ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ ,কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

Published by

বর্তমানে মহিলাদের প্রস্রাবের সংক্রমণ বা ইউরিনারি ইনফেকশন খুব সাধারণ একটি সমস্যা। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ,কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ  সম্বন্ধিত নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা আপানাদের এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াবে এবং সঠিক চিকিৎসার পথ দেখাতে সাহায্য করবে।

 মহিলাদের ইউরিনারি ট্র্যাক্টের দৈর্ঘ্য মাত্র ৫ সেন্টিমিটার,যা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। তাই মেয়েদের ইউরিনারি ইনফেকশনের হার পুরুষদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তাছাড়া আমাদের দেশের অপরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেটও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তার ওপর অধিকাংশ মহিলারাই যৌনাঙ্গ পরিচ্ছন্নতার স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন, এছাড়াও এ নিয়ে রয়েছে সচেতনতার অভাব।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা UTI  বাচ্চা থেকে বড় সকলেরই হয়ে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫ জন মহিলার মধ্যে অন্তত এক জন এতে আক্রান্ত হন। এবং সারা জীবনে প্রত্যেক মহিলাই অন্তত একবার UTI-এ আক্রান্ত হয়েছেন।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এর কারণ কী?

E.Coli ব্যাকটেরিয়া যখন ত্বক থেকে বা রেক্টাম থেকে ইউরেথ্রায় প্রবেশ করে এবং সেখানকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রমণ ঘটায়,তখন ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হয়। এ ক্ষেত্রে ব্লাডার এমনকি কিডনিতেও এই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট থেকে কিডনিতে যে ইনফেকশন হয়, তাকে পাইলোনেফ্রাইটিস বলা হয়।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলি কী কী?

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এর  একাধিক লক্ষণ রয়েছে। সেই লক্ষণ গুলি নির্ভর করে শরীরের কোন অঙ্গে সংক্রমণ হয়েছে, এবং সে সংক্রমণ কতখানি জোরালো তার উপরে।

ব্লাডারে ইনফেকশন হলে —

• খানিকক্ষণ পর পরই ইউরিন আসতে থাকে।

• মূত্র ত্যাগ করার সময় জ্বালা হয় এবং ব্যথা অনুভব হতে পারে।

• জল প্রায় না খেলেও বা ব্লাডার খালি থাকলেও বার বার মূত্রত্যাগ করার প্রয়োজন হয়ে ওঠে।

• মূত্র ত্যাগের সময় মূত্রের সাথে রক্ত বেরোতে পারে।

• লোয়ার অ্যাবডোমেন বা তলপেটে ক্র্যাম্প আসতে পারে। কখনও কখনও ব্যথাও হয়।

ইউরেথ্রাতে ইনফেকশন হলে

• মূত্র ত্যাগ করার সময় জ্বালা যন্ত্রণা অনুভব হয়।

• বারবার মূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন হলেও, ঠিকভাবে তা সম্পন্ন হয় না।

• মূত্রের রঙ ঘোলাটে হয়৷

• মূত্র ত্যাগের সময় অত্যন্ত দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে৷

কিডনিতে ইনফেকশন হলে

• জ্বর আসতে পারে

• মাথা ঘোরার সমস্যা

• ঠাণ্ডা লাগার অনুভূতি হয়।

• বমি ভাব। আবার কখনও বমিও হয়।

• পিঠের নিচের দিকে এবং তার পাশে ব্যথা অনুভব করা যায়।

কোন কোন শারীরিক জটিলতা থেকে হতে পারে UTI এর সমস্যা?

• কিডনিতে স্টোন থাকলে, তা ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে ব্লক করে দেয়। সেক্ষেত্রে দেখা দেয় ইউটিআই এর সমস্যা৷

ডায়াবেটিস থাকলে, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে অথবা HIV বা ক্যানসার থাকলেও UTI-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

• পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট বড় হয়ে গেলে,

ব্লাডার খালি করতে সমস্যা হয়।

• বাচ্চারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে UTI এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন নির্ণয় করার জন্য কী কী পরীক্ষা করা হয়?

• মূত্র পরীক্ষা অর্থাৎ ইউরিনের আরই এবং এমই পরীক্ষা।  (routine and microscopic examination)

• ইউরিন কালচার, যদিও এটির সব ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই। বারবার এই সমস্যার শিকার হলে তবেই এই পরীক্ষার  দরকার হয় ৷

• কিডনি-ইউরেটার-ব্লাডারের (KUB) এর আল্ট্রাসাউন্ড।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলে কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

• উপসর্গ দেখা দিলেই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

• যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।

• প্রচুর পরিমাণে জল পান করতেই হবে। (প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ লিটার)।

• পাতিলেবুর রস এক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে উপকারি। এটি জলের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

• ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া উচিত। সাধারণত যে ওষুধ গুলি ডাক্তাররা খাওয়া পরামর্শ দেন, সেগুলি হলো —

Trimethoprim,

Sulfamethoxazole,

Nitrofurantoin,

Fosfomycin.

• ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রোবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে৷

কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ইউরানারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন?

• যৌনাঙ্গ ধোয়ার সময় সাবান ব্যবহার করা একেবারেই উচিত না।

• যৌনাঙ্গে সুগন্ধিযুক্ত পদার্থ, পারফিউম, স্প্রে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

• অন্তর্বাস সবসময় শুকনো রাখা আবশ্যিক। অর্থাৎ প্রতিবার প্রস্রাবের পরে শুকনো নরম কাপড় বা টয়লেট পেপার দিয়ে যৌনাঙ্গ মুছে নিতে হবে ।

• যৌনাঙ্গের শেভ করবেন না। সেখানকার চুল বা পশম যৌনাঙ্গে রোগজীবাণু প্রবেশের হাত থেকে রক্ষা করে।

• পিরিয়ড চলাকালীন অন্তত প্রতি ৪-৬ ঘন্টা পরপর স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করুন।

• নিরাপদে যৌন ক্রিয়া করুন। অর্থাৎ যৌনক্রিয়ার সময় কোনো তৈলাক্তকর পদার্থ, পাউডার ডিও পারমিউম ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত নয় ৷

• প্রতিবার সহবাসের পরে অতি অবশ্যই জল দিয়ে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে।

• যৌনাঙ্গ মোছার সঠিক উপায় জানা উচিত।  সবসময় সামনের থেকে পিছনের দিকে পরিষ্কার করতে হয়, উল্টোদিকে না।

• পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা দুটোই বজায় রাখা এক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago