Categories: যৌন রোগ

ট্রাইকোমোনিয়াসিস কী? এই রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও সতর্কতা

Published by

ট্রাইকোমোনিয়াসিস কী? এই রোগের কারণ ও তার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি তা নিম্নে আলোচনা করা হল।

যে সমস্ত রোগ জীবাণু থেকে আমরা নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি, তার মধ্যে অন্যতম হলো যৌনরোগ বা শারীরিক সংস্পর্শে বাহিত রোগ ৷ ডাক্তারি পরিভাষায় এই যৌন বাহিত রোগ গুলিকে বলে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (STD)।  

আমরা বুঝেও উঠতে পারিনা কিভাবে সম্পূর্ণ অজান্তে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় আমরা সংক্রমিত হই। এখনও এই ধরনের যৌন বাহিত রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বহু ভুল ধারণা, অচলায়তন রয়েছে৷ সর্বোপরি রয়েছে সচেতনতার অভাব।

তেমনই একটি যৌন বাহিত রোগ বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ হলো ট্রাইকোমোনিয়াসিস। এই রোগটি মূলত ছড়ায় ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই এই রোগের প্রকোপ দেখা গেলেও মূলত নারীদের মধ্যে এর লক্ষণ  বেশি প্রকট হয়ে থাকে। পুরুষদের মধ্যে এর প্রভাব সাধারণত কম হয়। এছাড়াও উপসর্গ কম হওয়ায় অনেক পুরুষেরাই রোগটিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। তাই অনেক পুরুষই এভাবে নিজের অজান্তেই রোগ ছড়িয়ে দেন এক বা একাধিক সঙ্গীর শরীরে।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস কী?

ট্রাইকোমোনিয়াসিস আসলে এক ধরণের  যৌন বাহিত রোগ। এটি সাধারণত যৌন সংসর্গের সময় একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ঘটে। এই রোগের উপসর্গ পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পুরুষরা এই রোগে আক্রান্ত হয়, কিন্তু লক্ষণ দেখা না দেওয়ার কারণে রোগীর কাছে অজ্ঞাত থেকে যায়। কিন্তু তাতে তার দ্বারা অন্য কেউ সংক্রমিত হতে পারেন।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস-এর লক্ষণ বা উপসর্গ গুলি কী কী?

মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ গুলি হলো-

• মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

• যোনি থেকে সবুজ-হলদেটে তরল নিঃসৃত হতে দেখা যায়।

• যোনিতে চুলকানি বা অস্বস্তি।

• যৌনমিলনের সময় অস্বস্তি বা জ্বালা যন্ত্রণা।

• যোনি থেকে দুর্গন্ধ।

• তলপেটে ব্যথা।

পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই লক্ষণ গুলি তেমন প্রকট হয়না, তবে এই রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ গুলি হলো-

• মূত্রত্যাগ এবং বীর্যপাতের সময় যৌনাঙ্গে ব্যথা অনুভব হওয়া।

• লিঙ্গ থেকে তরল নিঃসরণ।

• যৌন মিলন বা মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা অনুভব।

নারী এবং পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এই উপসর্গগুলি সাধারণত সংক্রামিত হওয়ার ৫ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়।

যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়, ট্রাইকোমোনিয়াসিস থেকে হিউম্যান ইমিউনোডিফিশিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়, যা এইডস রোগের জন্ম দেয়৷

ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর প্রধান কারণগুলি কী কী?

ট্রাইকোমোনিয়াসিস, Trichomonas Vaginalis নামক পরজীবীর সংক্রমণের ফলে ঘটে। এটি বীর্য (Semen) কিংবা যোনিরসের (Vaginae fluid) এর মধ্যে থাকে। এই সংক্রমণ যৌন সংসর্গের (যোনি, মলদ্বারে বা মৌখিক যৌনমিলন) মাধ্যমে এক জনের শরীর থেকে তার যৌনসঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

সাধারণত একাধিক যৌনসম্পর্কে জড়িত থাকা কোনো ব্যক্তির এই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

ট্রাইকোমোনিয়াসিস নির্ণয় করার জন্য ডাক্তাররা সাধারণত যে পরীক্ষাগুলি করতে দেন, তা হলো-

• মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিরস বা ভ্যাজাইনাল ফ্লুইডের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

• পুরুষদের ক্ষেত্রে মূত্র বা বীর্যের (semen) নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

• পরজীবী বা প্যারাসাইটের অস্তিত্ব পরীক্ষার জন্য অনেকসময় র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টও করা হয়৷

• নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যাম্পলিফিকেশন টেস্ট।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস থেকে কী কী জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে?

সময় মতো চিকিৎসা না হলে অন্যান্য অনেক শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

• কোনো গর্ভবতী নারী এই রোগে আক্রান্ত হলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শরীর থেকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বেরিয়ে যেতে পারে।

• এই রোগের চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে একটি বড় আশঙ্কা থেকে যায় এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার। 

ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগের চিকিৎসা

সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগটি থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া পাওয়া যায়। তাই নূন্যতম উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এই রোগটি যেহেতু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে ঘটে তাই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে এর চিকিৎসা করা হয়৷ একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স এই রোগ থেকে মুক্তি দেয়। ডাক্তাররা সাধারণত মেট্রোনিডাজোল (Flagyl) এবং টিনিডাজোল (Tindamax) ওষুধ দুটি প্রয়োগ করেন ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর চিকিৎসায়৷

তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে যে, অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পূর্ণ করার পর, এক সপ্তাহের আগে কোনো রকম যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত নয়।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস প্রতিরোধে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?

ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগটি অধিকাংশ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই এই রোগ প্রতিরোধের জন্য সতর্কতা একান্ত জরুরি।

• যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় অবশ্যই কনডোম ব্যবহার করতে হবে।

• একাধিক মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকুন।

• ট্রাইকোমোনিয়াসিস হয়েছে এমন আশঙ্কা করলে যৌনসম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago