স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়

Published by

পড়াশুনোর ক্ষেত্রে বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় আমরা সবসময় খুঁজে থাকি।মনে রাখার উপরেই নির্ভর করে আমাদের জীবনের অধিকাংশ সবকিছু। শুধু পড়াশোনা নয় পেশাগত জীবন, কিংবা সম্পর্ক — এই ‘মনে রাখা’র উপর নির্ভর করে সবটাই।তাই আপনার যদি মনে না থাকার কোন সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই জেনে নিন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়।  

স্মৃতিশক্তিকে ভালো রাখতে, বাড়িয়ে তুলতে ওষুধ পথ্য ইত্যাদির খোঁজ করেন অনেকেই। পড়া মুখস্থ করা থেকে শুরু করে হাজারও দরকারি নম্বর মনে রাখা, এমনকি বহুদিন না দেখা হওয়া মানুষকে মনে রাখা। এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনে হয়েই থাকে এই বোধহয় লোপ পেলো স্মৃতিশক্তি । উপায় না দেখে শরণাপন্ন হতে হয় ডাক্তারের। কিন্তু নিয়মিত যদি ডায়েট থেকে মেন্টাল এক্সারসাইজ বা প্র‍্যাক্টিস  — এরকম কয়েকটি বিষয় মেনে চলা যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে। স্মৃতিশক্তি এক্কেবারে তরতাজা থাকবে বহুদিন পর্যন্ত।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়- ঘরোয়া ঔষধ

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ প্রথমেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হন ।কিন্তু অনেকেই জানেন না ঘরোয়া কিছু ঔষধ আছে যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ভীষণ উপযোগী।

ব্রাক্ষ্মীশাক

স্মৃতিশক্তি ধারালো করতে ব্রাক্ষ্মী শাকের গুণ আমরা বোধহয় কমবেশি সবাই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি।

ব্রাক্ষ্মী শাকে উপস্থিত ব্যাকোসাইড নামক একটি বায়োকেমিক্যাল, মস্তিষ্কের কোষদের নিয়ন্ত্রণ করে ও মস্তিষ্কের টিস্যুদের নতুন তৈরি করে।

মস্তিষ্কের গ্লুটামেট ও গামা-অ্যামিনোবিউটিরিক অ্যাসিড (জিএবিএ) রাসায়নিকের সামঞ্জস্য বজায় রেখে, এই শাক বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে। অ্যালঝাইমার্স রোগ দূরীকরণ সহ স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে ব্রাক্ষ্মী শাকের জুড়ি মেলা ভার।

ডিম

ডিম কে এমনিতেই বলা হয় সুষম খাদ্য।

ডিমে নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেলস,জল থাকার ফলে তা শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। তাই শরীরের সাথে সাথে ডিম খেলে স্মৃতিশক্তি ও বজায় থাকে।

মাছ

মাছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়াও মাছ অত্যন্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় মাছ রাখলে, তা থেকেই শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন পায়, যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয়। তাই স্মৃতিশক্তি ভালো রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় মাছ একান্ত প্রয়োজন।

আখরোট

আখরোট স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপযোগী।

কফি

কফি গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়াও কফি শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। শরীর তরতাজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তা মস্তিষ্কের পক্ষেও ভীষণ উপকারী।

স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে  গেলে কী কী খাবেন না

স্মৃতিশক্তি ভালো রাখার জন্য যেমন কিছুকিছু খাবার খুব ভালো ,তেমনেই কিছু খাবার আছে যা স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়।নিম্নলিখিত খাবারগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলে আপনি অবশ্যই সুলভ পাবেন।

চিনি জাতীয় খাবার

যেসব খাবারে বেশি পরিমাণে চিনি বা ফ্রুক্টোজ থাকে এবং যে খাবার চিনির রসে ভাজা বা ডোবানো তা এড়িয়ে চলুন। অত্যধিক ফ্রুক্টোজ মনযোগ ও স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়।

প্যাকেটজাত খাবার

স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণ ট্রান্স ফ্যাট ভীষণ ভাবে দায়ী। কোনো শব্দ বা বিষয় ভুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি করে এ ধরনের ক্ষতিকর চর্বি গুলি। সাধারণত কারখানায় উদ্ভিদের তেল থেকে তৈরি করা হয় এই উপাদান, যা প্যাকেটজাত ভাজা খাবারে ব্যবহার করা হয়।তাই এইসব খাবার থেকে দূরে থাকুন।

লবণ যুক্ত খাবার

অত্যধিক লবণ সবসময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। যেসব খাবারে বেশি পরিমাণে সোডিয়াম থাকে, তা সবসময়ই মানুষের চিন্তাশক্তিকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। এছারাও স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সমস্যা যেসব ব্যক্তিদের আছে তাদেরও ভীষণভাবে ক্ষতি করে।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি

স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা গুড ফ্যাট একটি নির্দিষ্ট এবং পরিমিত পরিমাণে শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু যাঁরা অতিরিক্ত পরিমাণে পিৎজা, বার্গার, পাস্তা খান, তাঁরা স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে এই খাবার পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার স্মৃতিশক্তি ক্রমশ দুর্বল করে।

সামুদ্রিক মাছ

বেশ কিছু সামুদ্রিক মাছে অতিরিক্ত মাত্রায় পারদ থাকে, যা মস্তিষ্কের জ্ঞান আহরণ বিষয়টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রতি সপ্তাহে যদি তিনটির বেশি সামুদ্রিক মাছ খাওয়া হয়, তবে স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে কী কী করণীয়?

নিয়ম করেব্রেন গেম

ভিডিও গেম নয় বরং নিয়মিত খেলুন ব্রেন গেম। ইন্টারনেটে ব্রেন গেমের নানা রকম ভিডিও পাওয়া যায়, সেগুলো দেখুন। সুডোকু, পাজল সলভ ইত্যাদি ব্রেন গেম অভ্যেস করুন নিয়মিত। এছাড়াও দাবা খেলুন। নিজেকে কিছুদিন সময় দিন খেলা গুলোকে ভালোবেসে করার জন্য৷ ভালোবেসে করলে তাতে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়বে ৷ কিন্তু ভাল না লাগলে শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হবে বলেই ব্রেন গেম খেলব, দাবা খেলব এমনটা করতে যাবেন না, এক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

প্রতিদিনের কাজ লিখে রাখুন  

স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলার একটা সহজ উপায় হল নিজের মত করে প্রতিদিনের কাজের রুটিন তৈরি করা, আর সেটা পালন করা। এভাবে কোনও কাজ করলে আমাদের মস্তিষ্ক যেমন অনেক বেশি মনে রাখতে পারে, তেমনিই সুবিধে হয় টাইম ম্যানেজমেন্টে। আমরা যে কাজটা করেছি বা করব সে সবই যদি লিখে রাখি, সেক্ষেত্রে বাকি থেকে যাওয়া কাজ গুলো মনে রাখা সহজ হয়।  

নতুন কাজ শেখার চেষ্টা করুন

মাঝেমধ্যে নতুন কোনও কাজ শিখতে শুরু করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। সেটা যেকোনো রকম কাজই হতে পারে। চেষ্টা করুন ক্রিয়েটিভ কিছু করতে। যেমন ছোটোবেলায় অনেকেই ছবি আঁকা শেখে, আর তার সেই চর্চা গুলি একসময় পর সাংসারিক এবং পেশাগত জীবনের চাপে চাপা পড়ে যায়৷ অবসরে সেগুলো একটু ঝালিয়ে নেওয়া যায়৷ বাড়িতে কোনো অব্যবহৃত জিনিস থাকে — খালি কাঁচের বোতল, অনেকদিনের না পরা শাড়ি বা পাঞ্জাবি। তার উপরেই তুলি বুলিয়ে নিন।  এতে স্মৃতিশক্তি বাড়বে। মানসিক চাপ থেকেও রেহাই মিলবে। মানসিক চাপ বাড়লে স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। বন্ধু ও পরিচিতজনের পরিধি বাড়ান এবং তাদের সাথে গড়ে তুলুন একটি সুন্দর গঠনমূলক সামাজিক সম্পর্ক।

রোজ বাড়ি ফেরা এক পথে নয়

অফিস থেকে বা কর্মস্থল থেকে রোজ একই পথে বাড়ি না ফিরে মাঝেমধ্যে অন্য পথে ফিরুন। যেকোনো একটা কাজ মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়।

দিনের একটি বিশেষ সময়ে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখুন

রুটিন করে দিনের একটা বিশেষ সময়ে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখুন। সেটা প্রতিদিন সকালে শব্দছকের খেলা হতে পারে, কিংবা বিভিন্ন ক্যুইজ অ্যাপ থেকে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, কিংবা বাচ্চাদের পড়ানোর ফাঁকে তার পড়াশোনা নিজেও একটু ঝালিয়ে নিন।

ঘুমোনোর আগে নিয়ম করে

রোজ রাতে ঘুমনোর আগে সারাদিনের মুহূর্ত গুলোকে  মনে করার চেষ্টা করুন। মনে করুন সারাদিনে কী কী কাজ করলেন, কোন গুলো বাকি থেকে গেল, বিশেষ বিশেষ কি ঘটলো — ইত্যাদি। পর্যাপ্ত ঘুমের কিন্তু কোনো বিকল্প নেই।  নির্ঘুম শরীর অনেকাংশেই শরীরের সাথে সাথে মনের ক্ষমতার উপরেও প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিনের ৭-৮ ঘন্টা ঘুম একান্ত জরুরি।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago