ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাইলে, ক্লান্তি, দাগ ছোপ দূর করে সুন্দর, মসৃণ, ঝকঝকে ত্বক পেতে চাইলে আমরা সবার আগে কোন প্রোডাক্ট মাখব, কী লাগাব মুখে সেই কথাই ভাবি। অথচ অনেকে এমনও আছেন যারা নিজেদের ত্বকের ধরন সম্পর্কেই ঠিকমতো জানেন না! ত্বক তৈলাক্ত, শুষ্ক, নাকি কম্বিনেশন, এটা বুঝতে বুঝতেই সময় চলে যায় আর ভুল প্রোডাক্টের ব্যবহারে ত্বকের অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা একটা কথা ভুলে যান যে সৌন্দর্য আসে আমাদের ভিতর থেকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে গেলে তাকে ভিতর থেকে সুন্দর করে তোলা প্রয়োজন। চলুন আজ তাহলে আলোচনা করা যাক বিভিন্ন ধরণের ত্বক এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খাবার সম্পর্কে। আমাদের এক একজনের ত্বক এক এক রকমের। তাই সবার আগে আপনার জেনে নেওয়া উচিৎ আপনার স্কিনটাইপ কী। আপনার ত্বক কী ধরণের সেটা বোঝার জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ত্বকের মোটামুটি চাররকমের হতে পারে – শুষ্ক ত্বক, তৈলাক্ত ত্বক, স্বাভাবিক ত্বক এবং এই তিনটি ত্বকের বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন ত্বক অর্থাৎ কম্বিনেশন ত্বক। বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখে ত্বকের ধরন বোঝা সম্ভব।
খসখসে, রুক্ষ, অমসৃণ ত্বক মানেই শুষ্ক ত্বকের লক্ষণ। খুব শুকনো ত্বকে মাঝেমাঝে চুলকানিও হতে পারে। আর্দ্রতার অভাবে শুষ্ক ত্বক বিবর্ণ,নিষ্প্রাণ দেখায়। কাজেই আপনার ত্বকে যদি এরকম সমস্যা দেখেন,বুঝবেন তা শুষ্ক ত্বক। যাদের শুষ্ক ত্বকের সমস্যা রয়েছে তাদের যতটা পারা যায় হাইড্রেটেড থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার জল পান করা প্রয়োজন।এছাড়া তরমুজ, ৬অ্যাভোকাডো, জলপাই তেল, স্যালমন মাছ এইসব খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল গ্রহণ শুষ্ক ত্বকের জন্য অন্যতম কারণ। মনে রাখতে হবে প্রত্যেকের সহনশীলতার মাত্রা আলাদা, তাই ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা আলাদা হলেও আপনার উচিৎ এগুলিকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা। তবে শুধু ডিহাইড্রেশন থেকেই যে ত্বক শুষ্ক হয় এর কোনো মানে নেই। ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, ভিটামিন এ এবং সি-এর ঘাটতি থেকে দেহের ত্বকে শুষ্কতা আসে। তাই তারা সাধারণত ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে আছে পালং শাক, মিষ্টি আলু, ব্রকোলি প্রভৃতি।
মুখ ধোওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তেলতেলে দেখায় মুখ? রোদ্দুরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে? তেমন হলে আপনি তৈলাক্ত ত্বকের মালকিন। তৈলাক্ত ত্বকের রোমছিদ্র বড়ো হয়, ঘাম, তেলময়লা রোমছিদ্রে জমে গিয়ে ব্রণর উৎপাত দেখা দেয়। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তবে আপনার উচিৎ ডায়েট থেকে তেল বাদ দেওয়া। এর চেয়ে আর সহজ উপায় নেই। তবে চিকিৎসকেরা বলেন যে, ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করবে না এমন তেল এই ধরণের ত্বকের জন্য কিছুটা কার্যকরী হতে পারে। এর মধ্যে আছে- আভাকাডো, জলপাই তেল, মাছের তেল প্রভৃতি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন তৈলাক্ত, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ভাজা, এবং চিনির পরিমাণ ন্যূনতম বা সীমিত রাখতে। অন্যদিকে চিকিৎসকরা একথাও বলেছেন যে, প্রক্রিয়জাত কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে গম এবং রেডমিটের পরিবর্তে যদি পোল্ট্রি জাত খাদ্য বা মাছ খাওয়া যায় তা তৈলাক্ত ত্বকের মানুষদের পক্ষে ভালো।
ত্বক খুব তেলতেলেও নয়, আবার খুব শুষ্কও নয়, এরকম হলে আপনার স্বাভাবিক ত্বক। এই ত্বক সাধারণত নরম আর মসৃণ দেখতে লাগে। স্বাভাবিক ত্বক হলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ঠিকই, তবে নজর না দিলে স্বাভাবিক ত্বকও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ত্বকের ধরণ স্বাভাবিক হলে খাদ্যতালিকা থেকে বিশেষভাবে কোন খাবার বাদ না দিলেও বেশ কিছু খাবারকে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন-অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা মিষ্টি খাবার শুধু যে শরীরের মেদ বাড়ায় তাই নয়, ত্বক শুষ্ক করে দেয়। ফলে চোখের কোণ, কপালে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলেন, ২০ বছরের পর থেকেই ত্বক কোলাজেন হারাতে শুরু করলেও কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার বার্ধক্যের কাছে পৌঁছানো প্রক্রিয়াটিকে কিছুটা ধীর করতে সাহায্য করতে পারে। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের সকলেরই উচিৎ এন্টি অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খাওয়া।
কম্বিনেশন ত্বক চেনা খুব সহজ। যাঁদের কপাল, নাক আর চিবুকের অংশটা সহজেই তেলতেলে হয়ে যায় এবং গালের অংশ শুকনো বা স্বাভাবিক থাকে, তাঁদের ত্বক হল কম্বিনেশন বা মিশ্র প্রকৃতির। স্বাভাবিকভাবেই তেলতেলে অংশের রোমছিদ্রগুলোর আকার বড়ো হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নায় খুব ভালো করে খুঁটিয়ে লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন।যেহেতু সংমিশ্রণ ত্বক শুষ্ক এবং তৈলাক্তের মিশ্রণ, তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই দুই ধরণের ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারকেই কম্বিনেশন ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ডায়েটের তালিকায় রাখা উচিত। সংমিশ্রণ ত্বকযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণরূপে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়ার দরকার নেই। তবে চিকিৎসকদের মতে, আপনি কোন ধরণের শস্য এবং গম খাচ্ছেন সেদিকে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কার্বস বাছাই করার সময়, যেগুলিতে প্রোটিন বেশী এবং কম গ্লাইসেমিক থাকে, যেমন ব্রাউন রাইস বা কুইনোয়া বেছে নেওয়াটা দরকার।
ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর করে তুলতে চাইলে সঠিক খাবার এবং সঠিক পুষ্টি পাওয়া প্রয়োজন। সঠিক পুষ্টি না পেলে ত্বক ভালো হবে না। তবে, এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার আপনার ত্বকের জন্য সেরা খাবারগুলি আপনার ত্বকের ধরণের উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার ত্বকের ধরণ বুঝতে পারলে আপনি আপনার জন্য যেটা প্রয়োজনীয় এবং দরকারী এমন খাবার বেছে নিতে পারবেন। উপযুক্ত ডায়েট কিছুটা হলেও আপনার ত্বকের সমস্যাগুলিকে একটু হলেও প্রশমিত করতে সাহায্য করবে। তবে, আপনার খাদ্যতালিকায় অদলবদল করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তবে, সবসময় মনে রাখা দরকার ঝকঝকে ত্বকের জন্য ভাজা এবং চিনিযুক্ত খাবার পরিমিতভাবে খাওয়া এবং মদ্যপান সীমিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment