সিজারিয়ান অপারেশন সব সন্তানসম্ভবা মহিলার করা হয় না। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বাচ্চার ডেলিভারি করাতে গিয়ে কোনও জটিলতা তৈরি হলে তখন সিজারিয়ান ডেলিভারি (cesarean delivery) করানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক।
• স্বাভাবিক সময়ের বেশি সময় ধরে প্রসববেদনা হলে।
• ইউটেরাসে ভ্রূণের অস্বাভাবিক অবস্থান।
• মায়ের উচ্চ রক্তচাপ এবং সেই কারণে হওয়া অসুস্থতা বা প্রিএক্ল্যামজিয়া (preeclampsia)।
• বার্থ ক্যানালে বাচ্চা আটকে গেলে ও ফরসেপ-এর সাহায্যেও কিছু করা না গেল সিজারিয়ান ডেলিভার করাতে হয়।
• জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, গর্ভস্থ শিশুর ওজন ৩.৫ কেজিরও অধিক হলে।
• প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া।
• প্লাসেন্টার নীচে রক্তপাত।
• জল ভেঙে যাওয়া।
• জরায়ুতে একাধিক বাচ্চা থাকলে।
• বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সি এলে।
• বারংবার মিসক্যারেজ হলেও সিজারিয়ান অপারেশন করতে হতে পারে। অন্যদিকে কোনও ভাবী মায়েরা প্রসব যন্ত্রণার ধকল নিতে চান না বলেও সিজারিয়ান সেকশন করাতে চান।
অপারেশনের সময় সন্তানসম্ভবা মায়ের শিরদাঁড়ার এল ৩-এল৪ ভার্টিব্রার মধ্যে খুব সরু সুচের সাহায্যে ইঞ্জেকশন দিয়ে তলপেট ও কোমরের নীচের অংশ অসাড় করে দেওয়া হয় কিছু সময়ের জন্য। এই পদ্ধতির নাম স্পাইনাল অ্যানাস্থেশিয়া। এরপর তলপেটে অপারেশন সন্তান ভূমিষ্ঠ করানো হয়। এরপর বিভিন্ন ধরনের সুতো ক্ষত দিয়ে সেলাই করে দেওয়া হয়।
সবচাইতে বড় সমস্যা হল পোস্ট পার্টাম হেমারেজ (Postpartum hemorrhage)। কখনও কখনও সিজারিয়ান ডেলিভারির পরেও ইউটেরাস ঠিকভাবে সংকুচিত হয় না। এই সমস্যা কিন্তু জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণেও হতে পারে। আবার, ইউটেরাসের দেওয়ালে অক্সিটোসিন রিসেপটরের সংখ্যা কম থাকার কারণে বা রোগীর রক্তাল্পতার সমস্যা থাকলে কিংবা সিজার চলাকালীন প্রচুর রক্তপাত হলে, জরায়ু সংকুচিত হতে পারে না আর তারজন্য জরায়ু থেকে প্রচুর রক্তপাত হতে থাকে। এই অবস্থারই নাম পোস্ট পার্টাম হেমারেজ (পিপিএইচ)। সিজারিয়ান অপারেশন করার সময়ে পিপিএইচ হলে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় রক্তপাত বন্ধ করার জন্য। কম্প্রেশন সুচার দেওয়ার দরকারও পড়তে পারে। কাজ না হলে টায়ারিং স্টিচ দিতে হয়। ইন্টারনাল ইলিয়াক ধমনি বাঁধতে হয়, এরপর তাতেও কাজ না হলে শেষ পর্যন্ত ইউটেরাস বাদ দিতেই হয়, একে বলে অবস্টেট্রিক হিস্টেরেকটমি।
অপারেশনের সাতদিন পরেও পিপিএইচ দেখা দিতে পারে। এই ঘটনাকে বলে বলে সেকেন্ডারি পিপিএইচ। জরায়ুর ভিতরে সংক্রমণের কারণে এমন হয়। সেকেন্ডারি পিপিএইচ-এর পিছনে কিন্তু বাইরের ইনফেকশনের একটা বড় ভূমিকা থেকে যায়।
এছাড়া সিজার করার পরে ইউরিনের দ্বারে সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে সেসবের সহজ চিকিৎসা রয়েছে ওষুধের মাধ্যমে।
সিজারিয়ান হওয়ার পরে বহু মহিলা বলেন, ইঞ্জেকশন দেওয়ার কারণে কোমরে প্রবল যন্ত্রণা হচ্ছে (Back pain after cesarean delivery)। অথচ পুরোটাই ভুল ধারণা। কোমরে ব্যথার সঙ্গে কোমরে ইঞ্জেকশন দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
আসলে প্রেগন্যান্সির সময় সন্তানসম্ভবা মায়ের শরীর থেকে ক্যালশিয়াম সংগ্রহ করে ভ্রূণের হাড় গঠিত হয়। এই ক্যালশিয়াম আসে মায়ের শরীরের হাড় থেকে। ফলে মায়েদের শরীরে ক্যালশিয়ামের একটা অভাব থেকেই যায়। আর এই অভাব পূরণ করার জন্য প্রতিদিন সন্তানসম্ভবা মায়ের উচিত, বাইরে থেকে অন্তত আড়াইগ্রাম ক্যালশিয়াম গ্রহণ করা। অথচ খাদ্যের মাধ্যমে কেউই ১ গ্রামের বেশি ক্যালশিয়াম গ্রহণ করতে পারেন না। বাকি থাকে দেড় গ্রাম। কিন্তু বেশিরভাগ চিকিৎসক পাঁচশো মিলিগ্রামের তিনটে করে ক্যালশিয়াম ওষুধ খেতে বলেন না। ফলে কিছু না কিছু ক্যালশিয়ামের অভাব থেকেই যায় মায়ের।
এখানেই শেষ নয়। ডেলিভারির পরেও বাচ্চা মায়ের দুধ খায়। দুধে থাকে ক্যালশিয়াম। এই ক্যালশিয়ামও দুধে আসে মায়ের শরীর থেকে। অর্থাৎ তখনও মায়ের প্রতিদিন আড়াই গ্রাম ক্যালশিয়াম দরকার হয়। অথচ আমাদের দেশে বাচ্চার জন্মের পর আর মায়ের স্বাস্থ্যের দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হয় না। অথচ তখনও তাঁকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা দরকার। দরকার প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়াম যুক্ত খাদ্য খাওয়ানো ও ট্যাবলেট দেওয়া।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় না বলেই কোমরের হাড়ে ক্ষয় ধরতে থাকে। অর্থাৎ সিজারিয়ান ডেলিভারি হোক বা নর্মাল ডেলিভারি, সবক্ষেত্রেই, মায়ের শরীরে ক্যালশিয়ামের এই অভাব থাকে। দুই ক্ষেত্রেই ডেলিভারির পর মায়ের পিঠে ও কোমরে যন্ত্রণার উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে থাকে। ক্যালশিয়ামের ঘাটতির কারণে পিঠে ব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। অথচ মায়েরা মনে করে, সিজারিয়ান সেকশন করার আগে কোমরে ইঞ্জেকশন দেওয়ার কারণে ব্যথা হচ্ছে।
সিজারিয়ানের পরে মায়ের শারীরিকভাবে পুনরায় সচল করার জন্য ১ মাস পর থেকেই উচিত এক্সারসাইজ করা। ফলে মায়ের পেটের যে পেশি— রেকটাস অ্যাবডোমিনিস তার জোর বাড়ে ও বেশ কিছু সমস্যা দূরে থাকে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment