মোটামুটি এক বছর ধরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক বা ইন্টারকোর্সের পরেও সন্তান না এলে আশঙ্কা করা হয় ওই দম্পতি সন্তানহীনতার সমস্যায় ভুগছেন। সাধারণত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ দম্পতিরই স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কে সম্পর্ক স্থাপনের ১ বছরের মধ্যে গর্ভধারণ সম্ভব হয়। তবে ৮ থেকে ১২ শতাংশ দম্পতির সন্তানধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই দম্পতিদের মধ্যে আবার সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে ৩০ শতাংশ পুরুষের। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের। ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে উভয়ের সমস্যা থাকে। আর ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান না আসার পিছনে কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাকি ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান আসে না অন্যান্য কারণে।
বন্ধ্যাত্বর পিছনে বয়স, জীবনযাত্রা, উদ্বেগ, দূষণ, ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার এবং খাদ্যাভ্যাস দায়ী থাকতে পারে। শারীরিক নানা জটিলতা হয়তো দম্পতির পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়, তবে বেশ কিছু বিষয় দম্পতিরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতেও পারেন। বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাসের স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সন্তানধারণেও সাহায্য করে।
প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে সুষম খাদ্য এবং আদর্শ ওজনের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ডায়েট এবং ওজন দেখা মাত্রাতিরিক্ত ওজনবিশিষ্ট পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট যথেষ্ট কম থাকে এবং শুক্রাণুর মোটিলিটি বা সচলতাও কম হয়। কারণ স্থূলত্ব পুরুষদেহে হরমোনের তারতাম্য ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে ওজন কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং ওজন ফাইবারযুক্ত সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কোনও বিকল্প নেই। পুরুষদের মতোই মহিলাদেরও অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্ব ওভ্যুলেশন (ওভামের পরিপক্ব হওয়ার প্রক্রিয়া) এবং প্রেগন্যান্সি আসার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। দেখা গিয়েছে স্থূলকায় মহিলাদের প্রেগন্যান্সি আসতে দেরি হয়।
কোনও ব্যক্তির আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত তা বোঝার সবচাইতে সহজ উপায় হল ওই ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই নির্ণয় করা ।
বিএমআই নির্ণয় করার জন্য শারীরিক ওজনকে দৈহিক উচ্চতার বর্গ দিয়ে ভাগ করতে হবে। অর্থাৎ বিএমআই= কেজিতে দৈহিক ওজন/(দৈহিক উচ্চতা) ২
সুতরাং কারও ওজন ৬৮ কেজি এবং উচ্চতা ১.৬ মিটার হলে ওই ব্যক্তির বিএম আই হবে ৬৮/(১.৬) ২ = ২৬.৫৬। বিএমআই-এর সূত্র অনুসারে ২৬.৫৬ অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্বের ইঙ্গিত দেয়। এখন ভারতীয়দের দৈহিক ওজন উচ্চতা যাই হোক না কেন, বিএমআই থাকা উচিত ১৮.৫ থেকে ২২.৯-এর মধ্যে। সুতরাং সহজভাবে কতকগুলি বিষয় বুঝে নিন—বিএমআই ১৮.৫-এর নীচে- ওজনহীনতা। বিএমআই ১৮.৫-২২.৯- আদর্শ ওজন । বিএমআই ২৩.০-২৪.৯-অতিরিক্ত ওজন । বিএমআই ২৫-এর বেশি- স্থূলকায়। দেখা গিয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় ওজন কম থাকা এবং অতিরিক্ত ওজন— দু’টি সমস্যাই ইনফার্টিলিটি ডেকে আনতে পারে।
গম থেকে তৈরি নানা খাদ্য, সব ধরনের সব্জি, ফল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, দানা শস্য, ডাল এবং বীনস-এর মতো খাদ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং ফোলিক অ্যাসিড যা ওভ্যুলেশনে সাহায্য করে। এমনকী গর্ভে ভ্রূণের বিকাশেও সাহায্য করে।
ফলের মধ্যে বিশেষ করে কলা, আপেল এবং লেবুজাতীয় ফলে রয়েছে ভিটামিন সি-এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি নিজেই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে এই ধরনের খাদ্যও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যথেষ্ট মাত্রায় জিঙ্ক এবং ভিটামিন ই রয়েছে কাজুবাদাম, সূর্যমুখী বীজে। আখরোটে রয়েছে উপযুক্ত মাত্রায় ওমেগা থ্রি এবং ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ধরনের খনিজ, ভিটামিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। ফলে পুরুষদের ক্ষেত্রে যেমন সিমেন উৎপাদনে সহায়তা মেলে তেমনই মহিলাদের ওভ্যুলেশনেও মেলে সহায়তা।
আয়রনের জন্য খান বিভিন্ন ধরনের ডাল, পালং, বীট, এবং গম থেকে প্রস্তুত খাদ্য। লেটুস, পালং, ব্রকোলি, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকামের মতো খাদ্যও রাখতে হবে পাতে। কারণ একাধিক ভিটামিন রয়েছে খাদ্যগুলিতে। আর হ্যাঁ রান্নায় বেশি মাত্রায় তেল ব্যবহার করবেন না। ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ফাইবারযুক্ত খাদ্য রঙিন ফল এবং সবুজ শাকসব্জিতে থাকে প্রচুর ফাইবার থাকে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে থাকে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই ধরনের উপাদানগুলি নারী-পুরুষ উভয়ের দেহের হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে স্ট্রেস সন্তানধারণের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। প্রোটিনের জন্য খান মাছ বা চিকেন। খেতে পারেন ডিম, সয়াবিন।
কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টিজাতীয় খাদ্য, ভাজাভুজি, মাখন, ভেজিটেবল ফ্যাট, প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য, রেডি টু ইট ফুড সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন। খাবেন না কেক, পেস্ট্রি, পিজ্জার মতো খাদ্য। রেড মিটস এড়ান। অ্যালকোহল, ধূমপান পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। পিসিওস-এর সমস্যায় ভোগা মহিলাদের সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। আর তাই তাঁদের উপরিউক্ত নিয়ম যেমন মেনে চলতে হবে তেমনই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খেতে হবে ফাইবারযুক্ত খাদ্য।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ফিট থাকতে ও প্রজনন ক্ষমতার বৃদ্ধিতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট এক্সারসাইজ করুন।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment