প্রোবায়োটিকের উৎস এবং ভূমিকা

Published by

প্রোবায়োটিক অন্ত্রের ভিতরের সর্বোচ্চ স্তরের কোষগুলির সঙ্গে আটকে থাকে। অন্ত্রের এই স্তরের পুনর্গঠন, পুষ্টিশোষণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি গড়ে তুলতে সহায়তা করে ব্যাকটেরিয়াগুলি। মানবদেহে যত সংখ্যক কোষ আছে তার দশগুণ বেশি জীবাণু রয়েছে। শুধুমাত্র পাকস্থলী থেকে মলদ্বার পর্যন্ত এলাকায় বাস করে ১০০ ট্রিলিয়নেরও বেশি জীবাণু। মূলত অন্ত্রের ভিতরে থাকে এই বিপুল সংখ্যক জীবাণু। এছাড়া থাকে কিছু ফাঙ্গাস। এই বিরাট সংখ্যক ব্যাকটেরিয়ার বেশিরভাগই বন্ধু ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিক। এছাড়া কিছু রোগ সৃষ্টিকারী শত্রু ব্যাকটেরিয়াও থাকে।

একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে সেই সময় তার অন্ত্রে জীবাণু থাকে না। ব্রেস্টফিডিং করার কয়েকদিনের মধ্যেই কিছু প্রজাতির প্রোবায়োটিক তার অন্ত্রে বেড়ে উঠতে শুরু করে। এরপর বাচ্চাটি বড় হওয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে থাকে ও অন্ত্রে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিকগুলি আমাদের গৃহীত খাদ্যে ভাগ বসায় না। কিছু খাদ্য আমরা হজম কতে পারি না যেমন ফ্রুকটোঅলিগো স্যাকারাইড, গ্লুকোঅলিগো স্যাকারাইড, ইনুলিন ইত্যাদি। এই ধরনের খাদ্য খেয়েই এরা জীবনধারণ করে।

প্রোবায়োটিক কী ?

আমাদের শরীরে দু’ধরনের ব্যাকটিরিয়া থাকে— ভাল ব্যাকটিরিয়া ও খারাপ ব্যাকটিরিয়া। এই ভাল ব্যাকটিরিয়াই হল প্রোবায়োটিক। ইনটেস্টাইনে এই দু’ধরনের ব্যাকটিরিয়ার সর্বক্ষণ যুদ্ধ চলে। খারাপ ব্যাকটিরিয়া জিতে গেলেই শরীর খারাপ আর উপকারী ব্যাকটিরিয়া জিততে থাকলে সুস্থ থাকা যায়। এই ভাল ব্যাকটিরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে প্রোবায়োটিক। গাট অর্থাৎ কোষ্ঠের স্বাস্থ্য রক্ষা করাও এর অন্যতম কাজ।

প্রোবায়োটিকের উৎস

প্রোবায়োটিকের অন্যতম প্রধান উৎস হল দুধ। বিশেষ করে গেঁজানো দুধ বা দুগ্ধজাত বস্তু। বিভিন্ন প্রজাতির প্রোবায়োটিকগুলির উপকারী ভূমিকাও বিভিন্ন ধরনের। অন্ত্রে প্রোবায়োটিকগুলি যত কার্যকরী হয় ততই অন্ত্রের ভিতরের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ভিটামিন তৈরি হয়, বাইল, অ্যাসিডের দ্বারা খাদ্যের পরিপাক ভালো হয়।

প্রোবায়োটিকের ভূমিকা

প্রোবায়োটিক খাদ্যের মধ্যে থাকা শ্বেতসারকে গেঁজিয়ে তোলে। প্রোটিন এবং জটিল চর্বিজাতীয় পদার্থকে ভেঙে দেয়। এরা ল্যাকটোজ থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। এর ফলে দুধের প্রোটিন হজম করা সহজ হয়। এছাড়া এরা ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ শোষণে এবং বি-গ্রুপের ভিটামিন তৈরিতে সহায়তা করে। খাদ্য হিসেবে প্রোবায়োটিক যা গ্রহণ করে তা থেকে অসংখ্য ধরনের বিপাকীয় বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলি আমাদের খাদ্য পরিপাক, পুষ্টি শোষণ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

প্রোবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের ভিতরে বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি করে, ফলে রোগ সৃষ্টিকারী শত্রু ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। কোনও কোনও প্রোবায়োটিক ভাইরাসকেও অকেজো করে দেয়। ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি বিষকেও অকেজো করে দিতে বিশেষ ভূমিকা নেয় প্রোবায়োটিক।

প্রোবায়োটিকের অন্যান্য কাজ

1. শিশুর ডায়ারিয়ার পিছনে মূলত দায়ী থাকে রোটা ভাইরাস এবং ইকোলি। প্রোবায়োটিক এই ধরনের ডায়ারিয়া হতে বাধা দেয় এবং রোগ দেখা দিলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য সহায়তা করে।

2. বৃহদন্ত্রে বহু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে যারা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান তৈরি করে। কিছু প্রোবায়োটিক এদের সংখ্যা কমাতে সক্ষম। রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি চিকিৎসা চলছে এমন রোগীর পেটের ও শরীরের সুস্থতা রক্ষার ক্ষেত্রেও প্রোবায়োটিক উপকারী ভূমিকা নেয়। নিয়মিত প্রোবায়োটিকযুক্ত খাদ্য খেলে তা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলী, লিভার, মূত্রাশয়, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ইউটেরাসের ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রোবায়োটিকের বিশেষ ভূমিকা দেখা গিয়েছে।

3. শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জিজনিত রোগ যেমন অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদির প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে প্রোবায়োটিক বিশেষ ভূমিকা নেয়।

4. মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে প্রোবায়োটিক।

5. ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণেও প্রোবায়োটিক সাহায্য করে। হতে পারে।

6. লাইফস্টাইল ডিজিজ যেমন স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থের বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে প্রোবায়োটিক।

7. মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও প্রোবায়োটিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। আমাদের লালায় বিভিন্ন বন্ধু ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরা দাঁতের ওপরে নিজেদের আটকে নেয়। এর ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের তেমন সুযোগ পায় না। এরা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করতে পারে এমন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে। এই প্রোবায়োটিকগুলির মধ্যে যথেষ্ট ক্যালশিয়াম থাকে। ফলে এই ক্যালশিয়াম দাঁতের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করে।

8. অ্যান্টিবায়োটিক খেলে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে ভালো ব্যাকটেরিয়াও মারা পড়ে। এমন ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে পেটের গোলমাল সারাতে সাহায্য করে প্রোবায়োটিক।

মনে রাখবেন, প্রতিদিন লাঞ্চে পাতে একবাটি টক দই রাখলে শরীরে প্রোবায়োটিকের সংখ্যা বাড়বে। রোজ খাবারে টক দই তো রাখাই যায়। বাটারমিল্কও খেতে পারেন। এতেও প্রোবায়োটিক থাকে ভাল পরিমাণে। টক দই দিয়ে লস্যি বা ঘোল বানিয়েও খাওয়া যায়। কিছু ধরনের চিজেও প্রোবায়োটিক থাকে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago