চিকিৎসকের কাছ থেকে টিউমার শব্দটি শুনলে ভয় হয় তাহলে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তবে বিষয় টা যখন ফাইব্রয়েড টিউমার, বিশেষজ্ঞ রা বলছেন, তখন সেটা অতটাও চিন্তার বিষয় নয়। এই টিউমার কখনই ম্যালিগন্যান্ট নয়, অর্থাৎ ক্যান্সারাস নয় এবং এর অনেক রকমের চিকিৎসার পদ্ধতি আছে, আবার কখনো কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন না করলেও চলে।
ফাইব্রয়েড টিউমার হল মাংস পেশির কোশ দিয়ে তৈরি একরকম মাংসল পদার্থ যা জরায়ুর অভ্যন্তরে গড়ে ওঠে। যদিও সমস্ত ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড একই, তবে তাদের অবস্থানের জায়গা অনুসারে তাদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় —
ফাইব্রয়েড সাধারণ ভাবে ৩০ থেকে ৪০ বছরের মহিলাদের ভেতর সবথেকে বেশি দেখা যায়। পরিবারে মা বা দিদির ফাইব্রয়েড থাকলে ফাইব্রয়েডের সমস্যার সম্ভাবনা অনেক গুনে বেড়ে যায়।
কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড আলাদা করে কোনো রোগলক্ষনই তৈরি করে না এবং চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী সবচেয়ে কমন রোগলক্ষনগুলি হল মাসিকের সময় অতিরিক্ত দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাত। ফাইব্রয়েডের ফলে পেটে বা পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা, ফোলাভাব এবং ঘন ঘন মূত্রত্যাগের সমস্যা তৈরি হয়। চিকিৎসকরা বলেন ফাইব্রয়েডের রোগলক্ষন, ফাইব্রয়েডের অবস্থান, তাদের সংখ্যা, আকৃতি, রোগীর বয়স, সন্তান ধারনের ক্ষমতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি কি হবে এবং তা কতদিন ধরে চলবে।
অল্প কিছু বছর আগেও চিকিৎসকরা ফাইব্রয়েড টিউমার বা জরায়ুর টিউমার এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে হিসটেরেকটমিকেই বেছে নিতেন। কিন্তু বর্তমানে আরও নানা প্রকারের চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি হয়ে গেছে, যাতে অধিকাংশ সময়ে হিসটেরেক্টমি করার প্রয়োজনই পড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাইব্রয়েড আক্রান্ত মহিলারা মনে করেন, যে এর চিকিৎসার জন্য হিসটেরেক্টমিই একমাত্র উপায় – কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
এছাড়া চিকিৎসক এও বলছেন, যে সব হিস্টেরেক্টমির পদ্ধতিও একতকম নয়, তাই ভীত বা হতাশ না হয়ে হিসটেরেক্টমির অন্যান্য পদ্ধতিগুলি সম্পর্কেও জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
হিসটেরেক্টমির একদম নতুন প্রকার, যাকে সুপ্রা সারভাইকাল হিসটেরেক্টমি বলা হয়, সেখানে কেবলমাত্র ইউটেরাইন ক্যাভিটির যে অংশটাতে ফাইব্রয়েড আছে, সেই অংশটুকুই বাদ দেওয়া হয়। টিউব, ওভারি, সার্ভিক্স, ভ্যাজাইনা বা ব্লাডার এবং পেলভিসের অন্য সমস্ত মাংস পেশি অক্ষত থাকে। এরফলে ট্রাডিশনাল পদ্ধতির হিসটেরেক্টমিতে যে সমস্যাগুলো হয়, যেমন – ব্লাডার বা সেক্সুয়াল ডিসফাংশন এবং তৎক্ষনাৎ মেনোপজ হওয়া, ইত্যাদি সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হয় না। অপারেশনের পরবর্তী সুস্থতাও খুব তাড়াতাড়ি হয়। দুদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়া যায় এবং দু’সপ্তাহের ভেতর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়। এটা ফাইব্রয়েডের একটা স্থায়ী সমাধানও বটে।
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
মায়োমেক্টমি ফাইব্রয়েড সার্জারী : জরায়ু ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে শুধুমাত্র ফাইব্রয়েডগুলো বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
পদ্ধতি : যে তিনটে প্রধান পদ্ধতিতে এই অপারেশন করা হয়, সেগুলো হল —
ফাইব্রয়েডকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় এবং অনেক বছর পর্যন্ত এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কখনো কখনো অনেক দিন পরে আবার ফিরে আসতে পারে ফাইব্রয়েডের সমস্যা।
যেসব মহিলাদের ফাইব্রয়েড আছে, তার থেকে মুক্তি পেতে চান এবং ভবিষ্যতে সন্তান ধারনের ক্ষমতা ধরে রাখতে চান, তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আদর্শ।
হিস্টেরেস্কোপি তাদের জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন, যাদের রক্তপাত ও ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সমস্যা আছে এবং ফাইব্রয়েডের কারণে বারংবার যাদের গর্ভপাত হচ্ছে। মায়োমেকটমির পর গর্ভধারণ করতে গেলে বেশিরভাগ মহিলাদেরই IVF এর সাহায্য নিতে হয়, তবে জরায়ু যথেষ্ট সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে যাতে রোগী একটা সুস্থ প্রেগন্যান্সি ক্যারি করতে পারে।
ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন : এটি একটি রেডিওলজিক্যাল পদ্ধতি, যাতে ফাইব্রয়েডে রক্ত সঞ্চালন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় এবং তার ফলে একসময় ফাইব্রয়েডগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
এটি একটি মিনিমাল ইনভেসিভ পদ্ধতি। ইউটেরাইন আর্টারির ভেতর একটি ক্যাথিটার প্রবেশ করানো হয়, যার মাধ্যমে ছোট ছোট বস্তু ইঞ্জেক্ট করে ফাইব্রয়েডে রক্ত পরিবহন করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফাইব্রয়েডে রক্ত সংবহন বন্ধ হয়ে গেলে ফাইব্রয়েড আস্তে আস্তে শুকিয়ে, ছোট হয়ে গিয়ে একসময় মারা যায়।
যেসব মহিলারা সন্তানের জন্ম দিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য এটি একটি সঠিক পদ্ধতি।
চিকিৎসকরা বলে থাকেন, এটি একটি নিরাপদ এবং স্মার্ট পদ্ধতি, কিন্তু একমাত্র তখনই যখন রোগীর সন্তানের জন্ম দেওয়া হয়ে গেছে। কারণ এই পদ্ধতির পর গর্ভধারণ ও বাচ্চার জন্ম সংক্রান্ত সমস্যা এবং প্রিম্যাচিওর ডেলিভারির সমস্যাও বেড়ে যায়। ফাইব্রয়েডে রক্ত সংবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ জরায়ুতেও রক্ত সংবহন বন্ধ হয়ে যাওয়া, ফলে সার্জারীর পর সুস্থ গর্ভধারণ সম্ভব নয় এবং তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
এমআরআই গাইডেড আল্ট্রাসাউন্ড : এই পদ্ধতিতে হাই ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড ওয়েভ, যা অতিরিক্ত উত্তাপের সৃষ্টি করে, তার মাধ্যমে ফাইব্রয়েডকে নির্মূল করা হয়। এমআরআই এর মাধ্যমে ফাইব্রয়েডের অবস্থানকে সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা হয়, রেডিও ওয়েভ পাঠানোর জন্য।
ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ : হরমোনের স্টিমুলেশন ও পরিমান কমিয়ে দিয়ে ফাইব্রয়েডকে নির্মূল করা হয়।
স্টেরয়েড হরমোনের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে ফাইব্রয়েড শুকিয়ে যায়। তবে চিকিৎসা বন্ধ হলে আবার সমস্যা দেখা দেয়।
এই পদ্ধতিটি সেইসব মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় যাদের ফাইব্রয়েডের আকার খুব ছোট ছোট অথবা যারা সার্জারীর আগে টিউমারের আকার ছোট করতে চায়। মায়োমেক্টমির আগে রোগীর অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করার জন্যও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
যদিও এই পদ্ধতিতে ফাইব্রয়েডের আকার ছোট হয়ে যায়, তবে এই পদ্ধতি ন’মাসের বেশি একটানা ব্যবহার করা উচিত নয় এবং এরপর আবার ফাইব্রয়েড ফিরে আসে। যেসব মহিলারা মেনোপজের খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন, তাদের জন্য খুব উপযোগী এই পদ্ধতি।
মেডিক্যাল মনিটরিং : ফাইব্রয়েডের আকার ও অবস্থান কে এবং রোগলক্ষন কে নজরে রাখতে হবে।
ভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড ও অ্যানিমিয়ার জন্য রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে এটি করা হয়।
এটা সেইসব মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য যাঁদের রোগলক্ষন খুব সামান্য এবং মেনোপজের কাছাকাছি বয়স চলে এসেছে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment