প্রস্টেটাইটিস কি ? এর লক্ষণ ও চিকিৎসা কি ?

Published by

প্রস্টেটাইটিস কি?

প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে প্রদাহ তৈরি হলে তখন তাকে প্রস্টেটাইটিস বলে। প্রস্টেটাইটিস অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। এই অসুখে ইউরিন পাস করাও কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। কুঁচকি, পেলভিক অংশ, যৌনাঙ্গেও দেখা দেয় যন্ত্রণা। সাধারণত প্রস্টেস্ট গ্ল্যান্ডে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধলে সেখান থেকে হতে পারে প্রস্টেটাইটিস। তবে সবসময় যে ব্যাকটেরিয়াই দায়ী থাকে এমন নয়।

প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের অবস্থান ঠিক কোথায়?

আখরোটের আকারের প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি থাকে পুরুষদেহের মূত্রথলির ঠিক নীচে। ব্লাডার থেকে ইউরেথ্রা পর্যন্ত যে নলগুলি থাকে তার বেশিরভাগ অংশকে ঘিরে থাকে প্রস্টেট। এজাকুলেশনের সময় সিমেন তৈরি করা সহ অন্যান্য নানা কাজ করে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড।

প্রস্টেটাইটিসের ধরন

মোটামুটি চার ধরনের প্রস্টেটাইটিস রয়েছে—

অ্যাকিউট ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস: হঠাৎ করেই প্রবল ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হতে পারে অ্যাকিউট ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস। ইউরিন ইনফেকশন থেকে প্রজননের জন্য দায়ী অঙ্গতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে হতে পারে অ্যাকিউট ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস।

ক্রনিক ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস: কোনও ব্যক্তির বারংবার ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস হলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি ক্রনিক ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে উপসর্গ তুলনামূলকভাবে কম যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রেও ধারণা করা হয়, অ্যাকিউট প্রস্টেটাইটিস-এর চিকিৎসা সঠিকভাবে না হলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ক্রনিক প্রস্টেটাইটিস/ ক্রনিক পেলভিক পেন সিনড্রোম: রোগীর শরীরে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মতো শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। মনে হয় সংক্রমণ থেকে এমন হয়েছে। অথচ পরীক্ষায় কোনও ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ ধরা পড়ে না। নানা কারণ দায়ী থাকতে পারে সমস্যাটির পিছনে। উদাহরণ হিসেবে পুরনো সংক্রমণ, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার গণ্ডগোল, মানসিক উদ্বেগ,হরমোনের ভারসাম্যের অভাব ইত্যাদি।

উপসর্গহীন ইনফ্লেমেটরি প্রস্টেটাইটিস: অনেক ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে প্রদাহ থাকলেও কোনও লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। তাই কিছু কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া দরকার।

• ইউরিন পাসের সময় প্রস্রাবের দ্বারে জ্বালা ভাব অনুভূত হওয়া।

• ইউরিন পাস করতে কষ্ট। থেমে থেমে ইউরিন বেরোয়।

• বারবার ইউরিনের বেগ চাপে। বিশেষ করে রাতে।

• প্রস্রাবের বেগ চাপলে মনে হয় ইউরিন ধরে রাখতে পারা যাবে না।

• ইউরিনের সঙ্গে ব্লাড বেরোয়।

• পেট, কুঁচকি অথবা পিঠের নীচের অংশে ব্যথা।

• পেনিস এবং টেস্টিকলস-এ অল্প অল্প ব্যথা।

• এজাকুলেশনের সময় ব্যথা।

• জ্বর, শীত ভাব, পেশির ব্যথা এবং ফ্লু-এর মতো অন্যান্য উপসর্গ।  

প্রস্টেটাইটিসের আপৎকালীন পরিস্থিতি

• প্রস্রাব আটকে যাওয়া।

• প্রস্রাবের সময় তীব্র এবং অসহ্য ব্যথা। সঙ্গে জ্বর।

• ইউরিনের সঙ্গে রক্ত বেরনো।

• পেলভিক অংশে এবং যৌনাঙ্গে তীব্র যন্ত্রণা।

কাদের ঝুঁকি বেশি

• যুবক ও মধ্যবয়সি পুরুষের মধ্যে প্রস্টেটাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

· এইচআইভি সংক্রমণ অথবা এইডস থাকলে ।

· দীর্ঘদিন ইউরিনারি ক্যাথিটার পরতে হলে।

প্রস্টেটাইটিসের জটিলতা

·  রক্তে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।

· টেস্টিসের পিছনে শুক্রাণু বহনকারী যে টিউব থাকে সেখানে প্রদাহ হতে পারে এবং সেই  টিউব ফুলে যেতে পারে। এই সমস্যাকে এপিডিডাইমাইটিস বলে।

· প্রস্টেটে পুঁজ জমার আশঙ্কা থাকে।

· আপার পেলভিক অস্থি কিংবা স্পাইনের নীচের দিকে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে।

· বারবার সংক্রমণ হলে রোগী অবসাদগ্রস্ত হতে পারেন।

· সেক্সুয়াল ডিসফাংশন দেখা দিতে পারে। স্পার্ম এবং সিমেনে অস্বাভাবিকত্ব দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা

সাধারণত চিকিৎসক রোগীর শারীরিক উপসর্গ সম্বন্ধে শুনে রোগ সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। তবে কিছু রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা করাতেও দিতে পারেন চিকিৎসক। উদাহরণ হিসেবে ডিজিটাল রেকটাম একজামের কথা বলা যায়। এই পদ্ধতিতে প্রস্টেটে কোনও প্রদাহ থাকলে তা ধরা পড়ে। এছাড়া রয়েছে ইউরিন টেস্ট। কিছু রক্তপরীক্ষা এবং পিএসএ বা প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট করেও প্রস্টেটের সংক্রমণ সম্পর্কে জানা সম্ভব।

চিকিৎসা

অ্যাকিউট এবং ক্রনিক ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স প্রলম্বিত হতে পারে। ইউরিন পাস করার সময় অস্বস্তি কমাতে আলফা ব্লকারের মতো ওষুধ দেওয়া হতে পারে রোগীকে। ক্রনিক পেলভিক পেন সিনড্রোমের রোগীকেও এই ধরনের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। রোগী মানসিক উদ্বেগে ভুগলে সেক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করার দরকার পড়তে পারে। বিশেষ করে যেক্ষেত্রে রোগীর ব্যথার পিছনে কোনও নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি বিশেষ কাজে আসতে পারে।

Dr. Bimalesh Purkait

Dr Bimalesh Purkait is one of the Best Urologist & Uro-Oncologist in Kolkata with an experience of more than 22 years. Dr Purkait completed MBBS (Kolkata), MS Surgery (AIIMS, Delhi), Gold Medalist, MCh Urologist. He has extensive training in the treatment of urological conditions, including prostate, kidney, bladder, and testicular cancers, as well as male infertility, erectile dysfunction, and urinary incontinence.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago