দাদ এক ধরনের চর্মরোগ। দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার সাহায্যে এটি নির্মূল করা যেতে পারে। সাধারণত শরীরের এক জায়গায় গোল চাকতির মত ফুসকুড়ি উঠে চুলকানি হয়, আর একেই দাদ বলে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাদ হতে পারে।এটি প্রথমে একটু থেকে হলেও পড়ে বাড়তে থাকে।
এই রোগে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণের কারণে যে গোল গোল ছোপ পড়ে ও চুলকানোর সমস্যা হয়। আমাদের সমাজে এটি খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। যেকোনো বয়সের যেকোনো মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা, আর্দ্র স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এটি খুবই ছোঁয়াচে। মাথার ত্বক থেকে শুরু করে পিঠ, হাত, পা, কুঁচকি, বগল ও শরীরের নানা ভাঁজে প্রথমে লালচে গোল বা ডিম্বাকৃতির ছোপ দেখা দেয়। এর ওপর লাল আবরণ থাকে ও ভীষণ চুলকায়। এত বেশি চুলকায় যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
দাদের উপসর্গ অনেকাংশে নির্ভর করে শরীরের কোন অংশ সংক্রামিত হচ্ছে তার উপর ৷
সাধারণত দাদ হলে চামড়ার ওপর গোলাকার ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটি দেখতে অনেকটা চাকার মতো যার কিনারগুলো সামান্য উঁচু হয়। যতই দিন যায় চাকার পরিধি বাড়তে থাকে আর কেন্দ্রের দিকে বা ভেতরের দিকে ভালো হয়ে যেতে থাকে। ক্ষত স্থান থেকে খুশকির ন্যায় ওঠে। কখনো কখনো পানি ভর্তি দানা ও পুঁজ ভর্তি দানা হয়। ক্ষত স্থান অত্যন্ত চুলকায়৷ মাথায় দাদ হলে আক্রান্ত স্থানের চুল পড়ে যায়। কোমরে বা কুচকিতে হলে চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়। নখে হলে নখ অস্বচ্ছ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। দাদ চুলকালে সেখান থেকে কষ পড়তে থাকে।
মূলত তিন প্রকার ফাঙ্গাস থেকে দাদ রোগের সৃষ্টি হয়। সেগুলি হলো, ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম, এপিডার্মোফাইটন। এগুলি অনেকসময় একটি নির্দিষ্ট সময় মাটিতে বাস করে, এবং তা থেকেই মানুষ বা জীবজন্তুদের মধ্যে এই ফাঙ্গাস সংক্রামিত হয়।
এছাড়াও, অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতা, আটসাট অন্তর্বাস ব্যবহার করলে, অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করলে এবং সংক্রামক ব্যক্তির জামাকাপড়, তোয়ালে ব্যবহার করলেও দাদের সংক্রমণ হতে পারে। এই সর্তকতা গুলি সবসময়ের জন্য অবলম্বন করলে শুধু দাদের নিরাময় নয়, দাদ হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
আমেরিকান একাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানরা লিপিবদ্ধ করেছেন যে দাদ রোগ নির্ণয় করা একটু জটিল হতে পারে, কারণ এটি প্রায়শই অন্যান্য শর্তের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, টিনিয়া কর্পোরিস একজিমা, সোরিয়াসিস বা সেবোরিহিক ডার্মাটাইটি-র মতো লক্ষণ গুলি প্রায় এক হয় ; টিনিয়া ক্যাপটাইটিস অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটার এর সাথেও অনেকাংশে মিল রয়েছে দাদের। এছারা পায়ের নখের দাদটি নখের ট্রমাজনিত কারণে ডাইস্ট্রোফিক পায়ের নখের মতো দেখতে হতে পারে। একটি ত্বকের বায়পসি বা ফাঙ্গাল কালচারের মাধ্যমে দাদ রোগ নির্ণয় করা যায়৷ এছাড়াও করা হয় KOH পরীক্ষা।
দাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ সময় ওষুধেই সেরে যায় সংক্রমণ। ডাক্তাররা বলেন ওষুধের সাথে সাথে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলেই সেরে ওঠে এই রোগ৷
ওষুধ
দাদের ধরণগুলির উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, মলম, জেল বা স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
স্ক্যাল্প বা নখে দাদের সংক্রমণ হলে Griseofulvin (Gris-PEG) অথবা Terbinafine ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
ওষুধের পাশাপাশি ডাক্তাররা রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে পরামর্শ দেন ৷
প্রতিদিনের ব্যবহৃত অন্তর্বাস এবং মোজা সাবান জলে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের মধ্যে তুলোর বল ভিজিয়ে তা দিনে তিনবার সংক্রামিত স্থানে লাগান।কিছুদিন এটি ব্যবহার করতে থাকুন সুলভ পাবেন।
নারকেল তেল দাদে সংক্রামিত জায়গাতে লাগালে তা দাদকে সারিয়ে ফেলতে অনেকটাই সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরণের ত্বকের অ্যালার্জিকে সারিয়ে তুলতে নারকেল তেল খুবই প্রয়োজনী।
দাদ সেরে উঠতে পারে ঘরোয়া সহজ উপায়ে। কাঁচা হলুদের পেস্ট বানিয়ে সেইটা দাদের উপরে লাগালে তা দাদকে সারিয়ে তোলে খুবই তাড়াতাড়ি। কাঁচা হলুদ না থাকলেও আমাদের সবার বাড়িতেই রান্নার জন্য হলুদ থাকে। সেই হলুদের পেস্ট যদি দাদে লাগানো হয় তাহলে দাদ সারিয়ে তুলতে সেটা অত্যন্ত কার্যকরী।
রসুনের মধ্যে আ্যান্টি ফাঙ্গাল গুনাবলী আছে। তার ফলে রসুন দাদকেও সারিয়ে তোলে। রসুন খুব সরু করে কেটে সেটা সংক্রামিত স্থানে পর পর কয়েকদিন নিয়ম করে লাগালেই আমরা দাদের থেকে মুক্তি পেতে পারি অতি সহজেই। তাই দাদ হলেই , বাড়িতে রসুন বেটে বা সরু করে রসুন দাদের উপর লাগালেই আমাদের দাদ দূর হতে পারে।
হ্যাঁ, দাদ সংক্রামক ব্যধি। সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহারের জিনিস যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তি না ধুয়ে ব্যবহার করেন, তবে তিনি সংক্রামিত হতে পারেন। এমনকি সংক্রমণ হতে পারে বেড়াল বা কুকুরের মতো পশুদের থেকেও।
এসেনশিয়াল অয়েল তৈরি হয় বিভিন্ন ফুল, হার্বস, গাছ ইত্যাদির নির্যাস থেকে ৷ অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণাগুণ সমৃদ্ধ এসেশিয়ান অয়েল গুলি অলিভ অয়েল বা নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ক্ষত স্থানে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যায় দাদ।
অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণাগুণ সমৃদ্ধ এসেনশিয়াল অয়েল গুলি হলোঃ
১. অরিগ্যানো অয়েল
২. লেমনগ্রাস অয়েল
৩. টি-ট্রি অয়েল
কোনোভাবেই বিনা চিকিৎসায় এই রোগকে ফেলে রাখবেন না। এর থেকে চুল পড়ে যাওয়া নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে অচিরেই৷
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment