গার্হস্থ্য হিংসা বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কি এই ব্যাপারে এখনও অবগত নয় অনেকেই।এটি যুগ যুগ ধরে ঘটে আসা একটি ঘৃণ্য অপরাধ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে করোনা অতিমারীর জেরে হওয়া লকডাউনের সময়ে। একঘেয়েমির জীবন, জীবিকার হতাশা, চারদিকে মহামারীর আতঙ্ক, ফলস্বরূপ সবকিছুর জের গিয়ে পড়ে গৃহবধূটির উপর। এমনও দেখা গিয়েছে বাড়ির শিশুটিও রক্ষা পায়নি এর কবল থেকে ৷
ভারতে এই ধরনের অপরাধ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। আগে মনে করা হত এই ধরনের অপরাধ কেবল গ্রামাঞ্চলেই হয়, কিন্তু বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে শহরের বুকেও এর পরিমাণ নেহাত মন্দ নয়। সমস্যা হলে এক্ষেত্রে বহু মামলাই পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছায় না, দায়ের হয়না কোনো অভিযোগ। আবার অনেকে আইনি জটিলতার ফাঁদে ক্লান্ত হয়ে বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। কিন্তু এই গার্হস্থ্য হিংসা বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কী? এই অপরাধের আইনি বিধান কী?
কোনোরকম স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে কিংবা কোনও অপরাধ প্রবণতাকে তৃপ্ত করতে গিয়ে কিংবা নিছক মানসিক তৃপ্তির জন্য বাড়ির একজন সদস্য যদি অন্য সদস্যের উপরে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ভাবে অত্যাচার চালান বা কেউ যদি কোনও রকম যৌনহিংসার শিকার হন তাহলে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতাই গার্হস্থ্য হিংসা বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসেবে বিবেচিত হয়৷
কয়েকটি বিরল ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদ দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারাই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হন। কখনও কখনও এর শিকার হতে দেখা গেছে বাড়ির শিশুকেও।
এরকম অপরাধের শিকার হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় মহিলা কোর্ট বা ফার্স্ট-ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করা যায়।নির্যাতিতা চাইলে সিভিল বা ক্রিমিনাল দুই ধরনের মামলাই দায়ের করা যায়।অনেকে আবার প্রথম অবস্থায় শুধুমাত্র FIR দায়ের করেন।
দেশের সার্বিক চিত্র বলছে, ২০১৯ সালে NCRB-র দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী
৩০.৯% মহিলা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর শিকার ৷ এর মধ্যে ৪.০৫ লক্ষ ক্রিমিনাল কেস দায়ের করা হয়েছে 498A ধারায়৷
রাজ্যের সার্বিক চিত্রও এর থেকে খুব একটা আলাদা নয়। ২০০৫ সালে পাশ হয় প্রোটেকশন অফ উওমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট৷ ২০০৬ সাল থেকে কার্যকরী হয় সে আইন ৷ খাতায়-কলমে আইন কার্যকর হওয়ার এক দশক পূর্ণ হয়েছে ৷ কিন্তু এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে রাজ্য?
উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বেড়েছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ঘটনা৷ কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়নি আইন কার্যকর করে নির্যাতিতাদের বিচার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ৷ এমনকি প্রথম প্রথম পরিষেবা দেবার জন্য রাজ্য জুড়ে ৭০টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ২০০৯-এর পর থেকে তাঁদের সার্ভিস রিনিউ করাই হয়নি বলেই জানা যায় সূত্র মারফত। শুধু তাই নয়, একটি জেলায় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ঘটনা চিহ্নিত করে অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু হতেই সময় লেগে যায় অনেকখানি, আর মূল সমস্যা থাকে এখানেই৷
ভিক্টিম বা তার পরিবারের তরফ থেকে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশন অফ ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের প্রোটেকশন অফিসার যে রিপোর্টটি তৈরি করেন, সেটিই ইনসিডেন্ট রিপোর্ট হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে পুরো ঘটনার তদন্ত করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই আইনের সাহায্য নিতে হবে। কীভাবে আইনের সাহায্য নেবেন নিম্নে তা আলোচনা করা হল ।
কোনো নির্যাতিতাকে গার্হস্থ্য হিংসার থেকে রক্ষা করতে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট (Domestic Violence Act,2005) লাঘু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের ৪৯৮এ, ৪০৬, ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় এই ধরনের অপরাধের বিচার করা হয়।
লিভ-ইন রিলেশনশিপে থাকা মহিলাদের জন্যও এই আইন কার্যকরী। তবে এক্ষেত্রে ঘটনা ও মামলার বিষয়বস্তু অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
প্রত্যক্ষদর্শীর নির্যাতনের বিবরণ , ডকুমেন্টারি প্রুফ, সেকেন্ডারি এভিডেন্স অর্থাৎ অডিও, ভিডিও বা অন্যান্য নথি কাজে লাগে।
৪৯৮এ ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের মামলার মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে?
যে কোনও কারণেই অর্থাৎ মানসিক, শারীরিক বা অর্থনৈতিক যে কোনো কারণে অত্যাচার করা হলে তা গার্হস্থ্য হিংসা বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে ৪৯৮এ ধারায় মূলত পণ না দেওয়ার কারণে নির্যাতিত হলে সেই সংক্রান্ত মামলার বিচার করা হয়।
এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে জাতীয় মহিলা কমিশন ৷ প্রথম অবস্থাতেই তাদের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে জানিয়ে রাখুন সম্পূর্ণ বিষয়টি।
এরপর আসে পারিবারিক দায়বদ্ধতা। বিবাহিতা মেয়েরা তাদের বাড়িতে জানালেও আজও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা হয়, “একটু অ্যাডজাস্ট করে নে”, “একটু আধটু এমন সবারই হয়, মানিয়ে নে আর কি করবি?”, “বাচ্চা নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে এলে লোকে কি বলবে?” এগুলোকে বন্ধ করতেই হবে ৷ মনে রাখতে হবে একজন নির্যাতিতাকে এগুলো বলা মানে, এও এক ধরনের ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। প্রথমেই রুখে দেওয়া গেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা যায় বহু মেয়েদের।
আরেকটি বিষয় অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আজও গার্হস্থ্য হিংসার শিকার অধিকাংশ নারী উপার্জনক্ষম নন ৷ তাই আর্থিক নিরাপত্তার অভাব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে এই রকম অবস্থায় অনেক বেশি বিঘ্নিত করে। এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে কাছের মানুষদের। অনেকে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না সহজে, মনে করেন জীবনে নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই৷ এরকম ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাহায্য নিতে হবে মনোবিদের।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment