Categories: চর্মরোগ

সোরিয়াসিসের চিকিৎসা (Psoriasis) ও নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কি ?

Published by

সোরিয়াসিস  কি? ( What is Psoriasis )

 সোরিয়াসিস হল এক রকম জটিল অটোইমিউন ডিসঅর্ডার এবং সোরিয়াসিসের চিকিৎসাও বেশ জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি হয়। এই রোগে ত্বকের কোষ খুবই দ্রুত সৃষ্টি হতে থাকে, একটা কোষের আয়ু শেষ হওয়ার পূর্বেই নতুন কোষ সৃষ্টি হওয়ায় আক্রান্ত স্থানটিতে মাছের আঁশের মতন স্তর সৃষ্টি হয় । নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে ত্রিশোর্ধ্বরা বেশি আক্রান্ত হন। দেখা গেছে পৃথিবীর ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।

সোরিয়াসিস কি সংক্রামক ?- Is Psoriasis contagious ?

একদমই নয়।  সোরিয়াসিস কোনোভাবেই সংক্রামক রোগ নয়।  এটি কোনও ভাইরাস বা  ব্যাকটিরিয়ার  কারণে হয় না। কাজেই এটি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।  

সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি কি ? – Symptoms of  Psoriasis

প্রত্যেক রুগীর একই লক্ষণ দেখা দেবে তা নয়। সোরিয়াসিসের উপসর্গ বা লক্ষণগুলির ধরণ ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর কনুই, হাঁটু, মাথার তালু, হাত ও পায়ের নখ আবার কখনও কখনও সারা দেহের ত্বকের ওপর লাল চাকা চাকা হয়ে যায়। এই লাল চাকাগুলিতে মাছের আঁশের মতন আস্তরণের সৃষ্টি করে ও ভীষণ চুলকানি হয়। হাতের নখে হলে নখ মোটা ও রঙ নষ্ট হয়ে যায়। কখনও কখনও চামড়া থেকে নখ আলগা হয়ে বেরিয়ে আসে। কোন কোন সময় আক্রান্ত জায়গা গুলি অতিরিক্ত শুকিয়ে ফাটল ধরার কারণে বা চুলকানির জন্য  ত্বক থেকে রক্তপাত হতে থাকে।

আক্রান্ত অংশ গুলি ফুলে ফুলে যায়।

নখের জয়েন্ট গুলি ফুলে ফুলে যায় ও যন্ত্রণা হয়। গাঁট ফুলে গিয়ে বিকৃত আকার ধারণ করে। এই রকমের উপসর্গ সোরিয়াটিক আর্থারাইটিসের লক্ষণ।

সোরিয়াসিসের এই সমস্যাগুলি সবসময় একই থাকে তা নয়, বেশ কিছুদিন অন্তর বাড়ে অথবা কমে।

সোরিয়াসিস কি কি কারণে হয়? – What causes Psoriasis ?

  সোরিয়াসিসের কারণ এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে বহু বিজ্ঞানীদের বহুদিনের সাধনা ও গবেষণার ফল হিসাবে প্রধান দুটি ফ্যাক্টর বা কারণ পাওয়া গিয়েছে। 

১। ইমিউন সিস্টেম

   সোরিয়াসিস হওয়ার প্রধান একটি কারণ হলো মানবদেহের অতিসক্রিয় ইমিউনিটি। অর্থাৎ আমাদের শরীরের যে রোগ প্রতিরোধক তন্ত্রটি রয়েছে তার অতি সক্রিয়তার কারণে সেটি আমাদের ত্বকের কোষগুলির উপর অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে এবং এই রোগের সৃষ্টি করে। তাই এটিকে অটোইমিউন ডিসঅর্ডারও বলা হয়।

২। জিনগত সমস্যা

আর একটি মুল কারণ হল জিনগত বা বংশগত সমস্যা। কিছু ব্যাক্তি তাদের জিনেই সোরিয়াসিসের কারণগুলি বহন করে। কারও পরিবারে যদি  এই সমস্যা থেকে থাকে, তার  সোরিয়াসিসের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশী। ন্যাশানাল সোরিয়াটিক ফাউনডেশানের (NPF) মতে,  মোট  সোরিয়াটিক রোগীর ২ থেকে ৩ শতাংশ জিনগত ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়াও  আরও বিভিন্ন কারণে যেমন –

  • যে কোন রকমের দুর্ঘটনায় ত্বক ছিলে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, এই ধরনের পরিবেশগত দুর্ঘটনা কিন্তু সোরিয়াসিস সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান ও এর জন্য দায়ী হতে পারে। এমনকি অ্যালকোহল ওষুধের কার্যকারিতাও কমিয়ে দেয়।
  • ধুমপান পাসচুলার সোরিয়াসিসের (Pustular Psoriasis) সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। এটি আপনার হাতের তালু এবং পায়ের তলায় আক্রমণ করে।
  • কিছু কিছু ওষুধ, যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ, লিথিয়াম, কর্টিকোস্টেরোইড ইত্যাদি
  • কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে সোরিয়াসিস  পারে। তাই কোন ওষুধ গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
সোরিয়াসিসের রোগ নির্ণয় কি ভাবে করা হয়?

চিকিৎসকরা চোখে দেখেই সোরিয়াসিস চিহ্নিত করতে পারেন তবে সোরিয়াসিসের প্রকৃতি ও তার সঙ্গে আরও কোনও রকম জটিলতা আছে কি না জানতে স্কিন বায়োপসি করা হয়।  

সোরিয়াসিসের চিকিৎসা কি ?

প্রথমেই বলে রাখই, এই রোগের উপসর্গ দেখা মাত্রই একজন ত্বক-বিশেষজ্ঞ বা ডারমাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। ফেলে রাখা উচিত নয় কোনভাবেই। এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ।

১। এই রোগের চিকিৎসায় কিছু ভিটামিন ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও তার সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার লোশন এর ব্যাবহার করা হয়।

২। একধরনের UV Ray (Ultraviolet Ray) প্রয়োগ করেও এর চিকিৎসা করা হয়, একে ফোটোথেরাপি বলা হয়।

যেহেতু একটা ক্রনিক প্রবলেম তাই ধৈর্য ধরতে হবে। সমস্যাটি বুঝতে, আপনার ত্বকের ধরন বুঝতে, এবং আপানরা দ্বারা গৃহীত ওষুধের আপনার শরীরে কিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে সেটি অনুধাবন করতেও একজন চিকিৎসকের বেশকিছু সময় লাগে । অতএব ধৈর্য হারালে চলবে না।

সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কি ?

এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল কারণ গুলিকে রোধ করা। সোরিয়াসিস থেকে দূরে থাকতে যে যে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে –

  • খাসির মাংস বা রেড মিট খেলে রোগের তীব্রতা বাড়ে। তবে মুরগীর মাংস খাওয়া যেতে পারে। টক ফল ছাড়া প্রচুর শাকসব্জী ও ফল খেতে হবে। প্রচুর জল খেতে হবে।
  • স্নান করার সময় আক্রান্ত স্থানে হাত না দিয়ে বরং হালকা ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত স্নান করতে হবে। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিষ্কার জামাকাপড় পরে থাকতে হবে।
  • মাত্রাতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
  • ত্বক কোনভাবেই শুষ্ক রাখা যাবে না। এর জন্য মইয়েসচারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
  • দুশ্চিন্তা, রাগ, মানসিক চাপ কমাতে হবে। সবসময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত, উত্তেজক খাদ্য থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • মদ্যপান, ধুমপান বর্জন করতে হবে।
  • ক্ষারীয় সাবান বর্জন করতে হবে।
  • প্রতিদিন ব্যায়াম ও ভোরে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

Kathakali Poddar

Hi! I am Kathakali! I am a Graduate of Science, where I majored in Botany. Currently, I am living in Kolkata. I can offer my readers a platform to source answers, knowledge, opinion, support, and/or guidance. I will add my research, opinion, and such to the larger wealth of health information.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago