দাঁতে ব্যথার কারণ ও দাঁতে ব্যথা কমানোর উপায়

Published by

দাঁতে ব্যথা কমানোর উপায় কি তার সন্ধান একবার হলেও খুজতে হয়েছে প্রায় সবাইকেই। দাঁতে ব্যথার কারণ প্রায়শই এক চরম ভোগান্তি হয়ে আসে বহু মানুষের ক্ষেত্রেই। কখনও দাঁতের গোড়ায় অসহ্য যন্ত্রণা, কখনও বা মাড়ি ফুলে যাওয়া৷ দাঁতের ক্ষয়জনিত কোনো সমস্যা বা মাড়ির সমস্যা ছাড়াও শরীরের অন্য কোথাও কোনও সমস্যার কারণেও দাঁতে ব্যথা হয়ে থাকে৷

দাঁত ব্যথা কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয়। দাঁতের ক্ষয়জনিত কারণে দাঁতে ব্যথা হলে তা আরও খারাপ দিকে যেতে পারে যদি সঠিক চিকিৎসা না হয়।

দাঁত ব্যথাকে সাধারণত মারক হিসেবে ভাবা হয় না, তেমন কোনো প্রমাণ ও এযাবৎ কালে মেলেনি তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলি গুরুতর কোনো শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে যার জন্য সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।

দাঁত ব্যথার অনুভূতি গুলি সাধারণত কেমন হয়?

দাঁতে ব্যথা মাঝারি থেকে গুরুতর অবস্থায়  যেতে পারে। কখনও এটি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় আবার কখনও বা মাঝেমধ্যে আসে।

সাধারণত যে উপসর্গ গুলি দেখা যায়

  • দাঁতের বা মাড়ির আশেপাশে ফোলা ভাব।
  • জ্বর।
  • দাঁত স্পর্শ করার সময় বা খাবার সময় কামড়ালে তীব্র ব্যথার অনুভূতি।
  • দাঁতে বা তার চারপাশে ব্যথা ভাব।
  • গরম বা ঠান্ডা খেলে অসহ্য যন্ত্রণা।

দাঁতে ব্যথার কারণ

দাঁতে কোনো গর্ত বা ক্যারিজ হলে, দাঁতের ফিলিং খুলে গেলে, দাঁত ভেঙে গেলে, দাঁতের শ্বাস বা পালপ যে কোনো কারণে আক্রান্ত হলে, মাড়িতে ব্যথার কারণে সাধারণত দাঁতে ব্যথা হয়।

গরম বা ঠাণ্ডা খাবার খাওয়ার পর ৩০ মিনিট পর্যন্ত দাঁতের ব্যথা স্থায়ী হলে ধারণা করা হয় যে দাঁতের পালপ বা শ্বাস আক্রান্ত হওয়ার ফলে এই যন্ত্রণা হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত কোষগুলি নষ্ট হতে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে ১২ ঘণ্টা পর ব্যথা কমে যায়। আবার ব্যথা শুরু হলে বুঝতে হবে নষ্ট কোষ আবার সংক্রমিত হয়েছে বা পুঁজ তৈরি হয়েছে।

এছাড়া যে কারণগুলির জন্য দাঁতে ব্যথা হয়

সাইনোসাইটিস, এক্ষেত্রে সাইনাসে ভাইরাল, ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে সাইনাস সংক্রামিত হয়ে ফুলে যায়।

উপরের দাঁতগুলির গোড়া সাইনাসের খুব কাছাকাছি থাকায় সাইনোসাইটিসের ফলে উপরের দাঁতে ব্যথা হতে পারে।

এছাড়াও হৃদরোগ এবং ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণেও দাঁত ব্যথা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দাঁত ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের একটি উপসর্গ হিসেবেও চিহ্নিত হয়। তবে এগুলি খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

দাঁতের ব্যথার একটি বিরল কারণ হলো ট্রাইজিমিনাল নিউরালজিয়া এবং অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া। এগুলির কারণেও দাঁতে ব্যথার অনুভূতি কখনও কখনও লক্ষ্য করা যায়।

দাঁতে ব্যথা কমানোর উপায়

দাঁতে ব্যথার জন্য চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন। তবে বাড়িতেও কয়েকটি জিনিসের ব্যবহারে দাঁতে ব্যথার থেকে খানিক উপশম হয়।

দাঁতের চিকিৎসা

দাঁত ব্যথার জন্য বেশিরভাগ লোকই দাঁতের দাঁতের ডাক্তারের কাছে যান, যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা রোগীর দাঁতের সমস্যার কারণে ঘটে।

দাঁতের ক্ষয় বা দাঁত সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে দাঁত বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এক্স-রে এবং দাঁতের অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। এছাড়া সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য তারা আক্রান্ত রোগীকে ব্যথার ওষুধ বা পেইনকিলার এবং অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

দাঁতে ব্যথা, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে যদি হয় তবে ডাক্তার একটি ড্রিল দিয়ে দাঁতের সেই ক্ষয়টি দূর করবেন এবং দাঁতের উপকরণ দিয়ে সেই শূন্য স্থানটি পূরণ করবেন। আবারও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আক্রান্ত দাঁতটি তুলে ফেলার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনও হতে পারে।

যদি ডাক্তার দাঁতের রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর দাঁতের ব্যথার কারণ খুঁজে না পান সেক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য অন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলবেন।

সাইনোসাইটিস চিকিৎসা

ডাক্তাররা সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক বা ডিকনজেস্ট্যান্ট জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করে সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা করেন। তবে অত্যন্ত বিরল ক্ষেত্রে ন্যাজাল প্যাসেজ উন্মুক্ত করার জন্য সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। যদিও এই ক্ষেত্রে, ডাক্তার রোগীদের ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলবেন।

ট্রাইজিমিনাল নিউরালজিয়া এবং অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার ক্ষেত্রে এই সমস্যা গুলি নিরাময়ের তেমন কোনো উপায় নেই। সাধারণত ওষুধের সাহায্যে আপনার ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয় এরকম সমস্যা দেখা দিলে৷

ডেন্টিস্ট যদি মনে করেন যে আক্রান্ত ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে তিনি তাকে জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন। আবার ডেন্টিস্ট যদি রোগীর অন্যান্য উপসর্গ দেখে মনে করেন যে হার্ট বা ফুসফুস জনিত কোনো রোগ সৃষ্টি হয়েছে তবে তিনি তাকে সেই সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেবেন। সেক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের অন্য অন্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

দাঁতে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

কোনোরকম চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে বসে দাঁতের ব্যথা থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিতে পারে কয়েকটি জিনিসের সঠিক ব্যবহার।

যেমনঃ

  • ওভার-দ্য কাউন্টার (OTC) ব্যথার ওষুধ (যেমন Aspirin)
  • ওটিসি টপিকাল দাঁতের ব্যথার ওষুধ, যেমন বেনজোকেন ( Anbesol, Orajel)
  • দাঁতের ব্যথা যদি সাইনাস জনিত সমস্যার কারণে হয় সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন ওটিসি ডিকনজেস্ট্যান্টস, যেমন সিউডোফিড্রিন (Sudafed)।
  • দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য লবঙ্গ তেলের ব্যবহার ভীষণ ভাবে কার্যকরী।
  • ঈষদুষ্ণ জলের সাথে অল্প পরিমাণে নুন দিয়ে কুলকুচি করলে মাড়ি ফোলার সমস্যা কমে ৷

বেনজোকেইনের সাথে অন্য কোনও কিছু ব্যবহার করার আগে যেকোনো ডাক্তার বা দাঁতের ডাক্তারের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করুন। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের বেনজোকেনযুক্ত কোনও দ্রব্যই ব্যবহার করা উচিত নয়।

দাঁতে ব্যথার  জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হলে কি করণীয়?
  • দাঁত ব্যথার সাথে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি যদি উপস্থিত থাকে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন।
  • চোয়াল বা মুখে ফোলাভাব এটি দাঁতে কোনো ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া/ফাঙ্গাস  সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ হতে পারে
  • বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, লাইটহেডেডনেস এগুলি কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
  • শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘকালীন কাশি বা কাশির সাথে রক্ত পড়া।
  • স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হলে বা গিলতে সমস্যা হলে, তা ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
কিভাবে শুরুতেই প্রতিরোধ করা যায় দাঁতের ব্যথার সমস্যা?

দাঁত ব্যথা প্রতিরোধ করার জন্যে,

  • দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করুন।
  • বছরে অন্তত পক্ষে দু’বার দাঁতের চেকআপ করুন এবং ডেন্টিস্টকে দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করান।
  • সেভাবে কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন, এবং সেই অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলুন।
  • দাঁত ভালো রাখতে ধূমপান বর্জন করুন।
  • স্বল্প ফ্যাটযুক্ত ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
  • সপ্তাহে ৫ বার দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট  শরীরচর্চার মাধ্যমে হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসকে ভালো এবং সুস্থ  রাখুন।
  • তবে হার্টের সমস্যা থাকলে না থাকলেও নিয়মিত শরীরচর্চা শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago