Categories: যৌন রোগ

ফাইমোসিস কী? ফাইমোসিস এর চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

Published by

ফাইমোসিস কী?

ফাইমোসিস একটি বিশেষ অবস্থা। এই সমস্যায় পেনিসের উপরে থাকা ত্বক (ফোরস্কিন বা পুং-জননেন্দ্রিয় আবরক ত্বক) সঠিকভাবে গুটোয় আসে না। এমনকী পুং জননেন্দ্রিয়ের মাথাটিও ত্বক দ্বারা ঢাকা থাকে। একটি শক্ত রাবার ব্যান্ডের মতো পুং-জননেন্দ্রিয়ের মাথায় ত্বক আটকে থাকতে পারে। এই কারণেই সঠিকভাবে ত্বক পিছন দিকে গুটিয়ে আসতে পারে না। ফাইমোসিসকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়— ফিজিওলজিক এবং প্যাথোলজিক।

ফিজিওলজিক্যাল ফাইমোসিস: জন্মের সময় থেকে শক্ত ফোরস্কিন নিয়ে জন্মগ্রহণ কারী বাচ্চার পুং জননেন্দ্রিয়ের উপরের ত্বক ধীরে ধীরে গুটিয়ে যায়। মোটামুটি ৫ থেকে ৭ বছরের বাচ্চার মধ্যে এই ধরনের সমস্যা ধীরে ধীরে সেরে যায়। তবে এই বয়সের চাইতেও বেশি বয়স পর্যন্ত ফাইমোসিস থাকতে পারে ও সমস্যা মিটেও যেতে পারে। এই ধরনের ফাইমোসিস কেন হয় তা এখনও জানা যায়নি।

প্যাথোলজিক ফাইমোসিস: পুং জননেন্দ্রিয়ের অগ্রভাগে স্কার টিস্যু থাকার কারণে, সংক্রমণ এবং প্রদাহের কারণে এমন হতে পারেন। এমন ক্ষেত্রে জোর করে ত্বক টেনে গুটাতে গেলে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। এর ফলে বাচ্চা মানসিকভাবে আঘাত পেতে পারে। তার ট্রমা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

কখন বুঝবেন চিকিৎসা প্রয়োজন

বাচ্চার টয়লেট করার সময় পেনিসের উপরে থাকা ত্বক ফুলে বেলুনের মতো হয়ে গেলে এবং বাচ্চার ইউরিন করতে সমস্যা হলে, সংক্রমণ হলে চিকিৎসা করানোই উচিত। অন্তত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা অবশ্যই বলতে হবে।

ফাইমোসিস থাকলে সতর্কতা

শিশুদের ফাইমোসিস নিয়ে বিশেষ সতর্কতার কিছু নেই। বারংবার জোর করে ত্বক টেনে গুটিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনও নেই। তবে স্নানের সময় অভিভাবকরাই ধীরে ধীরে ত্বক উপর দিকে টেনে তুলতে পারনে। জন্মের পরে প্রথম কয়েক বছর ধীরে ধীরে এভাবে ত্বকে মালিশ করলে ত্বক সরে যেতে পারে। বাচ্চা একটু বড় হলে সেক্ষেত্রে নিজের থেকে ত্বক সরে যাবে। সেক্ষেত্রে ফোরস্কিনের নীচের অংশ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে তাকে সচেতন করতে হবে।

স্মেগমা

স্মেগমা হল পুং জনেনেন্দ্রিয়র অগ্রভাগে এবং ফোরস্কিনের নীচে ত্বক গঠনকারী কোষ জমা হওয়া। ফোরস্কিন গুটিয়ে যাওয়ার সময় এমন ত্বকের দেখা পাওয়ার কথা অনেকে বলেন। এই ধরনের কোষ জমা হওয়ার বিষয়টি পেনিসের অগ্রভাগ থেকে ফোরস্কিনকে পৃথক হওয়ার হাত থেকে প্রতিরোধ করে। সাদা মুক্তোর মতো স্মেগমা ফোরস্কিনের নীচে জমা হতে পারে। সাদা রঙের এই উপাদান হল প্রাকৃতিক লুব্রিকান্ট যা পেনিসকে আর্দ্র রাখে। ফোরস্কিন প্রাকৃতিকভাবে গুটিয়ে গেলে স্মেগমা সহজেই পরিষ্কার করা যায়।

কীভাবে ফাইমোসিস নির্ণয় করা হয়?

ফিজিওলজিক্যাল ফাইমোসিস কোনও জীবন সংশয়কারী সমস্যা নয়। শিশ অবস্থায় যাদের লিঙ্গাগ্রে চর্ম ছেদন হয়নি তাদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা অতিপরিচিত বিষয়।এমনকী স্মেগমা বা ফোরস্কিনের তলায় সিস্ট হওয়ার ঘটনাও বিরল নয় মোটেই। আবার ইউইরনের সময় ফোরস্কিন বেলুনের মতো ফুলে ওঠার বিষয়টিও যথেষ্ট পরিচিতি। সাধারণত স্নান বা ডায়াপার পরিবর্তনের সময় ধীরে ধীরে রিট্র্যাকশন করলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অন্যদিকে প্যাথোলজিক্যাল ফাইমোসিসের সমস্যা কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে সমাধান করা যায় না। এমনকী এর থেকে অন্যান্য সমস্যাও দেখা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে পিনাইল ইরিটেশন বা রক্তপাত, বেলুনিং (ইউরিন পাসের সময় ফোরস্কিন বেলুনের মতো ফুলে যাওয়া), ইউরিন পাসে সমস্যা, ইউরিন পাস করার সময় ব্যথা বা জ্বালা, বারবার সংক্রমণের কথা বলা যায়। এই সমস্যা দেখা গেলে অবশ্যই নিতে হবে পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ। সেক্ষেত্রে পেডিয়াট্রিশিয়ান অসুখটি চিহ্নিত করার পর তিনি রোগীকে সার্জেনের কাছে পাঠাতে পারেন।

ফাইমোসিস এর চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা কতখানি গভীর তার উপর। টপিক্যাল কর্টিকোস্টেরয়েড অয়েনমেন্ট দিয়ে ধীরে ধীরে ত্বক সরিয়ে দেওয়া কিংবা তাতে কাজ না অপারেশন ছাড়া গতি থাকে না।

অপারেশন

সাধারণত অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। তাবে কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে অয়েনমেন্ট দিয়ে ম্যাসাজ করার পরেও কাজ না হলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

কীভাবে হয় অপারেশন

সাধারণত জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগে এই সার্জারি হয়। খুব ভালো হয় বাচ্চা যখন স্কুলে যাচ্চে তখন অপারেশন করাতে পারলে। কারণ সেই সময় বাচ্চা সমস্যা সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি করতে পারে। তবে অপারেশনের আগে বাচ্চার কিছু রক্ত পরীক্ষা করাতে হতে পারে।

সাধারণ রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক থাকলে এরপর বাচ্চার পুং জননেন্দ্রিয়র অগ্রভাগের ত্বক কেটে সরিয়ে দেওয়া হয়। ও সেলাই করে দেওয়া হয়। এই সেলাই নিজের থেকেই খুলে যায়। প্রথমে ব্যান্ডেজ দিয়ে পেনিস ঢেকে দেওয়া হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে তাও করা হয় না। অপারেশনের কয়েকঘণ্টা পরেই রোগী বাড়ি ফিরতে পারে।

অপারেশনের পরে

পেনিসের অগ্রভাগ ফুলে যেতে পারে ও লাল হয়ে যেতে পারে।

লোক্যাল অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, ব্যথার ওষুধ দিয়ে চলে চিকিৎসা। দরকার পড়লে অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হতে পারে। সাধারণত সাতদিনের মধ্যে ঘা শুকিয়ে যায়। তবে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে।

অপারেশনের পর সতর্কতা

  • রক্তপাত হলে সাবধান হন। • দুর্গন্ধ বেরলেও হতে হবে সতর্ক। • অপারেশনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ইউরিন না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago