প্রোস্টেট সার্জারিতে কোনটা ভালো ? ওপেন নাকি মাইক্রোসার্জারি?

Published by

একজন পুরুষের মূত্রনালীর উপরে ৪ সেন্টিমিটার মতো জায়গা জুড়ে থাকে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সঙ্গে মূত্রনালীর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ আছে। সময়মতো মূত্র নালী পথে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড থেকে বিভিন্ন ধরনের ফ্লুইড বেরিয়ে আসে। মূলত সেক্সুয়াল ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করা এই গ্রন্থির কাজ। সিমেনের ৩০ শতাংশ উপাদান তৈরি করা ছাড়াও সিমেনের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড। এছাড়া স্পার্মের গঠনে সাহায্য করে। সংক্রমণ প্রতিরোধী কিছু উপাদানও তৈরি করে এই গ্রন্থি।

যৌবনের প্রারম্ভে প্রোস্টেট গ্লান্ড আকারে ছোট থাকে। এরপর ক্রমশ প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড আকারে বড় হতে থাকে। যৌবনে গ্ল্যান্ডটির মাপ হয় ৩ সেমি। চওড়ায় ৪ সেমি। ওজন হয় মোটামুটি ১৫ থেকে ১৮ গ্রাম। গ্ল্যান্ডটি দেখতে হয় অনেকটা কাঠবাদামের মতো।

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা

ষাটোর্ধ্ব মানুষের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬০ জনেরই প্রোস্টেটের অতিরিক্ত বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়। তবে কম বয়সেও এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হন অনেকে।

রোগ লক্ষণ

ইউরিন বা মূত্র পাস করার সময় মনে হয় কোনও বাধা আছে। বারবার ইউরিন যেতে হয়। ইউরিনের ফ্লো বা ধারা কমে যায়। ক্রমশ প্রস্রাব ধরে রাখা অসম্ভব মনে হয়। ক্লিনিকাল একজামিনেশন করে বোঝা যায় প্রস্টেট আদৌ বড় হয়েছে কি না। এছাড়া ডিজিট্যাল রেকটাল একজামিনেশন করে জেনে নেওয়া যায় সমস্যা বিনাইন নাকি ম্যালিগনেন্ট। প্রোস্টেট বড় হলে ওষুধের সাহায্যে রোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তবে দরকার পড়লে সার্জারি করাতে হয়। আর সার্জারির কথা উঠলেই বেশিরভাগ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন উঠে আসে, আর তা হল কী করলে ভালো হয়— মাইক্রো নাকি ওপেন সার্জারি?

মাইক্রোসার্জারি কী?

বর্তমানে বেশিরভাগ প্রোস্টেট অপারেশন করা হয় মিনিম্যালি ইনভেসিভ পদ্ধতি বা মাইক্রোসার্জারি করে। যে পথে ইউরিন বেরয়, সেই পথে, একটি বিশেষ প্রোব বা যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটিকে অপারেশন করে বের করা হয়। প্রোবের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয় অপারেশনের যন্ত্রপাতি এবং ক্যামেরা। মাইক্রোসার্জারিতে কুরে কুরে প্রোস্টেট গ্লান্ডটিকে বের করে আনা হয়।

প্রশ্ন হল মাইক্রোসার্জারিতে যখন অপারেশন হয়েই যাচ্ছে তখন কেন ওপেন সার্জারি করতে হবে? তাছাড়া আজকাল কোনও রোগীই ওপেন সার্জারি করতে চান না! ঠিক কথা। তাই বলে ওপেন সার্জারি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।

কখন ওপেন সার্জারি করা হয় ?

