কোন কোন কারণে কিডনিতে পাথর ( Kidney Stone ) হওয়ার ঝুঁকি থাকে ? কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণই বা কি ?

Published by

কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) বা কিডনিতে পাথর হওয়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় রেনাল ক্যালসুলি। কিডনি ছাড়াও ইউরেনারী ট্রাকের যে কোনো অংশে অর্থাৎ কিডনি বা ইউটেরাস বা ব্লাডার বা ইউরেথ্রা –র মধ্যে অতিরিক্ত কঠিন কোনো পদার্থের উপস্থিতিকেই কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) বা কিডনিতে পাথর হয়েছে বলা হয়।
কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) হলে পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা করে। পাথরের প্রকৃতির বিচার করেই কিডনিতে পাথর জমার কারণ বোঝা যায়।

কত ধরণের কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) দেখা যায় ?

ক্যালসিয়াম জনিত কিডনি স্টোন ( calcium-oxalate Kidney Stone ) : ক্যালসিয়াম গত কারণে কিডনিতে পাথর দেখা দেওয়ার সম্ভবনা সর্বাধিক। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ইউরেনারী ট্রাকে ক্যালসিয়াম অক্সালেট জমা হয়, যদিও ক্যালসিয়াম ফসফেট বা ম্যলেয়েট জনিত কারণেও হয়। অধিক অক্সালেট পূর্ণ খাদ্য যেমন – পট্যাটো চিপস, পিনাট জাতীয় বাদাম, চকোলেট, বিট, পালং জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে খেলে এই সম্ভবনা বাড়ে।
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যও ক্যালসিয়াম জনিত কিডনি স্টোনের সম্ভবনা বাড়ায়।                             

ইউরিক অ্যাসিড জনিত কিডনি স্টোন ( Uric Acid Kidney Stone ) : ইউরিক অ্যাসিড জনিত কারণে কিডনিতে পাথর মহিলাদের থেকে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন বা ইউরিক অ্যাসিড জনিত সমস্যার কারণে যদি গেঁটে বাত থাকে তবে এ জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়।
মূত্রে অম্লের পরিমাণ বেড়ে গেলে এই জাতীয় পাথর তৈরী হতে থাকে। খাদ্যে পিউরিনের পরিমাণ বাড়লে মূত্র আম্লিক হয়। প্রাণীজ প্রোটিনে একধরণের বর্ণহীন পদার্থকে পিউরিন বলে। মাছ, মাংস, খোলকওয়ালা প্রাণী যেমন – চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক, কচ্ছপ, গুগলি ইতাদির মধ্যে পিঊরিন থাকে।    

স্ট্রাভাইট জনিত কিডনি স্টোন ( Struvite Kidney Stone ) : ইউটিআই বা ইউরিনারী ট্রাক ইনফেকশনের জন্যই মূলত মহিলাদের মধ্যেই স্ট্রাভাইট জনিত কারণে কিডনিতে পাথর জমে। এ জাতীয় পাথরের আকার বড় হয় এবং মূত্রে বাধার সৃষ্টি করে। যে কারণে কিডনিতে ইনফেকশন হয়। মূলত শুরুতেই এই জাতীয় ইনফেকশনের চিকিৎসা স্ট্রাভাইট জনিত কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সিস্টাইন জনিত কিডনি স্টোন ( Cystine Kidney Stone ) : কিডনিতে এই ধরণের পাথর সচরাচর হয় না। জীনগত রোগ সিস্টিনিউরিয়াতে আক্রান্ত হলে তবেই পুরুষ অথবা নারীর মূত্রনালিতে এই ধরনের পাথর হয়। এ ধরণের পাথরের সাথে সিস্টাইন নামের এক ধরণের অম্ল নিজে থেকেই শরীরের মধ্যে কিডনি থেকে মূত্রে মিশে যায়।

কোন কোন কারণে কিডনিতে পাথর ( Kidney Stone ) হওয়ার ঝুঁকি থাকে ?

উঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যবর্তী বয়সের মানুষ কিডনিতে পাথর জনিত সমস্যায় ভোগেন। ন্যাশানাল ইন্সস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস এন্ড ডাইজেস্টিভ এন্ড কিডনি ডিজিজেস –এর মতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) জনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে কিডনিতে পাথরহওয়ার প্রবনতা বেশি। প্রিম্যাচিওর শিশুদের কিডনিতে সমস্যা থাকলে ইউরেনারী ট্রাকে পাথর হয়। তাছাড়া বংশগত কারণেও কিডনিতে পাথর হতে পারে। যৌনতার ঘাটতিও কিডনিতে পাথর হওয়ার একটা কারণ।

এর সাথে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলো কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় –

  • দৈনিক এক লিটারের কম প্রস্রাব হওয়া।
  • ডিহাইড্রেশন।
  • শরীরে স্থুলতা বা ওবেসিটি
  • হাইপার-প্যারাথাইরয়েড।
  • খাদ্য তালিকায় উচ্চমাত্রার প্রোটিন, লবন এবং গ্লুকোজ যুক্ত হওয়া।
  • গ্যাসট্রিক বাইপাস সার্জারি।
  • যন্ত্রণা সহ পেটের নানান অসুখ, যা ক্যালসিয়াম শোষণ করতে থাকে।
  • ক্যালসিয়াম যুক্ত এন্টাসিড, এন্টিসাইজার জাতীয় ওষুধ, ট্রাইঅ্যামটেরেন ডাইইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধের সেবন

উল্লিখিত এই কারণ গুলোই সাধারণত কিডনি স্টোন ( Kidney Stone ) জনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবনতা বাড়ায়।

কোন কোন উপসর্গ কিডনিতে পাথর ( Kidney Stone ) জনিত সমস্যার ইঙ্গিত দেয় ?

উঃ কিডনিতে পাথর হলে বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রণা হয়ে থাকে। এই ধরণের যন্ত্রনাকে রেনাল কলিক বলে। এমনকি পেটের বা পিঠের একদিকেও যন্ত্রণা হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে কুঁচকি সংলগ্ন অঞ্চলে ব্যাথা হয়। রেনাল কলিক জনিত ব্যাথা কখনও দেখা দেয় কখনও দেয় না কিন্তু যখন হয় তখন প্রচন্ড যন্ত্রণা করে। আস্তে আস্তে একটানা যন্ত্রণা হতে থাকে। এছাড়াও নিম্নলিখিত উপসর্গ সমূহ দেখা দিতে পারে –

  • জ্বর
  • বমি হওয়া
  • বমি বমি ভাব
  • শিরশিরানি ভাব
  • মূত্রের সাথে রক্তপাত
  • বারবার প্রস্রাব পাওয়া
  • বর্ণহীন বা প্রস্রাবে দূর্গন্ধ
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
  • মূত্রের রঙ লাল, গোলাপি বা বাদামী হয়ে যাওয়া

তবে ইউরেনারী ট্রাকে খুব সামান্য পরিমাণ পাথরের ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই নাও দেখা দিতে পারে।আবার একই উপসর্গ কিডনির ক্যান্সার বা ব্লাডার ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়, তাই উল্লিখিত এক বা একাধিক কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন।

Swarnava Roy

Journalist and media researcher. A decade of experience in content creation. Enthusiastic in documentary and science blogging.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago