পর্নোগ্রাফিতে (Porn) আসক্তি ? ইচ্ছে থকেলেই এর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব- কথাকলি পোদ্দার

Published by

 ইন্টারনেট সাধ্যের মধ্যে আসার পর যেমন বিনোদনের দরজা খুলে দিয়েছে, তেমনই পর্নোগ্রাফিকে এনে দিয়েছে একেবারে নাগালের মধ্যে।  আমাদের আশেপাশে এমন অনেকেই হয়ত আছেন যারা পর্নোগ্রাফি দেখতে বা পড়তে অভ্যস্ত। অনেকেই নিজেদের সেক্সুয়াল ড্রাইভ সাময়িক ভাবে বাড়ানোর জন্য Porn দেখতে পারেন। কিন্তু এই Porn দেখার বা পড়ার অভ্যাসই যে কখন আসক্তি তে রূপান্তরিত হয়ে যায় তা তারা নিজেরাই বুঝতে পারেন না। তখন তাঁরা পর্নোগ্রাফির প্রতি মানসিক ভাবে এমন ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন যার ফলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক এবং কাজ করার দক্ষতায় প্রভাব ফেলতে থাকে।

ডাক্তারদের মতে, এই ধরণের আসক্তিকে হাইপারসেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। 2019 সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ডিসঅর্ডারের প্রসার মাত্র 3 থেকে 6% । যদিও এই হার নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ ভারত তথা বাঙ্গলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই ব্যাপার নিয়ে অনেক বেশি ছুঁৎমার্গ ও সর্বসমক্ষে স্বীকার করতে চান না।

কখন  বুঝবেন যে আপনি পর্নোগ্রাফির আসক্তি (Porn Addiction) তে ভুগছেন?

তবে মনোবিদেরা বলছেন, পর্নফিল্ম দেখা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত পর্নফিল্ম দেখতে দেখতে বহু মানুষের কাছেই তা নেশার পর্যায়ে চলে যায়। এর ফলে মানসিক সহ অনেক সমস্যা দেখা দেয়। যদি আপনার মধ্যে এমন কোন লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে বুঝতে হবে আপনিও নিষিদ্ধ ভিডিও তে আসক্ত!

  1. পর্নফিল্ম (Porn) দেখা শেষ হবার পরেই মনের মধ্যে অপরাধবোধ গ্রাস করা। আর সেই অপরাধবোধ থেকে জন্ম নেয় মানসিক অবসাদ। এমন অবস্থা কাটাতে ভিডিও দেখা বন্ধ করতে চাইলেও অনেক সময় ব্যর্থ হন।
  2. যারা আসক্ত হন, একটা সময়ের পর তারা বাস্তব আর অবাস্তবের মধ্যে ফারাক করতে পারেন না। কম্পিউটার বা ফোনের পর্দার জিনিস বাস্তব ভেবে বসেন। যার ফলে ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যার উদ্ভব ঘটে।
  1. পর্নফিল্মের গ্ল্যামারাস নায়ক নায়িকা দের মতো কোয়ালিটি নিজের সঙ্গী বা সঙ্গীনির মধ্যে খুঁজতে শুরু করা ঠিক নয়। কারণ বাস্তব আর অবাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক। কিন্তু আসক্তদের মাথায় এই ব্যপারটা কাজ করে না। যার ফলস্বরূপ তাঁরা তাঁদের সঙ্গীর প্রতি শারীরিক ও মানসিকভাবে আকর্ষণ বোধ করেন না। এহেন আচরণ অপর মানুষটির মনে খারাপ ধারণা হতে পারে।
  2. অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুনেও আসক্ত হয়ে পড়ে যা শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়।
  3. ইন্টারনেটে পর্নফিল্ম খুঁজে না পেলে নেশাগ্রস্তের মতো আচরণ করতে থাকা।সাধারণ সামাজিক কাজ ক্রমে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়।

পর্নোগ্রাফির আসক্তির (Porn Addiction) চিকিৎসা কি ?

এই ধরণের সমস্যা গুলি ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করলে অবশ্যই একজন থেরাপিস্টের সাথে আলোচনা করা দরকার। 

কোনও ভাল মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নার্ভ সুদিং ওষুধ খেতে পারেন। এগুলি আপনার স্নায়ু উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে, যার ফলবশত যৌন উত্তেজনাও কমবে। এবং ধীরে ধীরে  পর্নফিল্মের প্রতি আসক্তিও কমবে।

এই আসক্তি তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও জীবনে কতখানি প্রভাবিত করছে তার উপর নির্ভর করে কাউন্সেলিং এর পরামর্শ দিতে পারেন। অথবা কোনো সাপোর্ট গ্রুপের সন্ধান দিতে পারেন। অনেক এনজিও আছে যারা বিভিন্ন ধরনের আসক্তি থেকে  মুক্তির পথ  দেখিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে।

এছাড়াও মানসিক অবসাদ ডিপ্রেশান এবং অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের (OCD) পর্যায়ে চলে গেলে ডাক্তার কিছু ওষুধ খেতে বলতে পারেন। 

কি ভাবে এই ধরণের পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে?

1. প্রথমত কম্পিউটার বা ফোন যাবতীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে সমস্ত পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট ও বুকমার্ক মুছে ফেলতে হবে। এবং যদি এই ধরণের ম্যাগাজিন বা হার্ড কপি পড়ার নেশা থেকে থাকে, তাহলেও অবিলম্বে সেগুলো বর্জনের চেষ্টা করুন ।

  1. নিজেকে সর্বদা কোন না কোনো ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।প্রয়োজনে যোগা বয়া কোনও খেলাধুলোর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন।
  1. Porn Addiction থেকে মুক্তি পেতে নিজের পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধু দের সঙ্গে সময় কাটান।
  2. নিজের ইচ্ছেসক্তি কে দৃঢ় করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যারা এই পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন এবং সমস্ত পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট ও বুকমার্ক মুছে ফেলে কিম্বা এই ধরনের সমস্ত হার্ড কন্টেন্ট দুরে সরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন, ২-১ দিনের মধ্যে তাদের মধ্যে আরও বেশি আসক্তি তৈরি হয় এবং পুনরায় আবার একই অবস্থানে ফিরে আসেন। মনস্ত্বতবিদরা বলেন এই সময়টাই সবথেকে ভয়ঙ্কর অর্থাৎ যিনি এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তার মধ্যে পরবর্তী সাত দিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবল ইচ্ছেসক্তি তৈরি করতে হবে, এবং পরবর্তী ৪ সপ্তাহ একই রকম ইচ্ছেশক্তির বলে বলিয়ান হলে তবেই এর থেকে মুক্তি সম্ভব।
Kathakali Poddar

Hi! I am Kathakali! I am a Graduate of Science, where I majored in Botany. Currently, I am living in Kolkata. I can offer my readers a platform to source answers, knowledge, opinion, support, and/or guidance. I will add my research, opinion, and such to the larger wealth of health information.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago