বন্ধ ফ্যালোপিয়ান টিউব খোলার উপায়

Published by

স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান না আসলে সেক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখার দরকার পড়ে যে এই ফ্যালোপিয়ান টিউব একদিকে বা দুদিকেই ব্লক আছে কি না। তখন চিকিৎসক এই সমস্যার সমাধানে কিছু পরামর্শ দেন রোগীকে। সব দম্পতিই সাধারণত স্বাভাবিক পথে গর্ভধারণের চেষ্টা করেন। এরপর সন্তান না এলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান এবং চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। সেই পরীক্ষায়, কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা যায় স্ত্রীর ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ রয়েছে।

ফ্যালোপিয়ান টিউব কী ?

ফ্যালোপিয়ান টিউব হল, একজন মহিলার গর্ভধারণের রাস্তা। জরায়ু থেকে একটি পাইপের মতো কাঠামো থাকে যা ডিম্বাশয়ের সঙ্গে জরায়ুকে যুক্ত করে। প্রত্যেক মাসে ওভ্যুলেশনের মাধ্যমে ওভারি থেকে ডিম্বাণু বেরলে সেই ডিম্বাণুকে জরায়ুতে পাঠানোর কাজটি করে ফ্যালোপিয়ান টিউব।

একজন মহিলার দুটি ফ্যালোপিয়ান টিউব থাকে। একটি ডানদিকে, অন্যটি বামদিকে। এইভাবে দুই দিকের দুটি ডিম্বাশয় যুক্ত হয় জরায়ুর সঙ্গে।সব দম্পতিই সাধারণত স্বাভাবিক পথে গর্ভধারণের চেষ্টা করেন। এরপর সন্তান না এলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান এবং চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। সেই পরীক্ষায়, কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা যায় স্ত্রীর ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ রয়েছে।

কোন পরীক্ষা দ্বারা ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ নির্ণয় করা সম্ভব ?

এইচএসজি বা হিস্টেরোস্যালপিঞ্জোগ্রাফি :- এক্ষেত্রে একটি ডাই বা রঞ্জক জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এই ডাই ফ্যালোপিয়ান টিউবে প্রবেশ করে। সেই সময় এক্স রে-এর মাধ্যমে ফ্যালোপিয়ান টিউবের ছবি তোলা হয়। সেই ছবিতেই ফ্যালোপিয়ান টিউবের প্রকৃত অবস্থা ধরা পড়ে। দুদিকের টিউব স্বাভাবিক থাকলে ওই ডাই ফ্যালোপিয়ান টিউব দিয়ে ভালোভাবে বেরিয়ে যায়। তবে কোনও একদিকের বা দুদিকের ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডাই প্রবেশ না করলে বুঝতে হয় ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে আছে। সোলোসালপিঞ্জোগ্রাফি দ্বারাও ফ্যালোপিয়ান টিউবের ব্লকেজ নির্ণয় করা যায়। পরীক্ষার ধরন একই, শুধু এক্স রে-এর জায়গায় আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় অসুখ। জানিয়ে রাখি, টেস্টের সময়েই ফ্যালোপিয়ান টিউবে ছোট কোনও ব্লক থাকলে তা খুলে যায়। অর্থাৎ টেস্ট দিয়েও রোগীর চিকিৎসা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ব্লক-এর প্রকৃতি

মিউকাস প্লাক-এর মতো হালকা ব্লক তৈরি হতে পারে ফ্যালোপিয়ান টিউবে। বিষয়টা অনেকটা পাইপের মধ্যে তুলোর মতো হালকা জিনিস প্রবেশ করার মতো। এই কারণে একটু চাপ দিয়ে ডাই পাঠালে হালকা ব্লক খুলে যায়।তবে ফ্যালোপিয়ান টিউবে জালের মতো কোনও শক্ত জিনিস তৈরি হয়ে গেলে তা এইচএসজি পরীক্ষায় খোলে না।

ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ কেন তৈরি হয় ?

দুটি কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। প্রথমটি হল সংক্রমণ। অল্প বয়সে কোনও কারণে পেলভিক ইনফেকশন হলে সেই সংক্রমণের কারণে টিউবে ব্লক তৈরি হতে পারে। আবার এন্ডোমেট্রিওসিস নামক অসুখেও এমন ব্লক তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ব্লক খোলার উপায়

ব্লক নির্ণীত হলে তা খোলার দুটি উপায় আছে। ১) ডাই দিয়ে এবং ২) অপারেশন করে। প্রথম পদ্ধতিটি নিয়ে ইতিমধ্যেই আমরা আলোচনা করেছি। জানিয়ে রাখি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সার্জিক্যাল উপায়েই ব্লক খোলার ক্ষেত্রে বেশি সাফল্য মেলে। এক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে ব্লক খোলার চেষ্টা করা যেতে পারে।

ল্যাপারোস্কোপি একটি মাইক্রোসার্জারি। এক্ষেত্রে পেটে ফুটো করে, সেই ফুটোর মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা এবং উপযুক্ত যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো হয়। ক্যামেরার সাহায্যে জরায়ু, ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউব সবই পরিষ্কার করে দেখা সম্ভব হয়। এরপর সার্জারির যন্ত্রপাতির সাহায্যে ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক থাকলে পরিষ্কার করে দেওয়া যায়। এমনকী কোনও দিকের ফ্যালোপিয়ান টিউব জড়িয়ে থাকলে তাও খুলে দেওয়া যায়। মাইক্রোস্কোপি বা ল্যাপারস্কোপির সময় অন্যান্য সমস্যা থাকলে তাও সঠিক করা যায়। অর্থাৎ ছোটখাট ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যা থাকলেও তা বাদ দিয়ে যায়। এছাড়া জরায়ুর ভিতরে পলিপ, সেপটাম থাকলে তা সরিয়ে ফেলা হয়। এই ধরনের সমস্যা গর্ভধারণে বাধা তৈরি করতে পারে। সার্জারির পর ৬ মাস থেকে ১ বছর অবধি স্বাভাবিক পথে দম্পতিকে সন্তান নেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে বলা হয়।

জানিয়ে রাখি, পরীক্ষায় কোনও সংক্রমণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিললে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় হয় ঠিকই। তবে ওষুধ দ্বারা ফ্যালোপিয়ান টিউবের ব্লকেজের সমস্যা সবসময় মেটানো সম্ভব নাও হতে পারে।

কয়টি ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ ?

একটি নাকি দুটি ফ্যালোপিয়ান টিউবেই ব্লকেজ রয়েছে সেই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত একদিকের ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ থাকলে তিনি স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই সন্তান ধারণ করতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ এবং সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করলে সন্তানধারণে সমস্যা হয় না। তবে দুদিকের ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ থাকলে সন্তানধারণে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমনকী ল্যাপারোস্কোপিও সবসময় সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে আইভিএফ করানোই ভালো।

ব্লক খুলতে ঘরোয়া উপায় কি কাজে আসে?

আদা, রসুন, হলুদ আমাদের শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে কোনও মহিলা চাইলে এমন খাদ্য খেতে পারেন। খেতে পারেন ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল, সবজি। তবে সমস্যা না সারলে, সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago