সায়টিকা শব্দটা আমাদের সকলের জানা থাকলেও আসলে সায়টিকা কি সেটা অধিকাংশ মানুষই জানেন না। বর্তমান সময়ে কাজের চাপ ও ব্যাস্ততা এতই বেশি যে শরীরের দিকে খেয়াল রাখার সময় পাইনা আমরা। আর তার ফলেই বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয় আমাদের। মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা , বিশেষ করে মহিলাদের সায়টিকার ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। এই রোগ থেকে বাঁচতে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি বদলে ফেলতে হয় কিছু কিছু খারাপ অভ্যেসও।
সায়টিকার ব্যথা শব্দটার সঙ্গে আমাদের বরাবরের পরিচয় থাকলেও এর সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই এখনও বিশ বাঁও জলে। সায়টিকা আসলে আমাদের শরীরের দীর্ঘতম নার্ভ বা স্নায়ু। কোমরের দুদিকের পেছনে দুটি সায়টিকা নার্ভ থাকে। কোমরের পেছন দিক থেকে বেরিয়ে পায়ের পেছন দিক দিয়ে গিয়ে নীচ পর্যন্ত এই স্নায়ু দুটি বিস্তৃত। কোমর সহ পায়ের ব্যথা কিংবা লো-ব্যাক পেনের একটা বড় কারণ এই সায়টিকা নার্ভের ওপর চাপ অথবা আঘাত। আর তার থেকেই সৃষ্ট লোব্যাক পেনকে সায়টিকা ব্যথা বলা হয়।
সাধারণত কোনও ভাবে সায়টিকা নার্ভে চাপ পড়লেই ব্যথা শুরু হয়। সেই চাপ না কমা পর্যন্ত এই ব্যথা চলতেই থাকে। কোমরের পেছনে থাকায় নার্ভে চাপ কী কী ভাবে পড়তে পারে, তার কারণগুলো প্রায় সকলেরই জানা। গর্ভাবস্থায় পেট আকারে আয়তনে বড় হয়ে যায় বলে কোমরের পেছনের নার্ভে চাপ বাড়তে শুরু হয়। তাই এই সময়ে কোমরের ব্যথা প্রায় অবধারিত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যথা সাময়িক অর্থাৎ প্রসবের পর ধীরে ধীরে ব্যথা চলে যায়। তবে ক্রনিক সায়টিকার পেছনে আছে চোট আঘাত, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডিজেনারেটিভ আর্থ্রাইটিসের কারণে মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক হার্নিয়েটেড হওয়া অর্থাৎ বেরিয়ে আসা। জেলির মত ডিস্ক স্থানচ্যুত হয়ে সায়টিকা নার্ভে চাপ দিতে শুরু করলেই ব্যথার প্রকোপ বাড়তে থাকে।
পুরুষদের তুলনায় নারীরাই সায়টিকায় আক্রান্ত হন বেশি। সাধারণত এর প্রকোপ ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের ওপর তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি পড়ে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সময় টা আরেকটু পরে আসে সাধারণত। তবে দেখা গেছে সাধারণত ২০ বছরের কম বয়সীদের সায়টিকার ব্যথা হয় না। হলেও তা বিরলতম। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগী এবং ধুমপায়ীদের সায়টিকায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷
অনেক সময় সায়টিকার ব্যথা ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই কমে যায় ৷ যদি না কমে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন ৷ ওষুধের পাশাপাশি কয়েকটি অভ্যেস নিয়মিত পালন করুন।
কোল্ড কমপ্রেস
আইস ব্যাগ না থাকলে একটি ব্যাগে কিছু বরফ নিয়ে নিয়মিত আক্রান্ত জায়গাটিতে সেঁক করুন ৷ ২০ মিনিট চেপে ধরে থাকুন ৷ প্রথম কিছুদিন দিনের কয়েকবার এটি করুন। তারপর আসতে আসতে ব্যথা কমলে কোল্ড কমপ্রেস কমাতে থাকুন ৷
গরম সেঁক
ইস্ত্রি বা তাওয়া গরম করে তাতে গরম হওয়া কাপড় আক্রান্ত স্থানে রেখে সেঁক দিন ৷ কোল্ড কমপ্রেস শুরু করার দুই থেকে তিনদিন পর গরম সেঁক দেওয়া শুরু করুন। ব্যথা না কমলে ঠান্ডা এবং গরম সেঁক পাল্টাপাল্টি করে দিতে থাকুন ৷
স্ট্রেচিং
এই ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে স্ট্রেচিং ভীষণ উপকারী। লেগ রাইজিং, স্কোয়াট, গোড়ালি ও আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়ানো ইত্যাদি নিয়মিত অভ্যেস করতে হবে। তবে প্রতিটি স্ট্রেচিংয়ের সঠিক পদ্ধতি সম্বন্ধে জানার জন্য একজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট বা ট্রেনারের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধের ব্যবহার
ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন সাধারণ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে অ্যাসপিরিনের অতিরিক্ত ব্যবহারে স্টমাক ব্লিডিং বা আলসারের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও ডাক্তাররা অনেক সময় অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধও প্রেস্ক্রাইব করেন। কিন্তু ব্যথার প্রকোপ বাড়লে স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেস ক্যানালে কর্টিকোস্টেরয়েড ইঞ্জেকশনও প্রয়োগ করা হয়৷
নিয়মিত ব্যায়াম
শরীর যত বেশি মাত্রায় সক্রিয় থাকবে, তত বেশি এন্ডোরফিনস মুক্ত করবে। এন্ডোরফিনস এমন একটি বেদনানাশক যা শরীর নিজে তৈরি করে। সাঁতার বা সাইক্লিং এর মাধ্যমে শরীর চর্চা শুরু করুন ৷ নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের অভ্যেস করুন ৷ যেমন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, অ্যারোবিক্স, ওজন উত্তোলন ইত্যাদি ৷ এর ফলে ভবিষ্যতে ব্যাক পেনের সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায় ৷
সার্জারি
সায়টিকার ব্যথা সিভিয়ার কন্ডিশনে গেলে সার্জারির প্রয়োজন হয়। সাধারণত, দুই ধরনের সার্জারি এক্ষেত্রে করা হয়, ডিসেক্টমি এবং মাইক্রোডিসেক্টমি। ডিসেক্টমির ক্ষেত্রে, ডিস্কের যে অংশটি নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে, সেটি সরিয়ে দেওয়া হয়। মাইক্রোডিসেক্টমিতে মাইক্রোস্কোপের ব্যবহার করে ডিস্কের একটি ছোটো অংশ কেটে তা দূর করা হয়।
চিকিৎসার অন্যান্য পদ্ধতি
সায়টিকার চিকিৎসার এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে আছে ওজোন নিউক্লিওলাইসিস, সিলেকটিভ নার্ভ রুট ব্লক, পারকিউটেনিয়াস মাইক্রোডিসেক্টমি, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি নিউরোটমি সহ নানান পদ্ধতি। কোন রোগীর জন্য কি চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ভর করে রোগীর সামগ্রিক অবস্থার ওপর। এগুলোর কোনটিই কিন্তু সার্জারি নয়। কিন্তু সুস্থ হতে গেলে এর সঙ্গে কিছু এক্সারসাইজ করতেই হবে।
ছোটো থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা,ব্যায়াম, সঠিক ভাবে সোজা হয়ে বসার অভ্যেস, একদম সঠিক ভাবে চলাফেরার বা হাঁটার অভ্যেস তৈরি হলে সায়টিকার সমস্যাকে রুখে দেওয়া যেতে পারে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment