতি গুলো হয়, তা থেকে মুক্তি পেতে ডায়েট নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা পালন করে।
তাই ডায়েটে এই খাবার গুলি অবশ্যই রাখুন, এবং তা নিয়মিত।
১. আয়োডিনযুক্ত খাবার
আয়োডিনের ঘাটতি মেটাতে আমরা আয়োডিনযুক্ত খাদ্যলবন খেয়ে থাকি। কিন্তু অতিরিক্ত লবন উচ্চ রক্তচাপের কারণ হওয়ায় চিকিৎসকরা লবনের ব্যবহার কমাতে বলে থাকেন। তাই লবনের পরিবর্তে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া চিংড়ি, টুনা মাছেও প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। সেদ্ধ ডিম, কলা, দানা জাতীয় শস্য, শাকপাতাতেও প্রচুর আয়োডিন। তাই খাদ্যতালিকায় এগুলো অবশ্যই রাখুন।
২. উচ্চমানের টাইরোসিন সমৃদ্ধ খাবার
টাইরোসিন দরকার হয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে। উচ্চমানের টাইরোসিন প্রোটিন পেতে হলে ডায়েটে রাখতে হবে মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, মাছ, কলা ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ।
৩. ফল ও সবুজ শাকসবজি
ফল ও শাকসবজিতে থাকে ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমায়। তাছাড়া ফল ও শাকসবজি পুষ্টিকর হওয়ায় আমাদের শরীরের হরমোনের ব্যালেন্স করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এমনকি হার্টের সুরক্ষায় ও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. ব্রাউন রাইস
বাজার চলতি সাদা ভাতের তুলনায় ব্রাউন রাইসের পৌষ্টিক গুণ বেশি থাকে। অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। এক কাপ ব্রাউন রাইসে সাড়ে তিন গ্রাম ফাইবার থাকে। গ্লাইসেমিকের মাত্রা কম থাকায় শরীরে রক্ত শর্করার মান নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। ব্রাউন রাইসে থাকে কার্বোহাইড্রেট। যা থাইরয়েডের সমস্যায় মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে অনেক সময় হজম ঠিক মত হয় না খাবার। বাদামী ভাত হজম হয়ে যায় সহজে। পাশাপাশি হজমের সমস্যা কমায়। তাই চেষ্টা করুন সাদা ভাতের বদলে লাল চালের ভাত যা ব্রাউন রাইস নামে পরিচিত তা খাওয়ার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রাউন রাইস খেলে তা খান থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে।
৫. পর্যাপ্ত জল
যেকোনো রোগের সাথে লড়াই করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া৷ দিনে ৪ লিটার জল অবশ্যই খান, হাইপোথাইরয়ডিজমের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে।
চিনি জাতীয় খাবার, প্রসেসড ফুড, অতিরিক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার, রিফাইন্ড ময়দা বা তেল, এসব একেবারেই বাদ দিন খাদ্যতালিকা থেকে।
নির্দিষ্ট চিকিৎসা চললেও কিছু কিছু সমস্যা বা জটিলতা প্রায়ই দেখা যায়। যা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে, এবং নিঃসন্দেহে হাইপোথাইরয়ডিজমের প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
যেমন -কিছু শারীরিক সমস্যা, যেগুলো হাইপোথাইরয়ডিজমের সাথে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।
যেমনঃ
ফেটিগ বা সারা শরীরে যন্ত্রণা, হাইপোথাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায়, এর থেকে মুক্তি পেতে কিছু জিনিস মেনে চলা প্রয়োজন। যেমনঃ
পর্যাপ্ত ঘুম প্রতি রাতেই
ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফল এবং শাকসবজি রাখা
স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত মেডিটেশন এবং যোগাভ্যাস।
কথা বলুন
রোগ মানুষকে মানসিক ভাবে আরও দুর্বল করে দেয়। যেখানে হাইপোথাইরয়ডিজম জন্ম দেয় ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটির মতো সমস্যা৷ এগুলি আমাদের জীবন জন্ম দেয় বহু জটিলতার। তাই কথা বলুন৷ আত্মীয়, বন্ধু, স্বামী বা স্ত্রী। যার সাথে নিজেকে সহজ মনে হয় তার সাথেই মন খুলে কথা বলা প্রয়োজন। শারীরিক এবং মানসিক দুই সমস্যার কথাই বলুন। ডাক্তারের কাছেও লোকাবেন না কিছু। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি কোনো রকম মানসিক সমস্যা হলে, সেটাও জানান ডাক্তারকে।
যদি শরীরের থাইরয়েড হরমোন অস্বাভাবিকভাবে কম (বা উচ্চ) স্তরে থাকে, এটি আপনার মাসিক চক্রের অস্থিরতার কারণ হতে পারে। এটি আপনার ডিম্বানুর পরিস্ফুটনের ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে গর্ভধারণ কঠিন করে তোলে বা আরো খারাপ ক্ষেত্রে এর ফলে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। অপরদিকে, যদি আপনি হাইপোথাইরয়েডিজমের সাথে গর্ভাবস্থাকে বিবেচনা করেন তবে মনে রাখবেন যে গর্ভপাতের একটি ঝুঁকি থাকবে বা আপনার সন্তান জন্মগত অক্ষমতা সহজাত হতে পারে।
গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা শুরু করার আগে আপনার ডাক্তার আপনাকে কয়েকটি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে পরামর্শ দেবেন। আপনি থাইরয়েড পরীক্ষা করাতে হবে গর্ভধারনের চেষ্টার আগে এবং অবশ্যই গর্ভধারণের পর।
অনেক সময় বাচ্চার জন্মের পরেও হাইপোথাইরয়ডিজমের সমস্যা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ মহিলাদের ১২-১৮ মাসের মধ্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তিও ঘটে।
যদি গর্ভাবস্থায় আপনার হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে এবং আপনি এটি চিকিৎসা করতে ব্যর্থ হন তবে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া (গর্ভাবস্থার পরে পর্যায়ে রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি), গর্ভপাত, অকাল প্রসব, হার্ট ফেইল, অ্যানিমিয়া এবং প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা সবই ঘটতে পারে।
একইভাবে, আপনার শিশুর জন্মের কম ওজন, অকাল জন্ম, থাইরয়েড অবস্থা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা এবং কখনও কখনও, মৃত শিশুর জন্মের মতো সমস্যাগুলির সাথে সাথে তার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহের পরেই আপনার গর্ভস্থ শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থিটি কাজ শুরু করবে। তারপরে, থাইরয়েড হরমোনটির জন্য শিশুটি আপনার উপর নির্ভর করবে। তাই গর্ভধারণ করার চেষ্টা করার আগে আপনার থাইরয়েড সঠিকভাবে এবং থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল করার জন্য অপরিহার্য।
হাইপোথাইরয়েডিজমের সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা একটি পিলের আকারে থাকে যা আপনার ডাক্তারের দ্বারা নির্ধারিত হবে। ট্যাবলেটটিতে সিন্থেটিক থাইরক্সাইন রয়েছে (থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত T4-এর সমান) এবং এটি আপনার শরীরের অই হরমোনের অভাবকে প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্যে। প্রথম তিন মাসের মধ্যে প্রতি চার সপ্তাহের মধ্যে আপনার থাইরয়েড হরমোন মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে এবং আপনার থাইরয়েড ফাংশনটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় না হওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডোজ সামঞ্জস্য করতে আপনার ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দেবেন।
যত তাড়াতাড়ি আপনি এই অবস্থা থেকে মুক্ত হবেন তত তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন! যাইহোক, যদি আপনার থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম থাকে, একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment