Categories: ত্বক

শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমাতে প্রয়োজনীয় কয়েকটি ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট

Published by

শুষ্ক ত্বকের সমস্যা অনেকেরই হয় । ডিহাইড্রেশন, বার্ধক্য, ঋতু পরিবর্তন, অ্যালার্জি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি সহ বেশ কয়েকটি কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ত্বক মাত্রাতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বকের হাইড্রেশন বাড়ানোর জন্য ওষুধযুক্ত মলম এবং ময়েশ্চারাইজার সহ বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে, সকলের জেনে রাখা দরকার যে জীবনধারা পরিবর্তন, যেমন বেশি জল পান করা এবং কিছু সাপ্লিমেন্টস্ ত্বকের শুষ্কতা কমাতে পারে। সেক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভরসা রাখা যেতে পারে কিছু ভিটামিনের উপর।

শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমাতে প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট

১. ভিটামিন ডি :- ভিটামিন ডি এমন একটি ভিটামিন যা আপনার ত্বককে সুন্দর রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তে ভিটামিন ডি-এর কম মাত্রার কারণে একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মত সমস্যা হতে পারে। এই উভয় রোগই শুষ্ক ত্বকের অন্যতম সমস্যা। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টসগুলি ত্বকের সমস্যা যেমন শুষ্কতা, চুলকানি, একজিমা সহ আরো নানা রোগের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। ৮৩ জন মহিলার উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যাদের ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম ছিল তাদের, স্বাভাবিক ভিটামিন ডি এর মাত্রা থাকা অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় গড় ত্বকের আর্দ্রতা ছিল কম‌ এবং রক্তে ভিটামিন ডি এর মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়।

২. কোলাজেন :- কোলাজেন হল আপনার শরীরে থাকা সবচেয়ে বেশি প্রোটিন এবং আপনার ত্বকের শুষ্কতার ৭৫%- এর জন্য দায়ী। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কোলাজেনভিত্তিক সাপ্লিমেন্টস গ্রহণের ফলে আপনার ত্বকের অনেক উপকার হতে পার। তার মধ্যে বলিরেখার কমে যাওয়া এবং ত্বকের হাইড্রেশন বৃদ্ধি অন্যতম। ৬৯ জন মহিলার উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অংশগ্রহণকারীরা যারা ৮ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ২.৫-৫ গ্রাম কোলাজেন গ্রহণ করেছেন তাদের ত্বকের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং ত্বকের হাইড্রেশন বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭২ জন মহিলার উপর আরেকটি ১২-সপ্তাহের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ২.৫ গ্রাম কোলাজেন পেপটাইডের সাথে ভিটামিন সি এবং জিঙ্কের মিশ্রণের সাথে একটি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে প্লাসিবো গ্রুপের তুলনায় ত্বকের হাইড্রেশন এবং রুক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।

৩. ভিটামিন সি :- ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী, ত্বক-প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং এটি কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এটি ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টসের মাধ্যমে ত্বকের হাইড্রেশন সহ ত্বকের আরোও নানান উপকার হতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য উপাদানের সাথে সংমিশ্রণ ভিটামিন সি ব্যবহার করা হলে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে, ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টস ত্বকের সামগ্রিক উন্নতি করতে পারে এবং শুষ্ক ত্বকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে খুবই কার্যকরী। তবে যেকোনো নতুন সাপ্লিমেন্টসের মতো, আপনার খাদ্যে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টস যোগ করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে অবশ্যই কথা বলা উচিত।

৪. মাছের তেল :- মাছের তেল ত্বক উন্নয়নকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত। মাছের তেল ত্বকের হাইড্রেশন বাড়াতে এবং ত্বকের ফ্যাটি অ্যাসিডের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। বহু গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, ফিশ অয়েল গ্রুপের ৬০ দিনের চিকিৎসার পরে ত্বকের হাইড্রেশন ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, প্রতিদিন ১-১৪ গ্রাম ইপিএ এবং ০-৯ গ্রাম ডিএইচএ-এর ডোজ ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করলে সোরিয়াসিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মাছের তেল ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতেও দেখানো হয়েছে।

৫. শুষ্ক ত্বকের চিকিৎসার জন্য অন্যান্য সাপ্লিমেন্টস :- উপরে তালিকাভুক্ত পুষ্টির পাশাপাশি, গবেষণায় দেখা গেছে যে অন্যান্য উপাদানের সাথে সাপ্লিমেন্টস ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। ৬৪ জন মহিলার উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্টস ১২ সপ্তাহ ধরে ত্বকের আর্দ্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে সিরামাইডের সাথে সাপ্লিমেন্টস ত্বকের হাইড্রেশন বাড়াতে পারে, যা শুষ্ক ত্বকের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখা দরকার, ডিহাইড্রেশন শুষ্ক ত্বকের একটি সাধারণ কারণ। তাই আপনার জল খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করা ত্বকের হাইড্রেশনের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং সহজ উপায় হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করা, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি থাকা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়াও শুষ্ক ত্বকের কারণ হতে পারে বা খারাপ করতে পারে। উপরন্তু, কিডনি রোগ, সোরিয়াসিস এবং হাইপোথাইরয়েডিজম সহ কিছু রোগের পাশাপাশি পরিবেশগত অ্যালার্জি শুষ্ক ত্বকের কারণ হতে পারে।

ভিটামিন ডি, মাছের তেল, কোলাজেন এবং ভিটামিন সি সহ নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ ত্বকের হাইড্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং আপনার ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে, আপনি যদি মারাত্মক রকম শুষ্ক, রুক্ষ ত্বকের সম্মুখীন হন এবং ত্বকের অবস্থা যদি খুব খারাপ হয়ে থাকে তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Soumita Chakraborty

Hi, I'm Soumita Chakraborty, a professional content researcher dealing in Healthcare or wellness websites & television channels for the last 6years. The contents written by me are trustworthy, most updated, accurate, informative and backed by cited, reputable sources. Consisting well-performing keywords to improve search engine optimization.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago