ম্যালেরিয়া রোগের কারণ, প্রতিরোধের উপায় ও চিকিৎসা

Published by

ম্যালেরিয়া রোগের কারণ হল প্লাজমোডিয়াম নামক এক প্রকার পরজীবী যা সাধারণত সংক্রামিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস (Anopheles) মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই সংক্রমিত মশা যখন কোনও ব্যাক্তিকে কামড়ায় তখন পরজীবীটি তার রক্তে ​​প্রবেশ করে এবং লিভারে গিয়ে বাসা বাঁধে। সেখানে এই পরজীবীগুলি ধীরে-ধীরে পরিণত হয়, এর কয়েকদিন পর পরিণত পরজীবীগুলি রক্তবাহে বাহিত হয়ে রক্তের লাল রক্ত কণিকাগুলি সংক্রমিত করতে শুরু করে, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরজীবীগুলি লাল রক্ত কণিকার মধ্যেই দ্রুত বংশবিস্তার শুরু করে এবং সেই লাল রক্ত কণিকাটি ধ্বংস করে। ক্রমাগত একই রকম ভাবে এরা ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে যে কারণে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলি ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরাবৃত হয়।

ম্যালেরিয়া রোগের কারণ

আগেই বলা হয়েছে ম্যালেরিয়া রোগের কারণ হল প্লাজমোডিয়াম নামক এক প্রকার পরজীবী। এই প্লাজমোডিয়াম পরজীবীটি চার রকমের- Plasmodium vivaxPlasmodium OvalePlasmodium Malariae, এবং Plasmodium falciparum. এই চারটির মধ্যে Plasmodium falciparum  সর্বাধিক ক্ষতিসাধন করতে সমর্থম্যালেরিয়া মূলত রক্তের সংক্রমণের ফলেই ছড়ায়, এটি বিভিন্ন ভাবে হতে পারে যেমন-

  • অঙ্গ প্রতিস্থাপন
  • সংক্রমিত মশার কামড়
  • সংক্রমিত রক্তের প্রতিস্থাপন
  • সংক্রমিত সুচ বা নিডল

এছাড়াও কোনও গর্ভবতী মা যদি সংক্রমিত হন তাহলে তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকালীন সময়ে সন্তানের মধ্যে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করতে পারে

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণগুলি কি?

ম্যালেরিয়ার রোগের লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের ১০দিন থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পেতে থাকে, তবে কিছু ধরণের ম্যালেরিয়া পরজীবী মানব শরীরে এক বছর অবধি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। ম্যালেরিয়া আক্রমন সাধারণত কাঁপুনি দিয়ে শুরু হয় এরপর তীব্র জ্বরের পরে ঘাম এবং পুনরায় সাধারণ তাপমাত্রায় ফিরে আসে।  ম্যালেরিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে

  • কাঁপানো শীত
  • মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
  • অতিরিক্ত ঘাম
  • মাথা ব্যাথা
  • বমি বমি ভাব এবং বমি
  • পেটে ব্যথা
  • পেট খারাপ
  • পায়খানার সঙ্গে রক্ত
  • মাংসপেশিতে ব্যথা

ম্যালেরিয়া দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করালে সমস্যা গম্ভীর হতে পারে। রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যাওয়া, রক্তল্পতা, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া এমনকি মস্তিষ্কেও ভীষণ রকমভাবে প্রভাব ফেলতে পারে এই ম্যালেরিয়া।

ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা

প্রথমে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার প্রকৃতি অর্থাৎ কোন ধরনের পরজীবীর আক্রমণে ম্যালেরিয়া রোগটি সংগঠিত হয়েছে তা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত Quinine, Chloroquine এবং Doxycycline জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। যদি ম্যালেরিয়ার কারণ P. falciparum সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হয়

ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধ কি ভাবে করবেন?
  • প্রচুর জনবহুল আবাসিক অঞ্চলগুলি এড়িয়ে চলুন
  • লম্বা হাতা শার্ট এবং প্যান্ট মোজা মধ্যে পরুন
  • খোলা জানালায় mosquito net লাগান।
  • বাড়ির আসে পাশে জমা জল থাকলে পরিষ্কার করুন।
  • রাত্রে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন
  • মশা তাড়ানো ক্রিম বা ধুপ ব্যাবহার করুন

বেশ কিছু বছর আগে থেকেই ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে টীকার ৩টি ট্রায়াল শুরু করা হয়েছিল যার ফলাফল আশাপ্রদ। আগামী ভবিষ্যতে হয়ত টিকার মাধ্যমে এই ভয়াবহ রোগটির প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago