স্ট্রোকের চিকিৎসায় অভিনব ব্যবস্থাপনা নিয়ে হাজির ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস কলকাতা

Published by

চলমান জীবনে আচমকাই আসে ধাক্কাটা৷ কখনও নিমেষেই শেষ হয়ে যায় সবটা, কখনও পরিস্থিতি এমন হয় যে বেঁচে গেলেও তার জের বয়ে বেড়াতে হয় গোটা জীবন। স্ট্রোক আসলে এমনই ভয়ানক। তবে তৎক্ষনাৎ চিকিৎসা পেলে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে আবারও ফিরে যান স্বাভাবিক জীবনে৷ প্রতি বছর ভারতে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, গোটা পৃথিবীর নিরিখে এই সংখ্যাটা ১৮ মিলিয়ন৷ এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। তবে শুধু মৃত্যুর পরিসংখান নয় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্ট্রোকে আক্রান্তদের বয়সও। এক সময়ে মনে করা হতো যে  শুধুমাত্র বয়স্করা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, সেই ধারণাকে ভুল প্রমান করে ইদানীং, স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এই আক্রান্তদের সংখ্যা দেশে মোট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর প্রায় ২৫ শতাংশ।

২৯শে অক্টোবর ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে উপলক্ষে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়৷ ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের তরফ থেকে এই মর্মে প্রকাশিত হয় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও।

কীভাবে বুঝবেন আপনার স্ট্রোক হয়েছে? আর কখনই বা রোগীকে আনতে হবে হাসপাতালে?

শুক্রবার, world stroke day-তে এই বিষয়েই আলোচনা হল মল্লিকবাজারের ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসে।

এইদিন উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রোফেসর সুহৃতা পাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিপ্পী শ্রীমতি অলকানন্দা রায়, এছাড়াও বিশেষ উপস্থিতি ছিল স্বামী আত্মপ্রিয়নন্দ জীর। অনুষ্ঠানের জয়েন্ট কনভেনর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্ট্রোক প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ডাঃ জয়ন্ত রায়, এছাড়াও ডাঃ সুকল্যাণ পুরকায়স্থ এবং ডাঃ৷ সুপর্ণ গাঙ্গুলি৷ উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল প্রোফেসর ডাঃ আর.পি. সেনগুপ্তর। 

অল্পবয়সীরা যেভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন , তার পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন  নিউরোলজিস্ট ডাঃ জয়ন্ত রায়। তিনি আরও বলেন অনিয়মিত জীবনযাপনই স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। এর পাশাপাশি পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে স্ট্রেস, ডিপ্রেশন। এগুলো রুখতে তাই প্রয়োজন সচেতনতার। সুস্থ থাকতে বদল আনতে হবে জীবনযাপনেও। এর পাশাপাশি স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়েও সচেতন করেছেন তিনি। এবং সময় থাকতে রোগীকে  হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া না হলে বিপদ আড়ও বাড়ার আশঙ্কা থাকলে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে স্ট্রোক আসলে কী, সে বিষয়েও সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন৷ কোনো ব্যক্তির স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের কোনও অংশে হঠাৎ রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে সেই অংশে আর অক্সিজেন পৌঁছোয় না। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের সেই অংশের কোষগুলির মৃত্যু হয়। আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কোনও না কোনও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও অংশের কোষের মৃত্যু হলে, সেই অংশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কাজ করার ক্ষমতা চলে যায়। সেটা সামান্য হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া থেকে সম্পূর্ণ পঙ্গুত্ব পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসায় দেরি হলে স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত বের করে আনার পদ্ধতিও জটিল হয়ে পড়ে। কোনও কোনও সময় তা হাতের বাইরেও বেরিয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোকের পর প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ১ ঘণ্টার মধ্যেই যদি হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে মস্তিষ্কের ক্ষতি অনেকটাই আটকানো সম্ভব। এই সময়টাকে বলা হয় The Golden Hour !

স্ট্রোকের সম্ভবানা এড়াবেন কি ভাবে?

স্ট্রোকের সম্ভবানা এড়াতে B.E.F.A.S.T-র কথা বলেছেন ডাঃ জয়ন্ত রায়। যেখানে —

  • B for balance, অর্থাৎ শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা।
  • E for eyes বোঝায় চোখের সমস্যা।
  • F for Facial expression মানে মুখের ভঙ্গির সমস্যা।
  • A for Arm weakness অর্থাৎ বাহুতে সমস্যা।
  • S for Slurring speech কথা বলতে সমস্যা বা কথা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া
  • T for timely management মানে হাতে সময় থাকতে ব্যবস্থা নেওয়া।

এই পাঁচটি লক্ষণ প্রকাশ পেলেই তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে উপলক্ষে তাই  স্ট্রোকের চিকিৎসা আরও ভালো ভাবে এবং এক ছাতার তলায় করতেই কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রোক সেন্টার (comprehensive stroke centre) চালু করল মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেসস কলকাতা (Institute of Neuro Sciences Kolkata)।

স্ট্রোক হওয়ার আগেই যাতে স্ট্রোকের লক্ষণ বুঝে তা আটকানো যায় সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি  স্ট্রোকে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চালু হলো এই বিশেষ ক্লিনিক। এর পাশাপাশি  এমআরআই, সিটিস্ক্যানের থেকেও উন্নত মানের ইমেজিং সিস্টেম (imaging system) , র‍্যাপিড এ আই বেসড ইমেজ (rapid AI based image) চালু হলো এই হাসপাতালে। এই ইমেজিং এর মাধ্যমে রোগীর স্ট্রোক এর ফলে ব্রেনের কি অবস্থা তা সহজেই ধরা পড়বে।

আপাতত শহর কলকাতায় স্ট্রোকের চিকিৎসায় এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় খুশি চিকিৎসকমহলও।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago