আমাদের শরীরের অধিকাংশ অংশ জুড়ে যে প্রত্যঙ্গটি আছে, তা হল আমাদের ত্বক, তাই আমরা সবাই ত্বক উজ্জ্বল করার উপায় খুঁজে নিতে বিভিন্ন পার্লার কিম্বা বিউটিশিয়ানের শরণাপন্ন হই। উজ্জ্বল ত্বককে যেমন সুন্দর স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। অপরদিকে শুষ্ক ও নির্জীব ত্বক আমাদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত করে।
এখানে আমরা ১০ টি উপাদান ও জীবন যাত্রার কিছু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করবো যা আমরা আমাদের সৌন্দর্য ও ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহার করতে পারি।
১) ত্বকের রক্ষায় বিশুদ্ধ নারকেল তেল
নারকেল তেলে অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং সুরক্ষা প্রদানকারী পদার্থ আছে। কিন্তু মুখে সরাসরি নারকেল তেল ব্যবহার করলে সবার উপকার নাও হতে পারে। যাদের নারকেলে অ্যালার্জি আছে, তাদের নারকেল তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। নারকেল তেল ব্যবহারে ত্বকে কোনো অ্যালার্জি না হলে যে যে উপায়ে এটা ব্যবহার করা যায়, সেগুলো হল —
- মেকআপ তুলতে
- ত্বকের কোনো ক্ষত নিরাময়ে
- ত্বকে শিশিরের মতো উজ্জ্বল আভা আনতে
নানা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে নারকেল তেল খুব ভালো একটি ময়শ্চারাইজার। খুব অল্প পরিমান নারকেল তেল নিয়ে সেটা মুখে মাসাজ করুন এবং কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ পরিস্কার করে ফেলুন।
২) ত্বকের তারুণ্য ও সুস্থতা ধরে রাখতে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরাতে সুরক্ষা প্রদানকারী উপাদান আছে এবং তা নতুন কোশের জন্মানোয় সাহায্য করে। রোমকূপের মুখ বন্ধ না করেই অ্যালোভেরা ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে সক্ষম। প্রতিদিন মুখ ধোয়ার পর মুখে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ত্বকে সেই স্বাস্থ্যজ্জ্বল ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরাতে অনেকেরই অ্যালার্জি হতে পারে। প্রথম বার ব্যবহারের আগে হাতের ওপরের দিকে অল্প করে অ্যালোভেরা লাগান, ২৪ ঘন্টার ভেতর কোনো রিঅ্যাকশন না হলে আপনি অবশ্যই অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।
৩) মুখ ধোয়ার পর ভালোভাবে ময়শ্চারাইজ করতে হবে
ত্বকের ময়শ্চারাইজ করার জন্য সেইসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে যা ত্বকের জলীয় ভাব টা বজায় থাকে, ত্বকের সুরক্ষা বজায় রাখবে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রকৃতির হবে, যা ত্বককে উজ্জ্বল এবং তারুণ্যে পরিপূর্ণ করবে। ত্বক যখন শুষ্ক থাকবে, তখন স্ক্রাবিং করা যাবে না এবং ত্বককে ময়শ্চারাইজ সবসময় করতে হবে।
মুখ ধোয়ার পর বা স্নানের পর ত্বক যখন ভিজে আছে, সেই ভেজা ত্বকে ময়শ্চারাইজ করতে হবে এবং এর ফলে ত্বকের নিজস্ব জলীয় ভাব টা বজায় থাকবে এবং গভীর থেকে ত্বক উজ্জ্বল থাকবে।
৪) নিয়মিত সানস্ক্রিনের ব্যবহার
১৫ বা তার বেশি SPF যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি (UV Ray) এর হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করলে ত্বক ফোটো এজিং এর হাত থেকেও রক্ষা পায়। এই ফোটো এজিং হল ত্বকের দ্রুত বয়স বৃদ্ধির একটি অবস্থা। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন দিন হোক বা শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন দিন, প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হবে।
৫) ত্বককে পরিস্কার রাখার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করতে হবে
ত্বককে বারবার ধুয়ে তার থেকে ময়শ্চারাইজার যেমন তুলে ফেলা উচিত নয়, তেমনি ত্বককে নিয়মিত ও সঠিকভাবে না ধুলেও চলবে না, কারণ তার ফলে রোমকূপের মুখে অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন হয়ে ত্বকে নানা সমস্যা তৈরি হবে।
এমন কোনো কাজ, যা করে আমরা প্রচণ্ড ঘেমে গেছি, তারপর অবশ্যই ভালো ভাবে মুখ ধুতে হবে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধোয়া দৈনিক রুটিনের অন্তর্গত করে নিতে হবে।
৬) স্মোকিং এবং প্যাসিভ স্মোকিং থেকে দূরে থাকতে হবে
যখনই আপনি আপনার ত্বককে সিগারেট স্মোকিং এর সংস্পর্শে নিয়ে আসছেন, তখনই আপনার ত্বকে সমস্ত ক্ষতিকর রাসায়নিকের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে ত্বকের ওপর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস পড়ে এবং ত্বকে খুব কম বয়স থেকেই বয়স্ক ছাপ পড়তে থাকে।
৭) ত্বক উজ্জ্বল রাখতে প্রচুর জল খেতে হবে
আমাদের ত্বক যেসব কোশ দিয়ে তৈরি, তাদের সঠিক ভাবে কাজ করারা জন্য জলের প্রয়োজন হয়। ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেশি পরিমানে জল খাওয়া ও সুস্থ–সুন্দর ত্বকের ভেতর গভীর সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন ৩–৪ লিটার জল খেতে হবে।
৮) ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় এমন খাদ্য খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে
খাদ্যতালিকায় অনেক পরিমানে ফল ও সব্জি রাখতে হবে, যা আমাদের শরীরে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান বাড়াবে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন ফিশ অয়েল এবং ফল ও সবজি খাদ্যতালিকায় রাখলে ত্বকও খুব ভালো ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল থাকে, অপরদিকে যারা প্রসেসড ফুড বেশি পরিমানে খায়, তাদের ত্বক অনুজ্জ্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
৯) প্রোবায়োটিক
প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট আমাদের
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- খাদ্যনালীতে প্রদাহ কমায়
- পেট ফুলে থাকা থেকে স্বস্তি দেয়
২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রোবায়োটিক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল ও ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
১০) স্নানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন
গরম বাষ্প ত্বকের রোমকূপকে উন্মুক্ত করে ত্বকের ময়লা ও অশুদ্ধ পদার্থকে বের করে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু গরম জল দিয়ে অতিরিক্ত সময় ধরে ত্বক ধুতে থাকলে ত্বকে উপস্থিত ত্বকের প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক তেল নস্ট হয়ে যায় এবং এর ফলে ত্বক অসুস্থ, শুষ্ক ও নির্জীব দেখায়। তাই অতিরিক্ত গরম জলে ত্বক ধোয়া যাবে না।
স্নানের শেষের দিকেও জলের উত্তাপ কমিয়ে নেওয়া যায়, এতে ত্বকে রক্তের সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং এর গলে ত্বককে অনেক উজ্জ্বল তারুন্যে ভরপুর দেখায়।
নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া নিজের যত্ন নেওয়ারই একটি প্রকার এবং এর ফল হল একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক। অনেক সময় মানদিক চাপ, পুষ্টির অভাব, হরমোনের সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ত্বকের যত্নে সমস্যা তৈরি করে। যদি আপনি আপনার ত্বকের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং এবং আপনার ত্বক দীর্ঘদিন ধরে প্রানহীন, শুষ্ক থাকে এবং ত্বকে নানা ধরনের ছোপ বা ত্বকের রঙের স্মতা না থাকে, তাহলে শরীরের অন্যান্য কোনো সমস্যা এর কারন হতে পারে এমন ক্ষেত্রে দ্রুত ত্বকের বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের (ডার্মাটলজিস্ট) কাছে যেতে হবে।