Categories: চুল

খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

Published by

ড্যানড্রাফ বা খুশকি মাথার ত্বকের (স্ক্যাল্পের) একটি সমস্যা, যাতে সাধারণত মাথার ত্বকের ওপর আঁশের মতো আবরণ উঠতে থাকে। খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এই সমস্যা আমরা কমাতে পারি।

 এটি ছোঁয়াচে বা বিপজ্জনক কিছু নয়, কিন্তু এটি খুবই অস্বস্তিজনক এবং একে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা খুবই কঠিন। অল্প ড্যানড্রাফ (খুশকি) সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করে কমে যায়। তবে তাতে কাজ না হলে মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তবে সিম্পটম পরে আবার ফিরে আসতে পারে।

খুশকির লক্ষণ

  • মাথার ত্বক, চুল, ভ্রু, দাড়ি এবং কাঁধে পাতলা আঁশের মতো চামড়ার টুকরো উঠতে দেখা যায়।
  • স্ক্যাল্পে প্রচণ্ড চুলকানি হয়।
  • অনেক সময় চুল অতিরিক্ত চিটচিটে হয়ে থাকে, যা শ্যাম্পু করলেও যেতে চায় না।
  • শিশুদের মাথার ত্বক খসখসে হয় এবং মাছের আঁশের মতো ত্বকের অংশ উঠতে থাকে।

এই লক্ষণগুলি শীতকালে ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠে  এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগেও বেড়ে ওঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণভাবে দোকানে কিনতে পাওয়া যায় এমন অ্যান্টি– ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করে এই সমস্যা কমে যায়,  তবে এতে কাজ না হলে তখন ত্বক সংক্রান্ত চিকিৎসক (ডার্মাটোলজিস্ট) এর পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।

খুশকি হওয়ার কারণ

  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা।
  • ম্যালাসেজিয়া নামক ইস্টের মতো এক ধরনের ফাঙ্গাস, যা বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার ত্বকে থাকে, এবং সেখানে উপ্সথিত তেল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।
  • শুষ্ক ত্বক।
  • চুলে ব্যবহৃত কোনো প্রোডাক্ট থেকে ত্বকের সমস্যা।
  • Eczema বা সোরিয়াসিস এর মতো নোনো রোগ।

খুশকি হলে কি কি সমস্যা হতে পারে

  • যেকোনো বয়সের, যেকোনো মানুষেরই খুশকি হতে পারে। তবে সাধারণত খুব ছোটো বাচ্চা থেকে শুরু করে কমবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের খুশকির সমস্যা বেশি হয়। এর মানে এই নয় যে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে খুশকির সমস্যা হয় না। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সারাজীবন এই সমস্যা থেকে যায়।
  • দেখা গেছে যে পুরুষদের ভেতর এই সমস্যাটা বেশি হয়, তাই গবেষকরা মনে  করেন যে পুরুষ হরমোনের কোনো প্রভাব আছে এতে।
  • পারকিনসন্স ডিজিজ বা অন্যান্য রোগ যা নার্ভাস সিস্টেম কে দুর্বল করে দেয়, সেগুলোও দায়ী হয়, তেমনই দায়ী হয় এইডস্ বা অন্যান্য ইমিউনিটি নাশকারী রোগ।

রোগ নির্ণয়

চিকিৎসক সাধারণত স্ক্যাল্পের অবস্থা চোখে দেখেই রোগ নির্ণয় করতে পারেন।

খুশকি থেকে মুক্তির উপায় ও চিকিৎসা

হাল্কা মৃদু শ্যাম্পু রোজ ব্যবহার করতে হবে। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।  

ওষুধের উপস্থিতির কারনে অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল —

1.পাইরিথিওন জিঙ্ক শ্যাম্পু ( DermaZinc, Head & Shoulders, Jason Dandruff Relief 2 in 1)

এই শ্যাম্পুগুলোতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল জিঙ্ক পাইরিথিওন থাকে।

2.টার বেসড শ্যাম্পু (Neutrogena T/gel)

স্ক্যাল্পের কোশগুলির মৃত্যু এবং তাদের আঁশের মতো উঠে যাওয়া কে ধীরগতি সম্পন্ন করে দেয় কোল টার। ব্যবহারকারীর চুলের রঙ যদি হাল্কা রঙের হয়ে থাকে তাহলে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের রঙ বদলে বা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এটা ব্যবহারের ফলে সূর্যের আলোয় ত্বক সেনসিটিভ হয়ে ওঠে।

3.স্যালিলাইলিক অ্যাসিড আছে এমন শ্যাম্পু (Neutrogena T/Sal, Baker’s P & S, others)

স্ক্যাল্পের আঁশের মতো ওঠা বন্ধ হয় এই শ্যাম্পুর ব্যাবহারে।

4.সেলেনিয়াম সালফাইড শ্যাম্পু (Head & Shoulders Intensive, Selsun Blue,)

এতে অ্যান্টিফাঙ্গাল এজেন্ট আছে। এটা ব্যবহার করার পরে চুল ও স্ক্যাল্প ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে, না হলে চুল ও ত্বকের রঙ খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

5.কেটোকোন্যাজোল শ্যাম্পু (Nizoral A-D)

এই শ্যাম্পু ব্যবহার করে স্ক্যাল্পের ওপরে উপস্থিত ফাঙ্গাস, যা খুশকির   জন্য দায়ী, সেই ফাঙ্গাস কে মেরে ফেলে। এটা অনলাইন অথবা ওষুধের দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়।

       যদি একটা শ্যাম্পু ব্যবহার করে একসময় ফল পাওয়া যায়, তাহলে দেখা যায়, কিছুদিন পরে তার কার্যকরীতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই যেকোনো দু’রকমের শ্যাম্পুকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে। শ্যাম্পু ব্যবহার করার পদ্ধতিগুলি ভালো করে পড়ে নিতে হবে, কারন কোনো শ্যাম্পু কিছু সময়ের জন্য স্ক্যাল্পে রেখে দিতে হয়।এইসব শ্যাম্পু ব্যবহার করেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসক স্টেরয়েড সমৃদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করতে দিতে পারেন।

খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

টি ট্রি অয়েল  

 টি ট্রি অয়েল ত্বকের অনেক সমস্যা, যেমন অ্যাকনি থেকে শুরু করে সোরিয়াসিস অনেক কিছু সমস্যার সমাধানেই ব্যবহারকরা হয়। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে, যা খুশকির সিম্পটম এবং খুশকির জন্য দায়ী ফাঙ্গাস কে নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। সেনসিটিভ ত্বকে টি ট্রি অয়েল ইরিটেশনের সৃষ্টি করে, তাই এটা ব্যবহার করার সময় অন্য তেল যেমন নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।  

অ্যালোভেরা

ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানের জন্য অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়। ড্যানড্রাফের  চিকিৎসাতেও এটি ব্যবহার করা হয়। অ্যালোভেরার অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকার কারণে খুশকির ঘরোয়া চিকিৎসায় এটির ব্যবহারকরা হয়।    

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয়। ভিনিগারের অ্যাসিডিটি ত্বকের মৃত কোশ কে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ত্বকের PH level কে নিয়ন্ত্রণে রেখে ড্যানড্রাফকে কমাতে সাহায্য করে। শ্যাম্পুর সাথে কয়েক চামচ বা অন্যান্য তেলের সাথে মিশিয়ে সরাসরি মাথায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অ্যাসপিরিন

অ্যাসপিরিনের ভেতর স্যালিলাইলিক অ্যাসিড থাকে। বিভিন্ন অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুতে স্যালিলাইলিক অ্যাসিড থাকে। এটি ত্বকের আঁশের মতো অংশ কে তাড়াতাড়ি উঠে যেতে সাহায্য করে। দুটো অ্যাসপিরিন গুঁড়ো করে নিয়ে শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডের ব্যবহার

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ত্বকের ওপর অনেক প্রভাব আছে। ত্বকের অয়েল প্রোডাকশন, হাইড্রেশন, ত্বকের ক্ষত মেরামতে এর অনেক ভূমিকা আছে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা আছে, তাই এটা ড্যানড্রাফকে  নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড, ফিস অয়েল সাপ্লিমেন্ট নিয়ে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করা যায়।  

প্রোবায়োটিক

প্রোবায়োটিক হল একরকমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। প্রোবায়োটিক শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যা ফাঙ্গাল ইনফেকশন, তথা ড্যানড্রাফকে  নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিকের বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় এবং দই, আচার ইত্যাদি খাদ্যে প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়।

বেকিং সোডা

খুশকির দ্রুত সুস্থতার জন্য বেকিং সোডা খুব উপকারী। এটা জেন্টেল এক্সফোলিয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যার ফলে ত্বকের মৃত কোশ দ্রুত অপসারন করতে সাহায্য করে। বেকিং সোডার অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে, যা ড্যানড্রাফ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ড্যানড্রাফের ফলে হওয়া চুলকানি থেকে রক্ষা করে। ভেজা চুলে সরাসরি বেকিং সোডা ব্যবহার করতে হবে এবং সারা স্ক্যাল্পে লাগিয়ে এক দু মিনিট রেখে দিতে হবে এবং তারপর সাধারণ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।  

Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago