Categories: যৌন রোগ

ক্ল্যামিডিয়া রোগের লক্ষণ,কারণ ও চিকিৎসা

Published by

ক্ল্যামিডিয়া একটি যৌন সংক্রামক রোগ, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়েই আক্রান্ত হয়। ক্ল্যামিডিয়া রোগের লক্ষণ,কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

এমন অনেক রোগ জীবাণু আছে, যা থেকে আমরা নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি, আমরা জানতেও পারিনা কখন আমাদের শরীরে বাসা বাঁধলো কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া। মানুষের সংস্পর্শে আসার ফলে যেভাবে জ্বর সর্দিকাশি সহ নানান সমস্যা দেখা হয়, তেমনই সংক্রামক হলো যৌনতা বাহিত রোগ। মেডিকেলের পরিভাষায় এই যৌনতা বাহিত রোগ গুলিকে বলে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (STD)।

আমরা জানতেই পারিনা কিভাবে সম্পূর্ণ অজান্তে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ফলে আমরা সংক্রামিত হয়ে পড়ি। এখনও এই ধরনের যৌন সংক্রামক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বহু ভুল ধারণা, কুসংস্কার রয়েছে ৷ যৌনরোগ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতা এবং জ্ঞানের অভাব ভীষণ ভাবে লক্ষণীয়। আরেকটি বিষয় হলো অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হলেও যৌনসংক্রমণ কিংবা এ জাতীয় রোগ গুলি নিয়ে লজ্জা আর দ্বিধা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি একটি বিরাট সংখ্যক মানুষ৷

তেমনই একটি যৌনতা বাহিত রোগ বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ হলো ক্ল্যামিডিয়া ৷ এদেশের অনেকেই হয়তো জানেন না ক্ল্যামিডিয়া আসলে কি।

মারাত্মক একটি যৌনরোগ হলো ক্ল্যামিডিয়া। যা মূলত এক ধরনের রোগ জীবাণু। যৌন মিলনের কারণে এটি একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। ভারতবর্ষ বা বাংলাদেশের তুলনায় পাশ্চাত্য দেশ দেশ গুলিতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর হার অনেক বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেখানে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত হন। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সাধারণত ২৫ বছরের নীচে থাকা ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন বেশি। অন্যান্য বেশ কিছু যৌন রোগের মতো ক্ল্যামিডিয়াতেও পুরুষদের তুলনায় নারীরা আক্রান্ত হন বেশি। তবে ৭০-৯৫ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রেই এই রোগের সেভাবে কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় না। একই জিনিস পুরুষদের ক্ষেত্রেও ঘটে৷

ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণের কারণ গুলি কী কী?

ক্ল্যামিডিয়া একটি যৌন সংক্রামক রোগ, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়েই এতে আক্রান্ত হয়। যা ক্ল্যামিডিয়া ট্র্যাকোমাটিস (Chlamydia Trachomatis) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। যে ব্যক্তি একবার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি ফের সংক্রমিত হতে পারেন, তার শরীরে ক্ল্যামিডিয়ার ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে।

• সাধারণত যৌন সঙ্গমের মাধ্যমেই কোনো ব্যক্তি ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত হন।

• সংক্রামিত সঙ্গী বা সঙ্গীনির সঙ্গে যোনি,

পায়ু অথবা মৌখিক যৌন সঙ্গমের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

• সংক্রামিত মায়ের থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তাঁর সন্তানের দেহে এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত করতে পারে।

• অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংসর্গ, ক্ল্যামিডিয়ার মতো যৌনতা বাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ক্ল্যামিডিয়া রোগের লক্ষণ গুলি কী কী?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলারাই ক্ল্যামিডিয়ায় বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মহিলাদের ৭০-৯৫ শতাংশের মধ্যে ক্ল্যামিডিয়ার কোনও উপসর্গই সেই অর্থে লক্ষ্য করা যায় না। পুরুষদের ক্ষেত্রেও ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্তদের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। সাধারণত সংক্রমণের ৫-১০ দিন পর দেখা দিতে পারে উপসর্গ।

নারীদের ক্ষেত্রে ক্ল্যামিডিয়ার লক্ষণ

• তলপেটে ব্যথা।

• যৌনাঙ্গ থেকে সবুজ বা হলদেটে তরল পদার্থ নিঃসৃত হওয়া।

• হালকা জ্বর

• মলদ্বারে ফোলা ভাব৷

• যৌনাঙ্গের ভিতর ফুলে যাওয়া৷

• যৌন মিলনের সময় রক্তপাত৷

• ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত। প্রয়োজনীয় রক্তও বেরিয়ে আসে৷

• বারবার মূত্র ত্যাগ। এবং সেই সময় যৌনাঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা।

• যৌন মিলনের সময় রক্তপাত।

পুরুষদের ক্ষেত্রে ক্ল্যামিডিয়ার লক্ষণ

• মূত্রত্যাগের সময় যৌনাঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা।

• যৌনাঙ্গ থেকে পুঁজ বেরনো।

• অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া।

•  মলদ্বার ফুলে যাওয়া।

এছাড়াও পুরুষ মহিলাদের মধ্যে ক্ল্যামিডিয়ার কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে। যেমন

• গলা ব্যথা

•  মলদ্বার ফুলে চুলকুনি বা রক্তপাত হতে পারে। কখনও কখনও ডায়ারিয়ার সমস্যাও দেখা দেয়।

• ক্ল্যামিডিয়ার ফলে চোখও আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যায় এবং চুলকানি হতে পারে। চোখ থেকে জল পড়ে।

কিভাবে নির্ণয় করা হয় ক্ল্যামিডিয়া?

• আক্রান্ত ব্যক্তির কোনও উপসর্গ না থাকলেও যদি সঙ্গীর সংক্রমণ সম্বন্ধে অবগত থাকেন, সেক্ষেত্রে যৌন জীবন সম্পর্কে চিকিৎসককে জানানো জরুরি৷

• মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিরসের নমুনা সংগ্রহ করে সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয়৷

• পুরুষদের ক্ষেত্রে মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

• ওরাল সেক্সের ক্ষেত্রে গলাতেও সংক্রমণ হতে পারে। তাই সোয়াব টেস্টের মাধ্যমেও নির্ণয় করা হয়৷

ক্ল্যামিডিয়া থেকে মুক্তি পেতে কী কী চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়?

• ওষুধের প্রয়োগ এবং সুরক্ষিত জীবনযাপনের মাধ্যমে ক্ল্যামিডিয়া সহজেই নির্মুল করা যায়। নিয়ম মাফিক  চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া অব্ধি। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন, ইনফেকশন সারিয়ে তোলার জন্য। সাধারণত অ্যাজিথ্রোমাইসিন এবং ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করা হয় ক্ল্যামিডিয়ার চিকিৎসায়।

• উপসর্গ চলে যাওয়ার পরেও শরীরে থেকে যেতে পারে রোগের জীবাণু। ফলে যতদিন না ইনফেকশন সম্পূর্ণ না সারছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।

• সঙ্গীর সঙ্গে যৌন মিলন করার আগে আরেকবার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিন। নিশ্চিত হয়ে নিন সংক্রমণ পুরোপুরি চলে গেছে কিনা।

• ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে সঙ্গীর সাথে ওষুধ ভাগ করবেন না।

• একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে প্রতি ৩ মাস অন্তর পরীক্ষা করাতে হবে।

তবে ক্ল্যামিডিয়া আপাতদৃষ্টিতে একটি সাধারণ যৌনরোগ হলেও,সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মহিলাদের ক্ষেত্রে ইউটেরাস বা জরায়ু ও সার্ভিক্সে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের মতো জটিলতার সৃষ্টি করে এবং আরও মারাত্মক আকার নিতে পারে।

উল্টোদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে, সংক্রমণ মূত্রনালীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সতর্কতা

যৌন সঙ্গী যদি ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত হন, তিনি পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত যৌনমিলন স্থগিত রাখতে হবে। না হলে তার শরীর থেকে ক্ল্যামিডিয়ার জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাবে৷

প্রতিবার যৌন মিলনের সময় কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে। মহিলাদের জন্যেও বিশেষ ধরনের কন্ডোম পাওয়া যায়, সেটি ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকবে।

• একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago