হিস্টেরোস্কপি কি এবং এটি কিভাবে করা হয়?

Published by

হিস্টেরোস্কপি কি তা অনেকেই জানেন না।এটি হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানে চিকিৎসক খুব ছোট ব্যাসার্ধের একটি যন্ত্রকে জরায়ু তে প্রবেশ করান এবং সেই যন্ত্রের মাথায় একটি আলো ও ক্যামেরা থাকে, যার সাহায্যে চিকিৎসক জরায়ুর ভিতরের অংশটি সম্পূর্ণ দেখতে পান।

বেশকিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে চিকিৎসক এই পদ্ধতির স্মরনাপন্ন হন। পদ্ধতি টি রোগ নির্ণয় বা সার্জারীর আগে করা হয়। যে যে পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে, তা হল—

  • অন্য কোনো শারীরিক পরীক্ষার ফল নিশ্চিত করার জন্য
  • ফাইব্রয়েড ও পলিপ বাদ দেওয়ার জন্য
  • কোনো ল্যাপ্রোস্কোপিক পদ্ধতির সার্জারীর জন্য
  • জরায়ুতে কোনো সমস্যা আছে কি না তা দেখার জন্য

হিস্টেরোস্কপি কিভাবে করা হয়?

জরায়ুতে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা বোঝার জন্য একজন স্পেশালিষ্ট ডাক্তার এই পরীক্ষা টা করেন। অন্যান্য গাইনোকোলজিকাল পরীক্ষা চিকিৎসক যেভাবে করেন এটাও সেই ভাবেই হয়। চিকিৎসক প্রথমে স্পেকুলাম নামক একপ্রকার যন্ত্রের সাহায্যে সার্ভিক্স এর মুখটা প্রসারিত করেন। এরপর চিকিৎসক ভ্যাজাইনাল ওপেনিং এর মাধ্যমে হিস্টেরোস্কোপির যন্ত্রটি প্রবেশ করান। এরপর যন্ত্রটির মাধ্যমে একটি তরল পদার্থ বা কার্বন ডাই-অক্সাইড জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়, সারফেস টা পরিস্কার করার জন্য এবং জরায়ুর অভ্যন্তর টা একটু পরিস্কার করার জন্য। হিস্টেরোস্কোপ যন্ত্রের মাথায় থাকা আলো এবং ক্যামেরার সাহায্যে জরায়ু এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব ভালো ভাবে লক্ষ্য করেন সেখানে কোনো সমস্যা আছে কি না, বা সার্জারীর আগে বা সময়ে ভালোভাবে সমস্যা লক্ষ্য করেন।

যদি হিস্টেরোস্কপি সার্জারীর জন্য করা হয়, তাহলে হিস্টেরোস্কোপ যন্ত্রের মাধ্যমেই জরায়ুর ভেতর সার্জারীর যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো হয়।

এই পদ্ধতিতে সাধারণত কোনো যন্ত্রণা হওয়া উচিত নয়, তবে এই পদ্ধতিটি চলার সময় ক্রাম্পিং বা টান লাগা জাতীয় অস্বস্তি হতে পারে। রোগীকে রিল্যাক্স করার জন্য চিকিৎসক কিছু সিডেটিভ জাতীয় ওষুধ রোগীকে প্রেস্ক্রাইব করেন। অ্যানাস্থেসিয়া কতক্ষনের জন্য প্রয়োজন হবে তা নির্ভর করে কি কারনে হিস্টেরোস্কোপি করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি পাঁচ মিনিটও লাগতে পারে বা তিরিশ মিনিটও লাগতে পারে। সময় টা নির্ভর করে হিস্টেরোস্কোপি কোন সমস্যার জন্য করা হচ্ছে সেই কারণে।

রোগ নির্ণয় এর জন্য যদি হিস্টেরোস্কোপি ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা সাধারণত চিকিৎসকের চেম্বারেই সাধারণ বা লোকাল অ্যানাস্থেসিয়ার মাধ্যমে পদ্ধতিটি করা হয়। ছোট ছোট পলিপ বাদ দেওয়ার জন্য এইভাবেই পদ্ধতিটি করা হয়। আর হিস্টেরোস্কোপি যদি কোনো বড় সার্জারীর জন্য করা হয় তাহলে তা হাসপাতালে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রেও চিকিৎসক জেনেরাল বা লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া ব্যবহার করে থাকেন, সার্জারী কতটা গভীর সেটার ওপর নির্ভর করে।

হিস্টেরোস্কপি হওয়ার পর সুস্থ হতে কত সময় লাগে?

সুস্থ হতে কতো সময় লাগবে তা নির্ভর করে কি কারণে হিস্টেরোস্কপি করা হচ্ছে। যদিও যেকোনো হিস্টেরোস্কপির পর রোগী যে যে অবস্থার সম্মুখীন হতে পারেন, তা হলো —

  • ক্রাম্পিং
  • হাল্কা রক্তপাত একদিনের জন্য
  • কাঁধে ব্যাথা (যদি কার্বন ডাই-অক্সাইড দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে)
  • হাল্কা বমিভাব
  • ঘুম ঘুম বা ঝিমুনি ভাব

হিস্টেরোস্কপির অব্যবহিত পরেই খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা যায়। লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া করা হলে, চিকিৎসকের চেম্বার থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই বেরিয়ে পরা যায়। রিজিওনাল অ্যানাস্থেসিয়া হলে, চিকিৎসক রোগীকে ততক্ষন অপেক্ষা করতে বলেন, যতক্ষন না অ্যানাস্থেসিয়ার লক্ষণগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে। জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়া হলেও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রোগী বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে পারেন। চিকিৎসক তখনই শুধুমাত্র সারা রাত হাসপাতালে থাকার নির্দেশ দেন যদি অ্যানাস্থেসিয়ায় রোগীর আগে থেকে কোনো সমস্যা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ব্যাথা কমানোর ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করেন তাড়াতাড়ি সুস্থতার জন্য। যদি সার্জারীর প্রয়োজন হয় তাহলে চিকিৎসক দু-তিন দিনের বিশ্রামের নির্দেশ দেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আগে। হিস্টেরোস্কোপি যদি শুধুমাত্র রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহারনা করা হয়, তাহলে এক সপ্তাহের জন্য যৌন সংসর্গ থেকে দূরে থাকতে হবে যাতে কোনো সংক্রমণ না হয়।

হিস্টেরোস্কপি করার পর কি কি সমসা হতে পারে ?

হিস্টেরোস্কপি একটি অত্যন্ত নিরাপদ পদ্ধতি এবং এর জটিলতা খুবই কম থাকে। তবে সাধারণ ভাবে না হলেও কিছু কিছু অস্বাভবিক জটিলতা দেখতে পাওয়া যায়—

  • সংক্রমণ
  • জরায়ুতে ক্ষত তৈরি হওয়া
  • অতিরিক্ত রক্তপাত
  • অ্যানাস্থেসিয়া বা জরায়ুর অভ্যন্তরের অংশ পরিস্কার করার জন্য ব্যবহৃত তরলের কারণে অ্যালার্জি

চিকিৎসকের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে, যদি এই লক্ষণগুলো দেখতে পাওয়া যায় —

  • অতিরিক্ত রক্তপাত
  • জ্বর
  • কাঁপুনি
  • যন্ত্রণা

চিকিৎসক বিভিন্ন কারণে হিস্টেরোস্কপি করার নির্দেশ দিতে পারেন। ভবিষ্যতের সুস্থতার জন্য ছোট খাটো সার্জারী বা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। রোগীর মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা সরাসরি চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করা উচিত তাহলে চিকিৎসক সমস্ত সন্দেহ দূর করে দেবেন।

হিস্টেরোস্কোপির সাধারণত কোনো বড় রকমের সাইড এফেক্ট থাকে না। তবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে সম্পূর্ণরূপে আলোচনা করে নিতে হবে। এই পদ্ধতির শেষে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।

Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago