Categories: ত্বক

Vitiligo বা শ্বেতী রোগ কেন হয় ? শ্বেতী রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

Published by

ভিটিলিগো বা শ্বেতী  হল ত্বকের এমন এক সমস্যা, যাতে ত্বকের ওপর সাদা ছোপ তৈরি হয়। শরীরের যে কোনো অংশ এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এবং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই শরীরের নানা স্থানে এই সাদা ছোপ দেখতে পাওয়া যেতে পারে।

শ্বেতী রোগ কেন হয় ও কাদের মধ্যে এই রোগটি হওয়ার স্বম্ভাবনা বেশী ?

ত্বক তার সাধারণ রঙ হারিয়ে ফেলে কারণ ত্বকের মেলানিন কমে যায়। কিছু কারনের জন্য ত্বকের রঙের জন্য প্রয়োজনীয় কোশ মেলানোসাইট নষ্ট হয়ে যায়। ভিটিলিগো ঠিক কি কারনে হয়ে থাকে তা এখনও অজানা। অটোইমিউন ডিজিজও এর কারন হতে পারে, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাইরের জীবাণুকে আক্রমণ করার বদলে নিজের শরীরের কোশকেই আক্রমণ করে বসে। যদিও সমস্ত গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যেই এই রোগটি দেখা যায়, তবে বাদামী বর্ণের ত্বকের মানুষদের ভেতর এটা বেশি চোখে পড়ে।

      পুরুষ মহিলা সবাই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অল্পবয়সীদের ভেতর এই রোগটি দেখতে পাওয়া যায়, সাধারণত ১০–৩০ বছরের মধ্যে। সবক্ষেত্রেই ৪০ বছরের মধ্যে এটা দেখা যায়।

      ভিটিলিগো বংশগতির কারনে হয়ে থাকে। পরিবারে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে অথবা, কারোর অল্প বয়সে পাকা চুলের সমস্যা (premature gray hair) থাকলে পরবর্তী কালে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভেতর ভিটিলিগো দেখা দিতে পারে। থাইরয়েডের মতো অটোইমিউন ডিজিজ এবং টাইপ–১ ডায়াবেটিসও এই রোগের পরোক্ষ কারণ বলে মনে করা হয়।

শ্বেতী রোগের লক্ষণগুলি কি?

ত্বকের ওপরে নানা জায়গায় দ্রুত রঙ চলে যেতে থাকে। সাদা ছোপ দেখা যাওয়ার পর তা কিছুদিন একই রকম থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। ভিটিলিগো সাধারণত শরীরের যেসব জায়গায় দেখা যায় সেগুলি হল–

  • শরীরের ভাঁজ
  • যেসব জায়গায় আগে আঘাত লেগেছিল
  • ত্বকের যেসব জায়গা সূর্যের আলোতে উন্মুক্ত থাকে
  • তিল বা আঁচিলের চারপাশে
  • মিউকাস মেম্ব্রেন (নাক ও মুখের লাইনের চারপাশে)

এটি চোখের পাতা এবং চুলেও হতে পারে।

যেসব জায়গায় সাদা ছোপ তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেখানে আবার নতুন করে রঙ ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

ভিটিলিগো বা শ্বেতী কত ধরনের হয়?

পাঁচ প্রকারের ভিটিলিগো হয়। শরীরের কোন অংশে এটি হয়েছে, সেটার ওপর নির্ভর করে এর শ্রেনীবিন্যাস করা হয়।

জেনারালাইজড এটি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে সারা শরীরে সাদা ছোপ দেখতে পাওয়া যায়।

সেগমেন্টালএই ক্ষেত্রে শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে ভিটিলিগো হয়ে থাকে। যেমন মুখে বা হাতে।

ফোকালত্বকের কোনো একটা বিশেষ জায়গায় যখন সাদা ছোপ দেখা যায় এবং এটি আর না ছড়িয়ে ওই জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।

ট্রাইক্রোমত্বকের কোনো জায়গা যখন সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায় এবং সেই জায়গাটা ঘিরে থাকে হাল্কাভাবে রঙ চলে গেছে এমন ত্বক এবং তাকে ঘিরে থাকে সাধারণ রঙের ত্বক

ইউনিভার্সাল এটি একটি অত্যন্ত রেয়ার অবস্থা। এই ক্ষেত্রে শরীরের প্রায় ৮০% ত্বকের রঙই নষ্ট হয়ে যায়।

ভিটিলিগোর রোগ নির্ণয়

চিকিৎসক সাধারণ ভাবে ত্বকের অবস্থা দেখেই রোগ ধরতে পারেন, তবে রক্ত পরীক্ষার সাথে সাথে আরও কিছু পরীক্ষাও তিনি করতে পারেন। যেমন –

স্কিন বায়োপসিত্বকের সামান্য অংশ নিয়ে গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়

উডস ল্যাম্প টেস্ট চিকিৎসক এই ক্ষেত্রে UV ray তলায় ভিটিলিগো আক্রান্ত ত্বকের অংশগুলো পরীক্ষা করেন।

ভিটিলিগো বা শ্বেতী রোগের চিকিৎসা কি?

ভিটিলিগোয় আক্রান্ত ত্বক কখনোই পুরোপুরি সেরে ওঠে না, তবে ত্বকের অবস্থার পরিবর্তন করে তাকে কিছুটা ভালো করা যায়। কোন চিকিৎসা পদ্ধতিটা ব্যবহার করা হবে তা নির্নয় করা হয় রোগীদের বয়স এবং ত্বকের কতটা অংশ ভিটিলিগোয় আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর।

ভিটিলিগোর ওষুধ

চিকিৎসক কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম প্রেসক্রাইব করতে পারেন, যাতে ত্বকের যে অংশের রঙ চলে গেছে, সেটা যাতে ফেরত আসতে পারে। এই ক্রিম ব্যবহারে ত্বকের রঙে পরিবর্তন আসতে অনেক মাস সময় লেগে যেতে পারে। এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বকে লম্বা লম্বা দাগ দেখা দিতে পারে এবং ত্বক পাতলাও হয়ে যেতে পারে।

ভিটিলিগো যদি খুব দ্রুত পরিমানে বাড়তে থাকে, তাহলে চিকিৎসক কর্টিকোস্টেরয়েড পিল অথবা ইঞ্জেকশন প্রেসক্রাইব করতে পারেন।

খুব বিরল ক্ষেত্রে চিকিৎসক calcineurin inhibitor ointment প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। সাধারণত মুখ ও গলার চারপাশে এবং খুব অল্প জায়গায় যদি ভিটিলিগো দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে এই অয়েন্টমেন্ট চিকিৎসক দিতে পারেন। তবে এই ওষুধটি স্কিন ক্যান্সার ও লিম্ফোমার সাথে সংযুক্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা এটা সচরাচর প্রেসক্রাইব করেন না।

       কখনো কখনো চিকিৎসকরা লাইট থেরাপি ব্যবহার করেন। তখন psoralen নামক একটি ওষুধ খেতে হয় কিংবা অয়েন্টমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করতে হয় তারপর লাইট থেরাপি করা হয়।

      কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ না করলে তখন চিকিৎসক ডিপিগমেন্টেশান পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এতে দিনে একবার বা দুবার করে প্রায় ৯ মাস ধরে ত্বকে একটা পদার্থকে প্রবেশ করানো হয়। এর ফলে সাধারণ ত্বকের রঙ আস্তে আস্তে ভিটিলিগোয় আক্রান্ত ত্বকের রঙের মতো হয়ে যায়।

চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল—

  • ফুলে যাওয়া
  • লাল হয়ে থাকা
  • চুলকানি
  • শুষ্ক ত্বক

ভিটিলিগোর অল্টারনেটিভ ওষুধ

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে জিঙ্কো বাইলোবা ত্বকের কিছুটা রঙ ফেরাতে সক্ষম।

কেউ কেউ মনে করেন কিছু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে ফোটোথেরাপি খুব ভালো এবং দ্রুত কার্যকরী হয়—

  • আল্ফা-লিপোইক অ্যাসিড
  • ফলিক অ্যাসিড
  • ভিটামিন-সি
  • ভিটামিন–বি ১২

ভিটিলিগোর ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রন

  • ভিটিলিগোয় আক্রান্ত ত্বকের অংশকে মেক আপ দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে
  • বাইরে বেরোলে অন্তত spf 30 যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতি দু’ঘন্টা অন্তর তা রিপিট করতে হবে
  • ট্যাটু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটা ত্বকের যে ক্ষতি জয়, তা ভিটিলিগোকে আরও বাড়িয়ে তোলে

ভিটিলিগোর চিকিৎসায় সার্জারি

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ না করলে তখন চিকিৎসক সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন।

স্কিন গ্রাফটিং ভিটিলিগো যদি খুব অল্প জায়গায় ছড়িয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসক এটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটিলিগোয় আক্রান্ত ত্বকের অংশকে স্বাভাবিক ত্বকের অংশ দিয়ে পূরণ (replace) করা হয়।

ব্লিস্টার গ্রাফটিংসার্জেন এই ক্ষেত্রে সাকশন ব্যবহার করে ত্বকের ভালো অংশের ওপরে ব্লিস্টার তৈরি করেন তারপর সেটা ত্বকের রঙহীন অংশের ওপরে সরিয়ে নিয়ে আসেন।

সেলুলার সাসপেনশান ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসক ত্বকের ভালো অংশ থেকে টিস্যু নিয়ে একটি দ্রবনে রাখেন, তারপর তা রঙহীন ত্বকের ওপর দিয়ে বুলিয়ে নিয়ে যান। এই পদ্ধতিতে কাজ হতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

ভিটিলিগোর অন্যান্য সমস্যা

ভিটিলিগোর রোগীরা অন্যান্য যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হন, তা হল—

নিজের চেহারার পরিবর্তন বেশিরভাগ সময়েই রোগীদের ভেতর স্ট্রেস, ডিপ্রেশন তৈরি করে।

  • পরিবারের সাথে এবং বন্ধুদের সাথে কথা বলুন।
  • অনলাইনে অথবা সামনা-সামনি একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এমন মানুষদের সাথে কথা বলুন
  • সবসময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার যা সঠিক তা নির্বাচন করে দেবেন।
Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago