বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগো – কেন হয়? কি এর প্রতিকার?

Published by

সাধারণত বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগো বা  বিপিভি দ্বারা আক্রান্ত হলে সাময়িক ভাবে একটি তীব্র মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়। সেসময় মাথার স্থান পরিবর্তন করলে আবার তীব্রভাবে মাথা ঘোরার সূচনা হয় ৷

মাথা ঘোরার সমস্যায় ভোগেন কমবেশি সব বয়সের মানুষই ৷ কিন্তু কারণের প্রকারভেদে তার অনুভূতি অনেকসময়ই আলাদা হয় ৷ কারো ক্ষেত্রে খানিক বসে থাকার পর উঠতে গেলেই মাথা ঘোরে, আবার কারো ক্ষেত্রে চলতে গেলে হঠাৎ করেই এমন অনুভূতি হয় ৷ মাথা ঘোরা বা Vertigo – এর একটি প্রধান কারণ হলো বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগো (Benign Positional Vertigo)। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণে কখনও মনে হয় মাথা চক্রাকারে ঘুরছে বা কখনও মনে হয় মাথা দুলছে। এমনকি ভিতর থেকে মাথা ঘোরার মতো অনুভূতিও লক্ষ্য করা যায়।

হঠাৎ করে এমন উপসর্গ দেখা দিলে কি করবেন?

আপনার হঠাৎ মাথা ঘুরতে থাকলে আপনি যে কাজটা করছিলেন সেই কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। চিৎ হয়ে সোজা করে শুয়ে পড়ুন। চোখ দুটো বন্ধ করে নিন। সহজভাবে নিঃশ্বাস- প্রশ্বাস নিন এবং ওঠার প্রয়োজন হলে সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকুন।

ড্রাইভিং করার সময় এমন সমস্যা এলে?

আপনি গাড়ি চালানোর সময় এমন অবস্থার উদ্রেক হলে পা ব্রেকের ওপর রাখুন এবং থেমে পড়ুন। সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন পাশের সিটে। পা দুটো তুলে দিন ড্রাইভার সিটের উপর। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গাড়ি চালানোর দুঃসাহস দেখাবেন না তখন ৷ সেই মুহূর্তে আপনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, যদি আপনার মাথা ঘোরা মারাত্মক হয়।

আপনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মাথা ঘোরার অভিজ্ঞতা হতে পারে অনেকেরই। কাজ করবেন পরিকল্পনা মাফিক এবং আপনার সাধ্যের মধ্যে। কখনো সীমা অতিক্রম করবেন না। আগে চিন্তা করে তারপর কাজে হাত দেবেন। প্রয়োজনে খানিকক্ষণ অন্তর বসে বিশ্রাম নেবেন।

দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না। কাজের চাপে বা অন্য কোনো কারণে এক বেলার খাবার না খেলে এবং রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে দ্রুত খেয়ে নিন। রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে আপনার মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রা কমে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীব্র মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়।

পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে সবসময়,

বিশেষ করে গরমের সময় প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খাবেন, (জল, নুন-চিনি-লেবুর শরবত, ছাতুর শরবত, তরমুজের শরবত, দইয়ের শরবত ইত্যাদি)। শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। তাই শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, এবং সবসময় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির বাইরেও জলের বোতল কাছে রাখবেন সবসময়।

বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগো কি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

সাধারণত অন্যান্য রোগের জন্য আমরা সচরাচর সাধারণ কিছু ওষুধ নিয়ে থাকি যেমন-অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চরক্তচাপের ওষুধ ও আলসারের ওষুধ। এসব ওষুধ মাথা ঘোরার উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। ওষুধের ব্যবহারের তারতম্যও মাথা ঘোরার সৃষ্টি করতে পারে ৷  কোনো ওষুধ গ্রহণে এমন সমস্যা হলে ডাক্তারকে জানান। তিনি ওষুধ পরিবর্তন করে দেবেন।

আপনার মাঝেমধ্যেই মাথা ঝিমঝিম করলে কিংবা মাথা ঘুরলে তা অবহেলা করবেন না। ওপরের পরামর্শ মেনে চলুন এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। কীভাবে মাথা ঘোরা শুরু হয়? এটি কি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং অল্প সময় থাকে? নাকি মাথা ঘোরা দীর্ঘ সময় থাকে এবং তা কি মাঝে মধ্যেই হয়? কানের উপসর্গ আছে কি না, আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন কি না? বা প্রায়শই বমি ভাব অনুভূত হচ্ছে কিনা! এসব জেনে আপনার কী কারণে মাথা ঘুরছে সেটি ঠিকমতো নির্ণয় করা গেলে সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, পজিশনাল ভার্টাইগো থেকে সমস্যা হতে পারে দৃষ্টিতেও ৷ ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি অনেকক্ষেত্রেই বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগোর লক্ষণ বলে বিবেচিত হয়।

বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগো – নির্ণায়ক পরীক্ষা গুলি কি কি?

সাধারণত যে পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা এই রোগ নির্ণয় করেন তা হলো  Dix-Hallpike test.

এছাড়াও কিছু শারিরীক পরীক্ষা করানোর উপদেশ দেন ডাক্তাররা। রোগীর মেডিক্যাল হিস্ট্রি এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, এবং প্রয়োজন হয় স্নায়ু জনিত পরীক্ষার ৷

যেমনঃ

১. ক্যালোরিক স্টিমুলেশন

২. মাথার এম আর আই

৩. এম আর এ (মাথার)

৪. সি টি স্ক্যান

৫. শ্রবণ জনিত মূল্যায়ন

৬. ই ই জি

৭. ই এন জি

তাহলে সমস্যার সমাধান কি? চিকিৎসাই বা কি?

কিছু কিছু ডাক্তার রা মনে করেন Epley Maneuver হলো বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি একটি সাধারণ ব্যায়াম৷

ডাক্তার রা এই রোগের চিকিৎসার জন্য মূলত যে ওষুধ গুলি দিয়ে থাকেন সেগুলি হলো :

১. পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সিডেটিভ – হাইপোটকিস

২. অ্যান্টিকলিনারজিক্স ( এটি মূলত নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাসিটাইলকোলিন কে প্রতিরোধ করে)

৩. অ্যান্টিহিস্টামিনস৷

সবশেষে এটা মনে রাখা উচিত কার্যকরী চিকিৎসার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় জরুরি। আর মাথা ঘোরার চিকিৎসা নির্ভর করে মাথা ঘোরার কারণ ও ধরনের ওপর। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে পারেন। এতে মাথা ঘোরা কমবে এবং আপনি আগের থেকে নিজেকে সুস্থ অনুভব করবেন।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago