নারী বন্ধ্যাত্ব জানতে কি কি পরীক্ষা প্রয়োজন ?

Published by

বন্ধ্যাত্ব কখন বলা হবে ?

গত একবছর ধরে স্বাভাবিক শারীরিক মিলনের পরেও কোনও দম্পতির সন্তান না এলে তখন মনে করা হয় ওই দম্পতি বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। বন্ধ্যাত্ব-এর পিছনে একাধিক কারণ দায়ী থাকে। কয়েকটি ক্ষেত্রে স্ত্রীর কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন সন্তান আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তেমনই পুরুষের শারীরিক সমস্যাও দায়ী থাকতে পারে।

বন্ধ্যাত্ব জানার পরীক্ষাগুলি হলঃ-

ফার্টিলিটি টেস্ট

ওভ্যুলেশন টেস্টিং: ওভ্যুলেশনের আগে রক্তে লিউটিনাইজিং হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ ধরনের কিট দিয়ে লিউটিনাইজিং হরমোনের হার বেড়েছে কি না তা নির্ণয় করা যায়। এছাড়া ওভ্যুলেশনের পরে একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ে শরীরে। এই হরমোনের নাম প্রোজেস্টেরন। একইসঙ্গে এই হরমোনের ক্ষরণ প্রমাণ করে যে আপনার ওভ্যুলেশন হচ্ছে। অন্যান্য হরমোনের মাত্রা যেমন প্রোল্যাকটিনের মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

হিস্টেরোসালপিঙ্গোগ্রাফি: এই প্রক্রিয়ায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ইউটেরাসের ভিতরে বিশেষ এক্স-রে কনট্রাস্ট উপাদান প্রবেশ করানো হয়। এরপর করা হয় এক্স-রে। এর ফলে ইউটেরাসে কোনও জটিলতা থাকলে তা এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে যায়। এছাড়া ইউটেরাস থেকে ফ্লুইড বেরিয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে জমা হচ্ছে কি না তাও নির্ণয় করা যায় এই পরীক্ষায়। জটিলতা ধরা পড়লে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া যায় দ্রুত।

ওভারিয়ান রিজার্ভ টেস্টিং: এই রোগপরীক্ষায় ডিম্বাণুর গুণগত মান এবং সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। দেখা গিয়েছে সাধারণত ৩৫ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের ডিম্বাণুর সংখ্যা অনেকখানি হ্রাস পায়।

অন্যান্য হরমোনের পরীক্ষা: শরীরে অন্যান্য হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করাও জরুরি একটি বিষয়। বিশেষ করে থাইরয়েড এবং পিট্যুইটারি গ্রন্থির হরমোনের যা প্রজনন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ইমেজিং টেস্ট

পেলভিক আলট্রাসাউন্ড: ইউটেরাইন বা ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক আছে কি না জানার জন্য পেলভিক আলট্রাসাউন্ড টেস্ট করা যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে সোনোহিস্টোগ্রাম বা স্যালাইন ইনফিউশন সোনোগ্রাম করারও প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া রয়েছে হিস্টেরোস্কোপি। এই পদ্ধতিতে ইউটেরাসের ভিতরের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আরও পরিষ্কারভাবে জানা যায় যা সাধারণ আলট্রাসাউন্ডে বোঝা যায় না।

কিছু ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করানোর দরকার পড়তে পারে । যেমন

ল্যাপারোস্কোপি: ফ্যালোপিয়ান টিউব, ওভারিদ্বয়, ইউটেরাসের প্রকৃত অবস্থা ঠিক কেমন তা বুঝতে ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতি অবলম্বন করা হতে পারে। ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে এন্ডোমেট্রিওসিস, স্কারিং, ব্লকেজ অথবা ফ্যালোপিয়ান টিউবের ত্রুটি সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব হয়।

চিকিৎসা

ইনফার্টিলিটির চিকিৎসা নির্ভর করে বন্ধ্যাত্বের কারণ, বয়স, কতদিন ধরে ইনফার্টাইল রয়েছেন, এবং ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ের উপর। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়।

ওষুধ

যে সমস্ত ওষুধ ওভ্যুলেশন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে সেই ওষুধগুলিকে বলে ফার্টিলিটি ড্রাগ। ওভ্যুলেশন ডিজঅর্ডারের কারণে যে সকল মহিলা বন্ধ্যাত্বর সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য ফার্টিলিটি ড্রাগের মাধ্যমে চিকিৎসাই প্রাথমিক পথ। এই ধরনের ওষুধগুলি শরীরে সেই সকল হরমোনের ক্ষরণ ঘটায় যা প্রাকৃতিক হরমোনগুলির মতোই কাজ করে। উদাহরণ হিসেবে ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (এফএসএইচ), লিউটিনাইজিং হরমোন (এলএইচ) ইত্যাদির কথা বলা যায়। এছাড়া গুণগত মানে ভালো ডিম্বাণু বা বেশি সংখ্যক ডিম্বাণু তৈরি করার জন্যও এই ধরনের ওষুধের ব্যবহার হয়।

কিছু ড্রাগ রয়েছে যা সরাসরি পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ডকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে এফএসএইচ এবং এলএইচ হরমোন বেরোয় যেগুলি আবার ওভারিয়ান ফলিকলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিটি ওভারিয়ান ফলিকলে থাকে একটি ডিম। সাধারণত ৩৯ বছরের কম বয়সি মহিলা এবং পিসিওএস নেই মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা উপরিউক্ত পদ্ধতিতে করা হয়।

এছাড়া অন্যান্য ওষুধের মধ্যে রয়েছে গোনাডোট্রপিনস হরমোন ইঞ্জেকশন, মেটফর্মিন, লেট্রোজোল ইত্যাদি।

ফার্টিলিটি ফেরাতে সার্জারি

ল্যাপারোস্কোপিক বা হিস্টোরোস্কোপিক সার্জারি: ইউটেরাসের কিছু গঠনগত সমস্যা যেমন ইউটেরাসের দেওয়াল জুড়ে থাকলে, ইউটেরাসের মধ্যে ফাইব্রয়েড থাকলে, এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপ থাকলে এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন পদ্ধতিগুলির সাহায্য নেওয়া যায়।

টিউবাল সার্জারি: ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক থাকলে বা ফ্লুইড দ্বারা পূর্ণ থাকলে চিকিৎসক ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করে ব্লক খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।

রিপ্রোডাকটিভ অ্যাসিস্টান্স

এই চিকিৎসা ব্যবস্থার অধীনে একাধিক ব্যবস্থা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আইইউআই-এর কথা বলা যায়। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবান শুক্রাণু নিয়ে ইউটেরাসে প্রেরণ করা হয়। এর ফলে সরাসরি ইউটেরাসে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষেক ঘটে সেখানেই ভ্রূণ তৈরি হয়।

এছাড়া রয়েছে আইভিএফ। এক্ষেত্রে মহিলার দেহে থেকে একাধিক ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া পুরুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় শুক্রাণু। এবার ল্যাবরেটরিতে ওই সংগৃহীত ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে মানবদেহের বাইরেই তৈরি করা হয় জাইগোট। ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষিত জাইগোট থেকে সবচাইতে স্বাস্থ্যকর জাইগোট নির্বাচন করে ইউটেরাসে প্রতিস্থাপিত করা হয়।

Dr. Aindri Sanyal

Dr. Aindri Sanyal is one of the Best Lady Gynecologist & Top IVF Specialist in Kolkata, having an experience of more than 12+ Years as Top Infertility Specialist in Kolkata.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago