এপিলেপসি একটি নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ বা স্নায়বিক রোগ। বাংলায় পরিচিত ‘মৃগী’ নামে। যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে এই সমস্যা, এমনকি শিশুদের মধ্যেও। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হিসেবে খিঁচুনি দেখা দেয়। মৃগীতে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে নিজেকে নিজে সাহায্য করা সম্ভব নয়। আর যারা মৃগীতে আক্রান্ত হন, তাঁদের আচমকাই মৃগীর অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এটি মস্তিষ্কের একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। মস্তিষ্কে যে কোষগুলো আছে হঠাৎ করেই সেখান থেকে বিদ্যুতের মতো চমকাতে থাকে। সেটা অস্বাভাবিক ভাবে এবং বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এবং এর প্রকাশ শরীরে হতে থাকে। যেমন হঠাৎ করে খিঁচুনি হয় বা শরীর কাঁপতে থাকে। অথবা হাত পা শক্ত হয়ে যায়। কখনও চোখ উল্টে যায়, মুখ একদিকে বেঁকে যায়। অথবা এমনও হতে পারে, হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হয়ে , হাতে ধরে থাকা কিছু ছিল পড়ে যায়। মুখ দিয়ে ফেনার মতো বেরোতে থাকে। কেউ কেউ ওই অবস্থাতেই মল-মূত্র ত্যাগ করে ফেলেন৷
সহজ ভাবে বলতে গেলে মৃগীরোগ মস্তিষ্কের একটি জটিলতা। আমরা যে কাজ করি, প্রতিটি কাজের জন্য মস্তিষ্ক থেকে একটি সংকেত আসে। তার সাহায্যেই কাজগুলো আমরা করতে পারি। কিন্তু এপিলেপসির ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক থেকে অযাচিত সংকেত আসে।
শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনোপ্রকার সংক্রমণ হলে, তার জটিলতা হিসেবে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অথবা বাচ্চাদের জন্মের সময় মাথায় কোনো আঘাতপ্রাপ্ত হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে দেরি হলে এই ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বাচ্চার জন্মের সময় সঠিক ওজনের তুলনায় অনেকাংশে কম হলেও তাদের ক্ষেত্রেও কখনো কখনো এপিলেপসির লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর বাড়বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ, কথা বলতে শেখা, বসতে শেখা, দাঁড়ানো প্রায় সবই দেরিতে হচ্ছে, এমন ক্ষেত্রেও এপিলেপসির আশঙ্কা থেকে যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণ না হলে বা কোনও আঘাত থাকলে এই অসুখ দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে টিউমার বা কোনো জটিল অস্ত্রোপচার হলে এই সমস্যা হতে পারে। আসলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণই জানা যায় না। কারো কারো ক্ষেত্রে জিনগত কারণেও হতে পারে। এছাড়াও কয়েকটি কারণে প্রাপ্তবয়সে এপিলেপসির সমস্যা দেখা দেয়, যেমন – পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, মানসিক চাপ, নিয়মিত বেশি সময় উজ্জ্বল আলোতে থাকা, ক্যাফিন বা অ্যালকোহলের নিয়মিত সেবন, সঠিক সময়ে না খাওয়া, বা খাবারে উপস্থিত নির্দিষ্ট কিছু উপাদান এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া৷
এপিলেপসি বা মৃগীর ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি সবচেয়ে বড় লক্ষণ। তবে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলেই যে মৃগী হতেই হবে, এমনটাও সবসময় কিন্তু নয়। খিঁচুনি যদি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, ঘন ঘন হয় ও শরীরের কোনও একটি পাশে বা অংশে খিঁচুনি হতে থাকে, তা হলে এই অসুখ নিয়ে অবশ্যই রোগীকে এবং তার পরিবারকে সচেতন হতে হবে । এমন সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে রোগীর মস্তিষ্কের এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও ইসিজি করিয়ে নিতে হবে, এবং নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে৷ এপিলেপসির কোনও জটিলতা সৃষ্টি হলে এই পরীক্ষা গুলির মাধন্যেই ধরা পড়বে।
প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় প্রকটভাবে লক্ষণ প্রকাশ পায় সাধারণত । এছাড়াও শিশু অবস্থাতে দেখা দিলেও এই রোগ থেকে প্রাপ্তবয়স হওয়া অব্ধি। শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগকে বলা হয় প্রাইমারি এপিলেপসি বা কারণবিহীন এপিলেপসি।
অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বলা হয় সেকেন্ডারি এপিলেপসি৷ এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে এবং তা সাময়িক। যে কারণের জন্য সমস্যা হচ্ছে, সেটি সংশোধন করার পর তার খিঁচুনি বন্ধ হয়ে যাবে।
অ্যান্টি এপিলেপটিক ড্রাগ ( anticonvulsant, antiseizure)
এই ওষুধগুলি খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করে। কারও কারও ক্ষেত্রে খিঁচুনি অনেকাংশেই দূর হয়ে যায়৷ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণে এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভেগাস নার্ভ স্টিমুলেটর
এই ডিভাইসটি সার্জারির মাধ্যমে বুকের ওপর ত্বকের নীচে স্থাপন করা হয় এবং বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে ঘাড়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে। এটি খিঁচুনি রোধে সহায়ক হয়। ভারতে এর ব্যবহার বিরল।
অর্ধেকেরও বেশি মানুষ যাদের শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাটের কারণে ওষুধ ঠিকমতো কাজ করতে পারেনা, তাদের ক্ষেত্রে এই কিটো ডায়েট অত্যন্ত কার্যকরী হয়।
ব্রেন সার্জারি
মস্তিষ্কের যে অঞ্চলে জটিলতা সৃষ্টি হয়, সেগুলি সরিয়ে বা পরিবর্তন করে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে মস্তিস্কে ইলেক্ট্রোডগুলি বসানো হয়। তারপরে বুকে একটি ডিভাইস বসানো হয়। ডিভাইসটি মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিক ইমপালস প্রেরণ করে খিঁচুনি হ্রাস করে।
এপিলেপসিতে রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। শুধু ওষুধ নয়, কখনও কখনও ইঞ্জেকশনেরও প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণত যে ওষুধ গুলি ব্যবহার করা হয় এপিলেপসির চিকিৎসায় তা হলোঃ
এটি মস্তিষ্কের একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। স্বভাবতই এটি মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে বাধা দএয়। মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিকমতো না হওয়ার ফলে কথা বলতে সমস্যা হয়৷ বুদ্ধির বিকাশ ব্যহত হয়। বুদ্ধির বিকাশ না হওয়ায় ব্যহত হতে পারে মেধার বিকাশও। স্কুলের যে কার্যক্রম, সেটি খারাপ হতে থাকে। এপিলেপসি আক্রান্ত রোগীরা বেশিরভাগই অন্যমনস্ক থাকেন এবং হঠাৎ হঠাৎ মাটিতে পড়ে যান। অর্থাৎ চিকিৎসার গাফিলতিতে মেধা এবং বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পায়।
ঠিক এই কারণেই মৃগীরোগীরা নিজেকে গুটিয়ে রাখেন জনসমক্ষে এবং ব্যর্থ হলেও রোগ গোপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে সচেতনতার থেকে বড় কোনো প্রতিরোধ নেই। মানুষ মাত্রেই সমাজবদ্ধ জীব৷ তাই সবরকম জটিলতা নিয়েই রোগীকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবেই মন থেকে গ্রহণ করতে হবে সবাইকে।
সমাজের প্রতি স্তরের মানুষকেই বোঝাতে হবে এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ না যে রোগীর সাথে শারীরিক বা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। বরং রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য আশেপাশের মানুষকে অনেক বেশিমাত্রায় সহানুভূতিশীল হতে হবে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment