Categories: হৃদরোগ

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

Published by

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?

হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি চেম্বার। উপরের দু’টি চেম্বারকে বলে এট্রিয়াম বা অলিন্দ। আর নীচের দু’টি কুঠুরিকে বলে নিলয় বা ভেন্ট্রিকল। ভেন্ট্রিকল রক্তকে পাম্প করে সারা শরীরে পৌঁছে দেয়। প্রশ্ন হল পাম্পিং হচ্ছে কী করে? আসলে হার্টে একটি অংশ থেকে বৈদ্যুতিক স্পন্দন তৈরি হয় যা হার্টকে স্পন্দিত হতে সাহায্য করে।

কোনওভাবে হার্টের স্পন্দন খুব বেড়ে গেলে দরকার মতো রক্ত শরীরে পৌঁছাতে পারে না। মাথায় রক্ত পৌঁছাতে পারে না। দুম করে মানুষ পড়ে যায়। হার্ট যদি আর না চলে তাহলে তা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর প্রাণহানি ঘটে।

প্রাথমিক চিকিৎসা

হঠাৎ কোনও ব্যক্তি কথা বলতে বলতেই দুম করে পড়ে গেলেন বা আমাদের পরিচিত আত্মীয়স্বজনরাই গল্প করতে করতে পড়ে গেলেন— এই বিষয়টি. হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। এমন ক্ষেত্রে বুঝতে হয় হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর কারণ দু’টি হতে পারে— ১) হার্ট খুব জোরে চলছে। ২) হার্টে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী অংশটির কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে।

এমন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে তা জানা দরকার। তাহলে বহু কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের রোগীর প্রাণ বাঁচবে।

কী করবেন—

  • প্রথমত রোগীকে শুইয়ে দিন। বসিয়ে রাখবেন না। শোয়ানোর পর পা দু’টি তুলে দিতে হবে। আর সেই সময় হাতের নাড়ি বা পালস সচল আছে কি না তাও দেখতে হবে। কিংবা গলার উপরিভাগে নীচের চোয়ালের ঠিক নীচে ক্যারোটিড আর্টারি দপদপ করছে কি না তা দু’টি আঙুল দিয়ে চেপে দেখা দরকার।
  • এরপর রোগীর বাম দিকে বসে দিতে হবে কার্ডিয়াক ম্যাসাজ বা কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসিটেশন। অর্থাৎ রোগীর বুকের উপর দুই হাত দিয়ে চাপ দিতে হয়। এতখানিই চাপ দিতে হবে যাতে বুক ২ ইঞ্চি নেমে যায়। এভাবে মিনিটে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ বার চাপ দিতে হবে। সিপিআর-এ রোগীর জ্ঞান ফিরে আসার সম্ভাবনা যথেষ্টই থাকে।

সমস্যা হল আমরা কোনও ব্যক্তিকে অজ্ঞান হতে দেখলে পালসও দেখি না। শুধু এদিক-ওদিক ফোন করতে থাকি। কেউ কেউ ছবি তোলেন মোবাইলে। রোগীই পড়েই থাকেন। অথচ সঠিকভাবে কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দিলেও কাউকে কাউকে সুস্থ করে তোলা যায়।

এমনকী আধঘণ্টা কার্ডিয়াক ম্যাসাজ করেও কোনও কোনও ব্যক্তির জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

ভোট দানের মতো প্রত্যেক নাগরিকেরই সিপিআর জেনে নেওয়া কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। বাইরের লোকের জন্য না হোক, নিজের বাড়িতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেলও অন্তত সামাল দিতে পারবেন।

অতএব অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ১ মিনিটের মধ্যে কার্ডিয়াক ম্যাসাজ করতে পারলে রোগীর প্রাণ রক্ষার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।

কেন হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট?

  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগীর আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল। হয়তো আগে হার্ট অ্যাটাকও হয়েছে তাঁর! অর্থাৎ হার্টের পেশিতে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর মধ্যে কোলেস্টেরলের পলি জমে সেই আর্টারিতে রক্ত সঞ্চালন অবরুদ্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হার্টের পেশি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই হল হার্ট অ্যাটাক।

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরে হার্টের পেশিতে বিস্তর পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষত, ইলেকট্রিক্যাল ইমপালসেও পরিবর্তন আসে। এর ফলে দেখা দিতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মেজর কারণ হার্ট অ্যাটাক।

এছাড়া শরীরে পটাশিয়ামের ভারসাম্যে সমস্যার কারণেও হতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়ে গেলে এরপর চিকিৎসকরাই দায়িত্ব নেন রোগীর। এখন আমরা জানি প্রতিটি মোটরগাড়ির বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা আছে। আমরা যাকে বলি হর্স পাওয়ার। তেমনই হার্টেরও থাকে ইজেকশন ফ্র্যাকশন। সাধারণত ইজেকশন ফ্র্যাকশন ৬০-৮০-এর মধ্যেই থাকে। যত কমতে থাকে ততই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে।

রোগী ওষুধ খেয়ে হাঁটাচলা করে ভালো থাকলেও ৩০-৩৫ শতাংশের নীচে ইজেকশন ফ্র্যাকর্শন হলে সেক্ষেত্রে রোগীর বয়স সহ অ্যনান্যা শারীরিক অবস্থার পর্যলোচনা করে পেসমেকার বসানো যায়।

এই পেসমোরকে বসে আইসিডি বা ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভার্টার ডিফিব্রিলেটর বলে।

এই বিশেষ পেসমেকার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে নিজের থেকে বৈদ্যুতিন স্পন্দন তৈরি করে হার্টকে চালু করে। এছাড়া বেশ কিছু ওষুধ ও অপারেশন আছে যা মেনে চললে বা করলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে মুক্তি পান রোগী।

অল্প বয়সে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট

অল্প বয়সেও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে দেখা গিয়েছে। এমন ক্ষেত্রে রোগীর ইকোকার্ডিয়াম করে দেখা হয়। আর তাতেই বোঝা যায় রোগীর হার্টের পেশি অত্যন্ত মোটা হয়ে গিয়েছে।

আগে থেকে হার্টের পেশি মোটা হয়ে গিয়ে থাকলে অনেক অল্প বয়সেও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। এই সমস্যাকে কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলে। এই সমস্যা ইকোকার্ডিগ্রাফিতেই বোঝা যায়। সাধারণত ৪০-৬০ বছর বয়সের মধ্যে এই ধরনের জটিলতা বেশি দেখা যায়।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধের উপায়
  • খ্যাদাভ্যাসের পরিবর্তনের প্রয়োজন। একইসঙ্গে দরকার দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য পরিত্যাগ করা। • জাঙ্কফুড • পোড়া মাংস যেমন কাবাব • বৈশি তৈলাক্ত খাদ্য যেমন বিরিয়ানি খাওয়া যাবে না। • শাকসব্জি, ফল বেশি করে খেতে হবে।

কখন হাঁটবেন

ভোরবেলা ১০ মিনিট হন হন করে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago

গলব্লাডার স্টোন ওষুধে কি গলে যায়?

গলব্লাডার স্টোন বলতে কী বোঝায়? বাংলায় গলব্লাডারের অর্থ হল পিত্তথলি। লিভারের সঙ্গে যুক্ত থাকা একটি…

4 months ago