আমরা সকলেই জানি, শরীরের কোনও অংশে সামান্য ক্ষত তৈরি হলেই রক্তপাত হতে থাকে। মাইক্রো সার্জারিতে প্রোস্টেট গ্লান্ডকেও কুরে বের করার সময় রক্ত বেরতে থাকে। এর ফলে ক্যামেরার সাহায্যেও কিছু দেখা সম্ভব হয় না। তাই ক্রমাগত জল দিয়ে রক্ত ধুয়ে দেওয়া হয়। এই জলের একটা অংশ শরীরে শোষিত হতে থাকে। খুব বড় প্রোস্টেট হয়ে গেলে অপারেশনের সময় জলও বেশি দিতে হয়। অর্থাৎ জল শোষিতও হয় বেশি। শোষিত জলের মাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলে সেখান থেকে হার্টের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। এখন গড়ে ১ গ্রাম প্রোস্টেট বের করতে মোটামুটি ১ মিনিট সময় লাগে। অতএব ১২৫ গ্রাম প্রস্টেট বের করতে ১২৫ মিনিট সময় লাগার কথা। এদিকে চিকিৎসা শাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের অপারেশন ৯০ মিনিটের মধ্যেই শেষ করা দরকার। এখন ৯০ মিনিটে কোনও রোগীর ৯০ গ্রাম প্রোস্টেট বের করা হলে বাকি থেকে যাবে ৩৫ গ্রাম প্রোস্টেট। এমতাবস্থায় অপারেশন থামিয়ে দিলে ওই বাকি থাকা ৩৫ গ্রাম প্রোস্টেট থেকে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

প্রোস্টেট সার্জারিতে কোনটা ভালো ? ওপেন নাকি মাইক্রোসার্জারি?

অতএব কোনও ইউরোসার্জেন ওপেন সার্জারি করার কথা বলছেন মানে এমন নয় যে যে তিনি মাইক্রোসার্জারি পারেন না বলে ওপেন সার্জারির পক্ষে সওয়াল করছেন। মূল বিষয়টা হল, রোগীর সুরক্ষা। রোগীর প্রাণ বাঁচানোই সবসময় প্রাধান্য পায় একজন চিকিৎসকের কাছে।  অর্থাৎ মাইক্রোসার্জারি করার সময় রোগীর শরীরে যদি বেশি জল শোষিত হয়ে যায় তাহলে তা হার্ট ফেলিওরের কারণ হতে পারে, আবার ফুসফুসেও জল জমে যেতে পারে। প্রাণ নিয়ে পড়ে যেতে পারে টানাটানি। এই কারণেই প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড খুব বেশি বড় হয়ে গেলে ওপেন সার্জারিই সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে মাইক্রোসার্জারিরও পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে লেজার প্রোস্টেটেকটমি বা স্যালাইন টিইউআরপি-এর কথা বলা যায়। স্যালাইন দিয়ে রক্ত ধুয়ে অপারেশন করলে কিন্তু সার্জারির সময় কাল বেড়ে যায়। সাধারণ মাইক্রোসার্জারিতে যেখানে ৯০ মিনিট সময় পাওয়া যায়, স্যালাইন টিইউআরপি পদ্ধতিতে আরও ৩০ মিনিট সময় বেশি পাওয়া যায়। তবে প্রোস্টেট গ্লান্ড যদি অনেকখানি বড় হয় এবং বাড়তি ৩০ মিনিটের মধ্যেও যদি অস্ত্রোপচার শেষ না করা যায় তাহলে তো অপারেশন করারই কোনও অর্থ থাকে না! মাইক্রোসার্জারি হোক বা ওপেন— প্রোস্টেট সার্জারির প্রোস্টেট  গ্ল্যান্ডটি বড় হয়ে ইউরিনে বাধা সৃষ্টিকারী প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডটিকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া। সামান্য অংশও রয়ে গেলে পরবর্তীকালে তা রোগীর শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতএব কোন পদ্ধতিতে সার্জারি করলে রোগী সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ থাকবেন তার সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

Dr. Kaushik Sarkar

Dr. Kaushik Sarkar is one of the Best Urologist & Uro-Oncologist in South Kolkata. He has an experience of more than 20 Years in this field as Best Urology Doctor. He completed MBBS from CNMC in 2002,MS - Urology from (IPGMER, SSKM Hospital), Kolkata in 2009 and MCh - Urology from (IPGMER, SSKM Hospital), Kolkata in 2014. Dr. Sarkar's special field of interest includes Minimally Invasive Urology, UroOncology and Laparoscopic Urology as Best Laparoscopic Surgeon in Kolkata.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago