লুপাস একটি ক্রনিক (দীর্ঘ মেয়াদি) অটোইমিউন ডিজিজ, যা সারা শরীরে প্রদাহর সৃষ্টি করে। অটোইমিউন ডিজিজে শরীরের নিজস্ব ইমিউনিটি সিস্টেমই শরীরে প্রদাহ এবং কোশের ভাঙনের জন্য দায়ী থাকে।
অধিকাংশ মানুষই লুপাসের খুব মাইল্ড ফর্মটিতে ভোগেন, কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে এটি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে লুপাসের কোনো চিকিৎসা নেই, তাই এই রোগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রোগ লক্ষণ কমানোর দিকেই চিকিৎসকরা মনোযোগ দিয়ে থাকেন।
লুপাস চার প্রকারের হয়ে থাকে—
সিস্টেমিক লুপাস এরিথিমেটোসাস (SLE)— এটি লুপাসের সবথেকে সাধারণ প্রকার। এটি শরীরের অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং তাদের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই লুপাস কিডনি, ত্বক, অস্থিসংযোগ, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
SLE মাইল্ড থেক সিভিয়ার হতে পারে। এর রোগ লক্ষণ সময়ের সাথে সাথে বাড়তে পারে এবং কমতে পারে। যখন রোগ লক্ষণ বেড়ে যায়, সেই সময়টাকে ফ্লেয়ার বলে এবং রোগ লক্ষণ কমার সময়টাকে রেমিসন্স বলা হয়।
কিউটেনিয়াস লুপাস — এই ধরণের লুপাস সাধারণত ত্বকেই হয়ে থাকে। এর থেকে ত্বকে র্যাশ এবং স্থায়ী ক্ষত এবং তার থেকে স্থায়ী দাগ তৈরি হয়। কিউটেনিয়াস লুপাস আবার নানা রকমের হয়। যেমন :
১)অ্যাকিউট কিউটেনিয়াস লুপাস — এর ফলে নাকে এবং গালে লাল রঙের র্যাশ তৈরি হয়। একে “বাটারফ্লাই র্যাশ” বলে।
২)সাবঅ্যাকিউট কিউটেনিয়াস লুপাস — এই ধরনের লুপাসে লাল রঙের র্যাশ তৈরি হয়, যা ফোলা এবং আঁশের মতো হয়ে থাকে। ত্বকের যে অংশগুলো সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে সেই অংশই এই লুপাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৩) ক্রনিক কিউটেনিয়াস লুপাস — এই ধরনের লুপাসে লাল বা বেগুনি রঙের র্যাশ হয়। এর ফলে ত্বকের রঙের বদল ঘটে, দাগ হয় এবং চুল উঠে যায়।
অ্যাকিউট কিউটেনিয়াস লুপাস ত্বক সহ শরীরের অন্যান্য অংশকে আক্রান্ত করে এবং সাবঅ্যকিউট এবং ক্রনিক কিউটেনিয়াস লুপাস শুধুমাত্র ত্বককে আক্রান্ত করে।
নিওন্যাটাল লুপাস — এটি খুবই রেয়ার এবং সেইসব সদ্যজাতর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, যাদের জন্মদাতা বাবা মা’র শরীরে এই ধরনের অটোইমিউন অ্যান্টিবডি থাকে। এই অটোইমিউন অ্যান্টিবডি প্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রূণের শরীরে প্রবেশ করে। মা বাবার অটোইমিউন অ্যান্টিবডি থাকলেই যে লুপাসের রোগ লক্ষণ থাকবে তা নয়। যেসব মায়েরা নিওন্যাটাল লুপাসযুক্ত শিশুর জন্ম দেয় সেইসব মায়েদের ভেতর প্রায় ২৫% ক্ষেত্রেই লুপাসের রোগ লক্ষণ থাকে না, তবে এদের মধ্যে ৫০% মায়েদের তিন বছরের ভেতর শরীরে লুপাসের রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এর রোগ লক্ষনগুলো হল —
কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে লুপাসের কারণে হার্টের সমস্যা তৈরি হলেও বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই রোগ লক্ষণ কয়েক মাসের ভেতর আর থাকে না।
যদি আপনার এই ধরনের অ্যান্টিবডি থাকে তাহলে আপনার গর্ভাবস্থায় আপনাকে গভীর তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। আপনার চিকিৎসকদের ভেতর থাকবেন একজন রিউমাটোলজিস্ট এবং একজন হাই রিস্ক অবস্টেট্রিশিয়ন।
ড্রাগ ইনডিউসড লুপাস — কিছু কিছু প্রেসক্রিপশন ওষুধ ড্রাগ ইনডিউসড লুপাসের জন্য দায়ী। এছারাও যে ওষুধগুলি দায়ী এর মধ্যে কিছু কিছু হল —
যে ওষুধের জন্য ড্রাগ ইনডিউসড লুপাস শুরু হয়, সেইসব ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কিছু সপ্তাহের ভেতরই ড্রাগ ইনডিউসড লুপাস বন্ধ হয়ে যায়।
লুপাসের রোগ লক্ষণ সাধারণত শুরু হয় অ্যডালহুড থেকে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের ভেতর যেকোনো সময় এটা হতে পারে। একদম প্রথম দিকের কিছু রোগ লক্ষণ হল— ক্লান্তি, জ্বর, র্যাশ, অস্থিসন্ধিতে ফোলা ও ব্যাথা ভাব, মুখের ভেতর শুকনো ভাব বা শুকনো চোখ, চুল উঠে যাওয়া, বিশেষ করে জায়গায় জায়গায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া, যাকে অ্যালোপেশিয়া বলা হয়, ফুসফুস, কিডনি ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাকে সমস্যা। এই ধরনের রোগ লক্ষণ লুপাস ছাড়াও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। তাই রোগ লক্ষনগুলি লুপাসের ফলে হয়েছে কি না, তা কেবলমাত্র চিকিৎসকের মাধ্যমেই জানা যেতে পারে।
লুপাস রোগের লক্ষণ নির্ভর করে শরীরের কোন অঙ্গটা আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লুপাসে আক্রান্ত হতে পারে, যেমন — অস্থিসন্ধি, ত্বক, হৃদপিণ্ড, রক্ত, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, কিডনি ইত্যাদি। লুপাসের সবথেকে সাধারণ কয়েকটি লক্ষন হল —
অতিরিক্ত সূর্য রশ্মি সবার জন্যই খারাপ, এবং লুপাসে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষেরই ফটোসেন্সিটিভিটি আছে। এই ক্ষেত্রে সূর্যের uv – ray তেই সমস্যা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লুপাসে আক্রান্ত মানুষদের রোগ লক্ষণ সূর্যের আলোয় আরো বেড়ে যায়, যেমন —
লুপাসে আক্রান্ত রোগীর বাড়ির বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই সান প্রোটেকশন জামা কাপড় এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
এখনও পর্যন্ত লুপাসের নিরাময় হয়নি, তবে চিকিৎসার সাথে সাথে এর রোগ লক্ষণগুলি কমানো যায়। লুপাসের চিকিৎসায় যে যে বিষয়গুলির ওপর লক্ষ্য রাখা হয়, সেগুলো হল —
এইমুহুর্তে যদিও লুপাসের কোনো চিকিৎসা নেই, কিন্তু লুপাসের রোগ লক্ষণ কে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় চিকিৎসার মাধ্যমে। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। লুপাসের রোগ লক্ষণ সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গেলে এই বদলে যাওয়া রোগ লক্ষনের নতুন কি চিকিৎসা হবে, তা তিনি সহজেই নির্ধারণ করতে পারেন। ওষুধ ছাড়াও চিকিৎসক জীবন ধারণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করেও রোগ লক্ষণ কে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেন, যেমন — ইউ.ভি লাইটে অধিক সময় ধরে থাকা বন্ধ করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং ফিস অয়েল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা, নিয়মিত এক্সারসাইজ করা, ধূমপান করলে তা শীঘ্র বন্ধ করা।
লুপাসে কি ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হবে, তা নির্ভর করে, রোগ লক্ষণ ও তার গভীরতার ওপর। ওষুধ লুপাসের রোগ লক্ষনগুলো কে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন —
২০১৯ এর সমীক্ষা অনুযায়ী লুপাসের কিছু কিছু ওষুধ হল—
লুপাস রোগের ডায়েট
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ খেলে তার পরিমাণের ওপর নজর রাখতে হবে, কারণ এই ধরনের মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া অ্যালকোহল, আলফালফা, উচ্চ মাত্রায় লবণ ও কোলেস্টেরল যুক্ত খাদ্য বাদ দিতে হবে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment