বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েরা যত রকম সমস্যা ভোগে তার মধ্যে একটি খুবই সাধারণ সমস্যা হল অ্যাকনি বা ব্রণ, এখন প্রশ্ন হল অ্যাকনি বা ব্রণ কেন হয়? আমাদের ত্বকে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যাদের পোর্স (Pores) বলা হয়। এগুলো ত্বকের ওপর জমা হওয়া তেল, ব্যাকটেরিয়া, মৃত কোশ, ধুলো–ময়লা ইত্যাদির দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই পিম্পল বা ব্রন তৈরি হয়। যখন ত্বকে এই সমস্যাটা বারে বারে ফিরে আসে তখন তাকে অ্যাকনি বলা হয়। অ্যাকনি ত্বকের অত্যন্ত সাধারণ একটা সমস্যা, যদিও এটি যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং এর কারনে ইমোশনাল ডিস্ট্রেসও হতে পারে । অ্যাকনি বা ব্রণ শুকিয়ে গেলে সেখানে দাগ তৈরি হয়, কিছু দাগ মিলিয়ে গেলেও অনেক সময় মুখে দাগ থেকেই যায়। কিছু চিকিৎসা ও নিয়মের মাধ্যমে অ্যাকনির সংখ্যা ও দাগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অ্যাকনি শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে। সাধারণত মুখ, গলা, পিঠে বেশি হয়। কারোর যদি অ্যাকনির সমস্যা থাকে তাহলে তার ত্বকে প্রচুর পরিমানে সাদা বা কালো রঙের পিম্পল হয়ে থাকে। কালো পিম্পল, অর্থাৎ ব্ল্যাকহেডস ত্বকের উপরিভাগে মুক্ত অবস্থায় থাকে এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে কালো রঙের হয়ে থাকে। সাদা পিম্পল, অর্থাৎ হোয়াইট হেডস ত্বকের উপরিভাগের একটা পাতলা আবরনে ঢাকা থাকে, তাই সাদা রঙের হয়। এছাড়াও যে যে কারনে অ্যাকনি হয়ে থাকে সেগুলি হল —
পপিউলস — রোমকূপে প্রদাহ বা ইনফেকশন হলে তখন সেখানে লাল, ফোলা ছোট ছোট পিম্পল এর মতো তৈরি হয়। এগুলো বেশিরভাগ সময় যন্ত্রনাদায়ক হয়।
পসটিউলস— ছোট ছোট লাল পিম্পল যার মাথায় পুঁজের মতো জমা হয়।
নোডিউলস— ত্বকের নীচে তৈরি হওয়া বড় বড় এবং শক্ত পিম্পলের মতো অংশ। এটিতে যন্ত্রণা হয়।
সিস্ট — ত্বকের নীচের বড় বড় লাম্প। এতে পুঁজ থাকে এবং যন্ত্রনাদায়ক হয়।
ত্বকের ছিদ্র বা পোরসগুলি যখন তেল, ব্যাকটেরিয়া ও ধুলো ময়লা দ্বারা আবদ্ধ হয়ে যায় তখন অ্যাকনি তৈরি হয়। ত্বকের প্রতিটি পোর –এ এক একটা ফলিকল থাকে। এই ফলিকল গুলিতে রোম এবং সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড বা তৈল গ্রন্থি থাকে। এই সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে সেবাম বা তেল উৎপন্ন হয় এবং তা রোমের মাধ্যমে ত্বকের উপরিভাগে চলে আসে। এই তেল ত্বককে নরম এবং আর্দ্র রাখতে এবং ত্বকের বলিরেখা কম রাখতে সাহায্য করে।
এই তেল নির্গমনের পদ্ধতিতে এক বা একাধিক সমস্যার জন্য অ্যাকনি হতে পারে। যেমন —
এই সমস্যাগুলোর কারনে পিম্পল তৈরি হয়। যখন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে ত্বকের ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে যায় এবং তৈলগ্রন্থিতে উৎপন্ন হওয়া তেল বেরোতে পারে না, তখন পিম্পল হয়।
অনেকে মনে করেন যে চকোলেট বা তেলে ভাজা জাতীয় খাবার বেশি খেলে অ্যাকনির সমস্যা বেড়ে যায়। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। যে যে কারনে অ্যাকনি হওয়ার রিস্ক বেড়ে যায় সেগুলি হল—
সাধরনত বয়ঃসন্ধির সময়ে নানা হরমোনাল পরিবর্তনটা কারনে ত্বকে অতিরিক্ত মাত্রায় তেল উৎপন্ন হয়, ফলে অ্যাকনির সমস্যাও বেড়ে যায়। সাধারণত এই হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে যে অ্যাকনি হয় তা বয়ঃসন্ধির সময় টা চলে গেলে আস্তে আস্তে কমে যায়।
অ্যাকনি কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা ঘরে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি
ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা
অ্যাকনির জন্য বেশকিছু সাধারণ ওষুধ আছে, যেগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়া কে মারতে এবং ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করতে সাহায্য করে। এগুলি হল —
স্বাভাবিক ভাবে এগুলোয় কাজ না হলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক —
যেসব মেয়েদের হরমোনের সমস্যার কারনে অ্যাকনি হয়, তাদের চিকিৎসার জন্য বার্থ কন্ট্রোল পিল অথবা Spironolactone দেওয়া হয়। এর ফলে হরমোন কে নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বকে অতিরিক্ত তেলের উৎপাদন কে বন্ধ রাখা যায়।
ভিটামিন – এ জাতীয় ওষুধ Isotretinion সিরিয়াস নোডিউলার অ্যাকনির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর সাইড এফেক্ট থাকে, তাই যখন অন্য কোনো ওষুধ কাজ করে না, তখন এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
অ্যাকনির সমস্যা যদি খুব বেশি হয় এবং তার ফলে ত্বকে খুব বাজে ভাবে দাগ তৈরি হয়, তাহলে চিকিৎসক বেশকিছু পদ্ধতি ব্যবহার করেন এগুলোকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য —
অ্যাকনির চিকিৎসার ফলাফল
সাধারণ ভাবে অ্যাকনির চিকিৎসা খুব সফল হয়ে থাকে। চিকিৎসা শুরুর ছয় থেকে আট সপ্তাহের ভেতর রেজাল্ট দেখা যায়। যদিও মাঝেমাঝে আবার নতুন করে অ্যাকনি বেড়ে উঠতে পারে, তবে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় তা সহজেই নিয়ন্ত্রন করা যায়। যদি দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, তো এই দাগগুলোকেও সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা যায়।
এককথায় বলা যায় যে, অ্যাকনিকে আটকানো প্রায় অসম্ভব। তবে কিছু সাধারণ নিয়ম পালন করে চিকিৎসার পরে অ্যাকনিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ও ফের তার আউটব্রেক থেকে ত্বককে বাঁচানো যায়। সেগুলি হল —
চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই আলোচনা করুন যে কি কি পদ্ধতি পালন করলে অ্যাকনিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment