বেলস পালসি কি? বেলস পালসি রোগের চিকিৎসা

Published by

বেলস পালসি কি? বেলস পালসি রোগের চিকিৎসা কিভাবে সম্ভব? – মনে করুন কোনো একদিন হঠাৎ করেই খেয়াল করলেন মুখটা যেন একদিকে একটু বেঁকে গেছে। সুস্থ স্বাভাবিক শরীরে, যেখানে এখনও অব্ধি এই ধরণের কোনো সমস্যাই কখনও দেখা দেয়নি, অথচ হঠাৎই  মনে হচ্ছে যেন খাবার এমনকি জলও গিলতে গিয়ে মুখের একদিকে আটকে আছে বা চিবোতে কষ্ট হচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে এমনও যে একদিকের চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না সহজে। নাহ্, গুরুতর কিছু হয়নি, এটি একটি স্নায়বিক  সমস্যা, যার নাম বেলস পালসি। আমাদের সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ বা ফেসিয়াল নার্ভে সমস্যার কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কারণে ব্যথা যন্ত্রণা হলে স্নায়ুটি ফুলে যায় ও চাপ লেগে মুখমণ্ডলের পেশি, জিভের স্বাদ বা চোখের পাতা নড়াচড়ায় সমস্যা দেখা দেয়।

বেলস পালসি কি?

বেলস পালসির আরেকটি প্রচলিত পরিভাষা হলো ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস ৷ এটি এমন একটি অবস্থা যার ফলে মুখের পেশীগুলি দুর্বল হয়ে যায় বা একপাশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। মুখের পেশীর সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই পেশীগুলি সাময়িকভাবে আক্রান্ত হয় এবং চিকিৎসা, ব্যায়াম ইত্যাদির দ্বারা এই অবস্থা সাধারণত পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়।

বেলস পালসির প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গগুলি কী কী?

বেলস পালসির কারণে সাধারণত মুখের এক পাশের পেশী আক্রান্ত হয়। তবে অত্যন্ত বিরল ক্ষেত্রে মুখের দু’পাশের পেশীই আক্রান্ত হয়।

পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে এবং মুখের এক পাশ থেকে লালা ঝরতে থাকে।

এই রোগে মুখমন্ডলের স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গতিবিধি বা কাজকর্ম গুলির ওপর প্রভাব পড়ে। বেলস পালসি আক্রান্ত রোগী তার চোখের পাতা নাড়াতে, মুখের যেদিকের অংশ আক্রান্ত হয়েছে তা খুলতে, হাসতে এবং চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা অনুভব করেন।

কারও কারও ক্ষেত্রে মুখের ওই পাশে ব্যথাও হতে পারে, বিশেষ করে চোয়াল এবং মাথাতে ব্যথা অনুভব হয়।

জিভের সামনের অংশটিও প্রভাবিত হয়। ফলে জিভের স্বাদগ্রহণেও সমস্যা দেখা দেয়।

কেন হয় বেলস পালসি?

আমাদের সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ বা ফেসিয়াল নার্ভে সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে বেলস পালসি হওয়ার সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে, বলা হয়ে থাকে যে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাল বা বিষাক্ত সংক্রমণের কারণে রোগটি হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে এইচআইভি, হার্পিস সিমপ্লেক্স, হার্পিস জোস্টার, সাইটো মেগালোভাইরাস এবং এপস্টাইন বার ভাইরাস ইত্যাদির সংক্রমণের ফলে এবং জ্বর, ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, কান পাকা ইত্যাদির কারণেও বেলস পালসি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া মাথায় আঘাত, টিউমার, স্ট্রোক থেকে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি থাকে বেলস পালসিতে আক্রান্ত হওয়ার?

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী, গর্ভাবস্থায় থাকা মহিলারা বিশেষত তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ৷ এই রোগের বিষয়ে পারিবারিক রোগের ইতিহাস ও দায়ী হতে পারে ৷ মুখমন্ডলের স্নায়ুর ওপর কোনোরকম ট্রমা বা আঘাত, জ্বালা বা কোনো ক্ষতি সৃষ্টি হলে তা বেলস পালসি ঘটাতে পারে।

কীভাবে নির্ণয় করা হয় বেলস পালসি? প্রয়োজনীয় পরীক্ষাই বা কী?

এখনও পর্যন্ত বেলসি পালসি নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি ৷

বেলস পালসি নির্ণয়ের জন্য শারীরিক পরীক্ষা, ইমেজিং স্ক্যান এবং রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

রোগীর লক্ষণ বা উপসর্গগুলির উপর ভিত্তি করে ডাক্তার মুখ পরীক্ষা করবেন, এবং চোখের পাতা ঠিক মতো খোলা বা বন্ধ করা যাচ্ছে কি না, মুখের এক পাশ থেকে লালা ঝড়ছে কি না ইত্যাদি তিনি পর্যবেক্ষণ করবেন।

ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (EMG), এই পরীক্ষার দ্বারা বোঝা যায় নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইএমজি স্ক্যানিং এর দ্বারা পেশিতে স্নায়ুর উদ্দীপনা এবং ইলেকট্রিক্যাল ইমপালসের গতি নির্ধারণ করা হয়।

অনেকসময় উপসর্গ অনুযায়ী এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং প্রযুক্তি মারফত মুখের স্নায়ুগুলির অবস্থা দেখা হয়।

যদি চিকিৎসক ভাইরাল সংক্রমণ সন্দেহ করেন, তাহলে তা নিশ্চিত করতে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।

স্ট্রোক এবং ব্রেন টিউমারের মতো অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হয়।

বেলস পালসি রোগের চিকিৎসা

বেলস পালসির চিকিৎসা অনেকটাই আক্রান্ত হওয়ার কারণ বা ঝুঁকির কারণগুলির উপর নির্ভর করে।

চিকিৎসার জন্য কর্টিকোস্টেরয়েডস কেই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী হিসেবে গণ্য করা হয়৷ দেখা গেছে যে এই ওষুধ প্রয়োগের পর ৬ মাস অব্ধি কোনো সমস্যা ছাড়াই রোগমুক্ত করে৷ তবে, এই অবস্থার জন্য চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই স্টেরয়েড প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও কিছু ওভার দ্য কাউন্টার বেদনানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন ( Advil, Motrin IB) অথবা অ্যাসিটামিনোফেন ( Tylenol) ইত্যাদি।

যদি উপসর্গ দেখে ডাক্তার সন্দেহ করেন, যে কোনো ভাইরাস সংক্রমনই এই রোগের কারণ, তাহলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করা হয় ৷

ওষুধের পাশাপাশি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে এর পরামর্শ দেওয়া হয়।

কখনও কখনও পরিস্থিতি জটিলতম হলে, যেখানে ট্রমার কারণে স্নায়ু সঙ্কুচিত হয়ে যায় বা আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এটি এখনও বিরল ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

কারও কারও ক্ষেত্রে কয়েকমাসের মধ্যেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার কারও ক্ষেত্রে তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।

এছাড়াও কয়েকটি বিষয় বেলস পালসির জন্য মাথায় রাখা প্রয়োজন

বেলস পালসি থেকে মুক্তির জন্য -চোখের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। প্রয়োজনে ড্রপ দিতে হবে, ঘুমানোর সময় মলম দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে আক্রান্ত চোখ।

সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খেতে হবে।

প্রতিবার খাওয়ার পর আঙুল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।

পেশি ঠিক করতে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া, হাসা চুইংগাম চিবোনোর মতো ব্যায়াম এক্ষেত্রে খুব  কার্যকর।

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago