ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Published by

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস?

ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির নাম অ্যালভিওলাই। কিন্তু বাতাসকে তো নাক থেকে মুখ থেকে অ্যালভিওলাই পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। এই পৌঁছে দেওয়ার রাস্তাগুলির নাম হচ্ছে ব্রঙ্কাস এবং তার শাখাগুলিকে বলে ব্রঙ্কাই। আইটিস শব্দটির অর্থ হল ইনফ্ল্যামেশন। এই বাতাস যাওয়ার রাস্তাগুলোয় যখন প্রদাহ হয় তখন তাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস।

ইনফ্ল্যামেশন কেন হয়?

যে কোনওভাবেই ইনফ্ল্যামেশন হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যেমন দায়ী থাকে তেমনই তা ভাইরাসের কারণেও হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকী দূষিত ধূলিকণার কারণেও এমনটি হওয়ার ভয় থেকে যায়। এমনকী দুর্ঘটনাবশত অ্যাসিড খেয়ে ফেলার কারণেও এমনটি হতে পারে। দূষিত ধোঁয়ায় ক্রমাগত শ্বাস নেওয়ার কারণেও এমনটি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

রোগের উপসর্গ

ব্রঙ্কাইটিসকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়—

ক) অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস: এই সমস্যায় কমবেশি আমরা সকলেই ভুগে থাকি। একটু ঠান্ডা লাগল, তারপর শুকনো কাশি শুরু হল। এই হল অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস।

খ) ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস: এই সমস্যায় রোগীর সারা বছর ধরে খুক-খুক করে কাশি হয়েই চলে! তবে শুধু কাশি নয়, কাশির সঙ্গে কফের সমস্যাও থাকতে পারে। রোগের অগ্রগতি হলে ফুসফুসের রাস্তাগুলির ক্রমাগত প্রদাহের কারণে ব্রঙ্কাসগুলির ক্ষতি হতে থাকবে। তখন শুরু হবে ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট। দেখা যাবে অল্প পরিশ্রমেই রোগী হাঁপিয়ে পড়ছেন। একসময় অবস্থা এমনই দাঁড়িয়ে যায় যে নিজের থেকে স্নান করা, টয়লেটে যাওয়াও রোগীর কাছে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজগুলি করা অসম্ভবও হয়ে পড়ে।

ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার পার্থক্য

কাশি এবং শ্বাসকষ্ট দু’টি রোগেই হয়। তবে উপসর্গগত কিছু তফাত রয়েছে।

  • কোনও ব্যক্তির ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হয়ে গেলে তার কষ্টটা থেকেই যায়। বিশেষ করে যদি ওই ব্যক্তি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হন। কষ্ট যেতেই চায় না। বাড়ে, আবার কমেও যায়। তবে একেবারে চলে গিয়েছে এমন হয় না। অন্যদিকে অ্যাজমা থাকলে তা মাঝেমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আবার যখন সমস্যা থাকে না তখন রোগী ভুলেই যান যে তাঁর কোনও অ্যাজমা ছিল! অর্থাৎ কোনও লক্ষণই প্রকাশ পায় না।
  • ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা মাথাচাড়া দিলে দ্রুত সমাধান নেই। অ্যাজমার ক্ষেত্রে দ্রুত আরাম পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • ব্রঙ্কাইটিসে কফ ওঠার প্রবণতা বেশি থাকে। অ্যাজমায় কফ ওঠার প্রবণতা যথেষ্ট কম থাকে।

ব্রঙ্কাইটিস কখন চিন্তার

  • ব্রঙ্কাইটিস রয়েছে এবং তার সঙ্গে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমণ হলে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিংবা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে দিতে হবে অক্সিজেন। এছাড়া কফ গাঢ় হয়ে গেলে কফ তুলে ফেলার ব্যবস্থাও করা দরকার। এছাড়া ব্রঙ্কাইটিস থাকলে যাতে আলাদা করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় তার জন্য অ্যাডাল্ট ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন ইত্যাদির কথা বলা যায়।

ব্রঙ্কাইটিস কি বংশগত?

ব্রঙ্কাইটিস কখনওই বংশগত নয়। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী থাকে আচরণ এবং পরিবেশগত কারণ। অর্থাৎ আমাদের নিজস্ব বদভ্যাসের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। ১ শতাংশ বা তারও কম ক্ষেত্রে জিনগত কারণে আলফা ১ অ্যান্টিট্রিপসিন প্রোটিনের অনুপস্থিতি বা জন্মগত কিছু বিরল অসুখ থাকে যার কারণে ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ধরনের কিছু সমস্যা ছাড়া বাদবাকি সব ক্ষেত্রে অসুখটিকে প্রতিরোধ করা যায়।

কোন কোন কারণে ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে

  • প্রধান কারণ ধূমপান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রঙ্কাইটিসের পিছনে দায়ী থাকে দীর্ঘ ধূমপানের ইতিহাস। অর্থাৎ একজন রোগী ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে ধূমপান করতে শুরু করলে একটা সময় পরে তার অবধারিতভাবে ব্রঙ্কাইটিস হবে।
  • কলকারখানায় কাজ: রাসায়নিক নিয়ে কাজ হয় এমন কারখানা, পাথর ভাঙার কারখানা, কাঠ চেরাই কলের শ্রমিকদের ব্রঙ্কাইটিস এবং সেখান থেকে এমফাইসিমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • বদ্ধ ঘরের মধ্যে উনুন জ্বালিয়ে, কাঠ, পাতা পুড়িয়ে রান্না করার অভ্যেস থেকেও হতে পারে ব্রঙ্কাইটিস।

প্রতিরোধের উপায়

  • ধূমপান করা চলবে না কোনওমতেই। কারণ দেখা গিয়েছে কোনও ব্যক্তির প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যা শুরু হয়েছে এমন হলে ধূমপান ছেড়ে দিলে রোগের অগ্রগতি অনেকখানি আটকানো যায়। তবে ধূমপানও করে যাবেন আবার ওষুধও খাবেন এমন করলে লাভ হবে না।
  • বদ্ধ ঘরে উনুন, কাঠ, পাতা জ্বালিয়ে রান্না ত্যাগ করতে হবে।
  • সঠিক নিরাপত্তা ছাড়া রাসায়নিক, পাথর ও কাঠ কলের কাজ কার যাবে না।
  • প্রতিদিন এরোবিক এক্সারসাইজ অর্থাৎ দৌড়াদৌড়ি, সাইক্লিং, সাঁতারের মতো এক্সারসাইজ করা দরকার।
  • ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করুন। না হলে ফুসফুসের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

ওষুধ কি সারাজীবন খেতে হয়?

অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস বা অ্যাকিউট ট্র্যাকিওব্রঙ্কাইটিস হলে কোনও সমস্যা নেই। যেমন জ্বর, পেট খারাপ হয়— কয়েকদিন ভোগায় তারপর শরীর সুস্থ হয়ে যায় তেমনই। ওষুধ খেলেই সমস্যা চলে যাবে।

তবে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে জটিলতা বেশি হয়। কারণ বায়ু প্রবাহের রাস্তা একবার খারাপ হয়ে গেলে তাকে আগের অবস্থায় ফেরানো কঠিন। সেক্ষেত্রে ওষুধ সারজীবন চালিয়ে যেতে হবে।

ওষুধ

ইনহেলার নিতে হবে প্রতিদিন। কোনওভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago

গলব্লাডার স্টোন ওষুধে কি গলে যায়?

গলব্লাডার স্টোন বলতে কী বোঝায়? বাংলায় গলব্লাডারের অর্থ হল পিত্তথলি। লিভারের সঙ্গে যুক্ত থাকা একটি…

4 months ago