Categories: ডায়েট

কিটো ডায়েট – জনপ্রিয়তার কারণ ও তার 6 টি ক্ষতিকর প্রভাব-প্রমিতা সাহা

Published by

কিটো ডায়েটের জনপ্রিয়তার কারণ

বিগত কয়েক দশকে হাল-ফ্যাশনে কিটো ডায়েট খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। চটজলদি ওজন কমাতে বেছে নিচ্ছেন কিটো ডায়েটকে। কিটো কথাটি এসেছে কিটোন বডি থেকে। শরীরে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এর জোগান থাকে না তখন শরীরে জমে থাকা ফ্যাট এর দহনে প্রচুর পরিমাণে কিটোন বডি উৎপন্ন হয়। সেই কিটোন বডি তখন হয়ে ওঠে একমাত্র শক্তি যোগানের শেষ উপায়।। ফলে দীর্ঘদিন ফ্যাট দহন হতে-হতে শারীরিক ওজন কমতে শুরু করে কিছুদিনের মধ্যেই।

কিটো ডায়েট অনুযাই দৈনিক খাদ্য তালিকায় থাকবে মাত্র ৫% কার্বোহাইড্রেট ,৭৫% ফ্যাট ও ২০% প্রোটিন। মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র তার দৈনিক কাজ কর্ম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করবে ফ্যাট দহনে উৎপন্ন কিটোন বডি। আর যেহেতু এইরকম ডায়েট প্ল্যানে প্রোটিনের পরিমান বেশি থাকে আর প্রোটিন আমাদের সবরকম প্রদাহ থেকে মুক্তি পেতে, ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে তাই সেক্ষেত্রে শরীরে সকল প্রদাহ থেকে শরীর সহজেই মুক্তি পেতে পারে। কিটো ডায়েটে যেহেতু কার্বোহাইড্রেটর পরিমাণ একদম কম থাকে একেবারেই না বললেই চলে তাই রক্তে গ্লুকোজ পরিমাণ কম থাকে। তাই যিনি ডায়াবেটিস এর রোগে আক্রান্ত হয়ে আছেন তিনি যদি এই ধরনের ডায়েট করে থাকে তবে তার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খুব তাড়াতাড়ি কমে যাবে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকবে। কিটো ডায়েটে যে যে খাবার গুলো রাখা যাবে সেগুলো হলো মাছ, ডিম, চিকেন, মাটন, ক্রীম, মাখন, তেল, সবুজ শাক সবজি, বাদাম ইত্যাদি। আর রাখা যাবে না চাল, গম, ভুট্টা,দানাশস্য, ডাল, ফলমূল, দুধ ইত্যাদি।

কিটো ডায়েটের 6 টি ক্ষতিকর প্রভাব

কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় চাল, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, প্রভূতি দানাশস্য, ডাল, ফলমূল, থেকে। যদিও ফ্যাশন এর ডায়েটগুলোতে কার্বোহাইড্রেট কে ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ দেখিয়ে কার্বোহাইড্রেট কে খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণ বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কার্বোহাইড্রেট হলো স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য উপাদান।

শরীরের সব অঙ্গ গুলি সচল রাখতে ফ্যাট, প্রোটিন এর সাথে কার্বোহাইড্রেট ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই ফ্যাট , প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট কে একসাথে বলা হয় ম্যাক্রো উপাদান। যা শরীরে নিজে তৈরি করতে পারেনা। খাদ্যের মাধ্যমে জোগান দিতে হবে। এখন যদি এই অতি আবশ্যকীয় উপাদানগুলির মধ্যে কার্বোহাইড্রেটকে দুরে সরিয়ে রাখা হয় তবে তার ফল হতে পারে মারাত্মক।

১। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পর তা গ্লুকোজ নামে সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয় যা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্ক সচল রাখে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কাজে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সরবরাহ করে। এমনকি মাংসপেশির যাবতীয় কাজে সাহায্য করে। কিন্তু কিটো ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট কে বাদ দেওয়ার ফলে মস্তিস্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ পেতে ফ্যাট ও প্রোটিন কে বহু কষ্ট করে গ্লুকোজ উৎপাদন করতে হয়। এবং তা পরিমাণে কম উৎপন্ন হয়। যার জন্য দীর্ঘদিন কিটো ডায়েট মেনে চললে ধীরে ধীরে মস্তিস্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে মানুষটির কোমা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

২। স্মৃতিশক্তি বিকল

 স্মৃতি শক্তি বজায় রাখতে প্রয়োজন সেরোটোনিন হরমোনের বিশেষ গুরুত্ব আছে। গবেষণায় দেখা গেছে কার্বোহাইড্রেটর সাথে সেরোটোনিন এর বিশেষ সংযোগ আছে। তাই দীর্ঘ দিন কিটো ডায়েট প্ল্যানে কার্বোহাইড্রেট না থাকায় সেরোটোনিন উৎপন্ন হতে পারেনা। ফলে স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

৩। প্রোটিন ও ফ্যাট হারাতে পারে নিজস্ব কর্মক্ষমতা

কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনে বাধা দেয় ফলে ফ্যাট ও প্রোটিন তার নিজস্ব কাজ সময়মতো করতে পারে। কিন্তু যখন প্রোটিন ও ফ্যাট গ্লুকোজ উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে তখন প্রোটিন ও ফ্যাট তাদের নিজস্ব কাজ যেমন নতুন কোষ তৈরি ও ক্ষত মেরামতের ক্ষমতা হারাতে পারে, ত্বকের যৌলুস কমে আসতে পারে।

 ৪। অনিয়ন্ত্রত ডায়াবেটিস

কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে হয়ত তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করতে করতে বডি এমন একটি মেটাবলিক স্টেটে পৌঁছে যায় যে ঠিক তার পরমুহুর্তে দেহে গ্লুকোজ পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তখন আর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না।

৫। কিডনি কার্যকারিতা হ্রাস

কিটো ডায়েটে বেশি করে প্রোটিন গ্রহণের কথা বলা হয়। প্রোটিন মেটাবোলিজমে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ কিডনি দিয়ে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে কিন্তু আমাদের দেহে কিডনির কার্যকারিতা তো সীমাবদ্ধ বেশি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণে খুব বেশি চাপ পড়ে যায় কিডনির উপর ফলে দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পায় ও বিকল হতে শুরু করে।

৬। নানান রোগের উৎপত্তি

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থেকে যে আমরা শুধু শর্করা পাই তা নয়, এই জাতীয় খাদ্য গুলি থেকে আমরা নানা ভিটামিনস, মিনারেল ও উচ্চ মাত্রায় ফাইবার পাই। দৈনিক খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বন্ধ করার সাথে সাথে এইসব উপাদান গুলির ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যায় ও নানা রোগের সম্মুখীন হতে হয়। সাথে ফাইবার আমাদের বাইল অ্যাসিড উৎপাদনে সাহায্য করে যা ফ্যাট বিপাকে অংশগ্রহণ করে । কিন্তু ফাইবার গ্রহণে ঘাটতি থাকায় তা ফ্যাট বিপাক বিপর্যয় ঘটে। তা সুস্থ লিভার কে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবে।

সুস্থ ও সুন্দর থাকতে হলে অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তালিকা ভুক্ত করতে হবে। এবং তা কিভাবে কতটা পরিমাণে নেওয়া যাবে তা একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞর কাছ থেকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে।

Promita Saha

Hello, myself Promita Saha, a nutritionist, and health blogger at Health Inside. Always deal with food and ideal health, help people to reach their own perfect health.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago