লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ – কি করবেন, কি করবেন না

Published by

লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ তো আজকের দিনে অত্যন্ত বাস্তব একটা পরিস্থিতি। কাজের সুবাদে যে কোনওদিন শহরের বাইরে চলে যেতে হতে পারে যে কাউকে। তা বলে কি প্রেম থেমে থাকবে? চাকরির সুবাদে সঙ্গী আর আপনি যদি আলাদা শহরে থাকেন, তা হলে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে বরং প্রেমটা টিকিয়ে রাখার উপায় ভাবুন। কখনোই কিন্তু ঘাবড়াবেন না, বরং আপনার হাতের অস্ত্র গুলিকেই কাজে লাগান। দু’জনের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বটাকেই কাজে লাগান। দূরত্ব থাকলে যে প্রেমের রস আরও গাঢ় হয়, সে আপ্তবাক্যকে সত্যি প্রমাণ করার দায়িত্ব কিন্তু আসলে দুজনেরই ৷

বন্ধুত্বের সূচনা কৈশোরে হোক যৌবনে, প্রেমের বারণ এখন আর গুরুত্ব দেয়না দূরত্বকে। কেরিয়ার এখানে ফার্স্ট প্রায়োরিটি। না কোনোভাবেই তার সাথে চলেনা কোনোরকম কম্প্রোমাইজ। অগত্যা দুজন দু’প্রান্তে ৷ আর তারপর?চোখের আড়াল মানেই কি মনের আড়াল? কখনও হয়ত এর উত্তর হ্যাঁ কখনও বা না। কখনও ভাঁটা পড়ে প্রেমে, কখনও দেখা হওয়ার দিন গোনা। ভালো মন্দে মিশে এগোতে থাকে ‘লং ডিসট্যান্স রিলেনশিপ’৷ কিন্তু যদি হঠাৎ থমকে যায়?  মানুষটাকে ক্লিশে মনে হয়? কি করবেন?

আপনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত, অন্যান্য সম্পর্কের মতো লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপেও কিছু ডু’জ অ্যান্ড ডোন্ট’স থাকে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ- কি করবেন?

সততা বজায় রাখুন

লং ডিসট্যান্স সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সততা ৷ সৎ থাকুন একে অন্যের কাছে ৷ শারীরিক দূরত্বের কারণে আপনি কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, কখনও ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়বেন, এ সবই খুব স্বাভাবিক। মনের মধ্যে সে সব পুষে না রেখে একে অপরকে জানান। সঙ্গীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হলে, তাতে ক্ষতি হয় সম্পর্কের, আর ক্ষতি হয় তাতে থাকা দুজন মানুষের। সম্পর্কের মধ্যে জট পাকার আগেই শেয়ার করুন মনের কথা, সমস্যা এলে দু’জনে মিলে কাটিয়েও উঠতে পারবেন। একটা বিষয় মনে রাখবেন, অনেক সময় গভীর বন্ধুত্ব থেকে আমরা না চাইতেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, কখনও তা মানসিক,কখনও বা শুধুমাত্রই শারীরিক। এরকম ক্ষেত্রে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন ৷ অন্যথায় কেউ কেউ নিজেকে দোষী মনে করেন, যেটা সম্পর্কে ভীষণ ভাবে খারাপ প্রভাব ফেলে ৷

বরং সারাদিনের কথা একে অপরের সাথে  শেয়ার করুন। শুধু বলা নয় শোনার অভ্যেস তৈরি করুন৷ তার কাছেও একই ভাবে জানতে চান তিনি কি করলেন। 

পজেটিভ থাকুন সর্বদা

এটা অত্যন্ত জরুরি একটি পয়েন্ট। লং ডিসট্যান্স সম্পর্কে নানা সময় নানা চ্যালেঞ্জ আসে, সে সব মোকাবিলা করার জন্য মনের জোর ধরে রাখতেই হবে। চারপাশের মানুষদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না কখনই। মনের মধ্যে নেগেটিভিটি এলে তা ভীষণ রকম ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে সম্পর্কে। নেগেটিভিটির আঁচ নিমেষে পার করে ফেলে দুরত্বকে, ফলে সেই নেগেটিভিটি ছুঁয়ে যায় ওপারের মানুষটাকেও। মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন, যা হবে বা হতে চলেছে, তা ভালো কিছুই হবে, যদি না হয়, সে পরিস্থিতির মোকাবিলাও দুজনে মিলেই করবেন ৷ আর একান্ত অসুবিধে হলে টুক করে ওঁর শহরে পৌঁছে যান যদি তা সম্ভব হয়, না হলে অসময়ে একটা ভিডিও কল হতেই পারে।

নতুনত্ব আনুন সম্পর্কে

সম্পর্ক যত পুরনো হবে, তার মধ্যে নতুন রঙ ছড়িয়ে দিন। রোজকার নিয়মমাফিক কথাবার্তার মাঝেও সামান্য পরিবর্তন আনা যেতে পারে ৷ নিছক ছেলেমানুষি হোক কিম্বা যৌন আলাপ,সম্পর্ককে রঙিন করে তোলে। সবার সাথে মজা করতে ভালোবাসেন? কিম্বা লেগপুলিং? তাহলে এবার বরং নিজের ভিতরের সৃজনশীলতাটাকে বের করে আনুন। দু’জনের ছবি দিয়ে তৈরি করে ফেলুন মজার সব মিম আর ওঁকে পাঠিয়ে দিন। তারপরের মুহূর্ত গুলো কাটুক নিখাদ আনন্দে।

উপহার পাঠান

আশা প্রত্যাশার কথা যদি ছেড়েও দিই, উপহার পেতে কার না ভালো লাগে বলুন! আর তা যদি হয় প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে। উপহার মানেই সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে সবসময় দারুণ দামি কিছু পাঠাতে হবে তা নয়। বরং এমন কিছু পাঠান যা ওঁর খুব কাছের, কিন্তু দূরে থাকার কারণে মিস করেন। ওঁর সঙ্গে কথা বলার সময় একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন সেগুলো কী। কারণ তিনি কি চাইছেন তা সবচেয়ে ভালো বুঝবেন কিন্তু আপনিই। সেই মতো ছোট্ট সুন্দর উপহার পাঠিয়ে দিন ওঁর কাছে। উপহারের ছোঁয়া প্রিয় মানুষটিকে নতুন করে উপলব্ধি করতে বাধ্য৷ আসলে উপহার তো সত্যিই শুধু কোনো বস্তু নয়, তাতে মিশে থাকা ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস,কখনও বা স্পর্শও ৷ শুধু শপিং পোর্টালের ভরসাতেই নয়, সম্ভব হলে নিজে কিনে পাঠান, সাথে থাকুক হাতে আঁকা কার্ড বা ছোট্ট চিরকূট ৷ মনের মানুষ কাছে থাকুন বা দূরে, স্পর্শ টা আসলেই ভীষণ জরুরি ৷ ভালোবাসা রিনিউ হতে থাক এভাবেই।

চিঠিতেই ভরসা

দূরে থেকে ঘনঘন ভিডিও কল নয়। ২০২১ এ দাঁড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপি, মেসেঞ্জারের যুগে চিঠি তার কদর হারিয়েছে বলে মনে হলেও এখনও হাতে লেখা চিঠির পাশে দাঁড়াতে পারে না ইলেকট্রনিক মেসেজ। দেশের মধ্যে হলে মনের কথা গুছিয়ে লিখে ফেলুন রঙিন কাগজে আর পাঠিয়ে দিন ওঁর ঠিকানায়। সম্পর্ক পুরনো হলেও লিখে ফেলুন একখানি জমাটি প্রেমপত্র। আঠারো হোক বা আটচল্লিশ, প্রেমপত্র মনকে বিচলিত করবেই। সম্পর্কের ভিতে এভাবেই পড়তে থাকুক ইট, বালি, সিমেন্টের প্রলেপ ৷

লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ -কি করবেন না?

তুলনা করবেন না

কখনও কোনো অবস্থাতেই কোনো বন্ধু বা পরিচিত বা অন্য কারো স্বামী/স্ত্রী বা বয়ফ্রেন্ডের/গার্লফ্রেন্ডের  সাথে আপনার সঙ্গীর তুলনা করবেন না ৷ এর ফলে তিনি নিজেকে অসহায় মনে করতে পারেন ৷

বিশ্বাস হারাবেন না

লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস আর সততা কোনো ভাবেই না নষ্ট হতে দেবেন না। যদি এমন কোনো কাজ করে থাকেন, যা আপনার মনে হচ্ছে ভুল, এবং তার জন্য অপরাধ বোধে ভুগছেন তা খুব প্রয়োজন নাহলে সঙ্গীর সাথে শেয়ার করবেন না, যদি বিশ্বাস নষ্ট হওয়ার ভয় পান ৷ তবে অবশ্যই ভবিষ্যতে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন ৷

শেয়ার করুন, সবটা নয়

রোজকার খুঁটিনাটি শেয়ার করুন দুজন দুজনের সাথে। কিন্তু এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বলবেন না যার ফলে তিনি অসহায়তায় ভুগতে পারেন বা মনের মধ্যে নেগেটিভিটি আসতে পারে ৷ হঠাৎই করে ফেলা কোনো ভুল তার কাছে স্বীকার করুন, যদি আপনি মন থেকে বিশ্বাস করেন এতে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়বে। সম্পর্কে চির ধরাতে পারে এমন কথা না বলাই শ্রেয়।

সন্দেহ নয়

যেকোনো সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মূলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী হয় সন্দেহ। কারো কারো ক্ষেত্রে সন্দেহ একটি রোগের আকার নেয়। অযথা সন্দেহ কখনই করবেন না। স্বাস্থ্যকর একটি সম্পর্কে ভাঙন আনতে সন্দেহ অনেকসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷

মনে সন্দেহ এলে খোলামেলা কথা বলুন, সঙ্গীকে প্রশ্ন করুন ৷ যদি মনে হয় সে মিথ্যে বলছে, তাকে সময় দিন, সম্পর্ককে সময় দিন। তারপরেও এমনটা হলে সেই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসুন। কিন্তু সন্দেহকে মানসিক রোগের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago