কোনও ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট কোনও বস্তুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত হারে সংবেদনশীল হন ও তাঁর শরীরে নানাবিধ উপসর্গ প্রকাশ পায় তাহলে সেই উপসর্গই হল অ্যালার্জি (Allergy)। এখন প্রশ্ন হল, অনেকের কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে অ্যালার্জি থাকে না অথচ একজন ব্যক্তির সেই বিষয়ে অ্যালার্জি থাকে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, কার কোন বিষয়ে অ্যালার্জি থাকবে তা ওই মানুষটির ব্যক্তিগত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে।
ধরা যাক বাতাসে ভাসমান কোনও ধূলিকণা বা ফুলের রেণু প্রশ্বাসের সঙ্গে নাক দিয়ে প্রবেশ করল শরীরে। শ্বাসনালীর দেওয়াল অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায়, সেখানকার কোষগুলি থেকে নানারকম ক্ষরণ শুরু হয়। এর ফলে বিভিন্ন প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, বুকে চাপ চাপ ভাব লাগছে, চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে, নাক দিয়ে জল পড়ছে ইত্যাদি। এগুলি হল অ্যালার্জির লক্ষণ। তবে, আলাদা আলাদা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে পৃথক উপসর্গ দেখা যায়। যেমন বসন্তের সময় গাছে নতুন ফুল আসে। অজস্র ফুলের রেণু, ঘাসফুলের রেণু বাতাসে ভেসে সেগুলি আমাদের নাক, চোখ এবং ফুসফুসে প্রবেশ করে। এর জেরেও অ্যালার্জি হতে পারে। যাঁরা ওই অ্যালার্জিতে অতি-সংবেদনশীল তাঁদের অ্যাজমাও হতে পারে। তবে, বসন্ত মানেই যে অ্যালার্জির প্রবনতা বারবে,তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। কারও সারাবছরই অ্যালার্জির সমস্যা থাকে।
অ্যালার্জি হতে পারে ভেবে, বা অ্যালার্জি আছে বলে আগে থেকেই আতঙ্কে ভোগার কোনও দরকার নেই। মরশুমি অ্যালার্জির ক্ষেত্রে র্নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত ১৫ দিন আগে সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ওষুধের দরকার পড়লে ডাক্তারবাবুর পরামর্শমতো মরশুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে হবে। তবে কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এখন যেভাবে পরিবেশের দূষণ বেড়েছে তাতে সারা বছরই বেশিরভাগ মানুষ বিশেষত বাচ্চারা ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছে। ডাস্ট অ্যালার্জির উপসর্গ হিসেবে থাকে চোখ চুলকানো, বারবার হাঁচি পড়ার মতো সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে মানুষটিকে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ড্রপ নিতে হবে বা ওষুধপত্র খেতে হবে। কারও এই সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। তাদের উচিত সঙ্গে ইনহেলার রেখে দেওয়া। আবার কারও কারও কোনও জায়গায় গেলে অ্যালার্জি হতে পারে। তাদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং সচেতনভাবে জায়গাগুলি এড়িয়ে যেতে হবে। তবে, কী কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে, তার কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাবার (Food Allergy) যেমন ডিম, সামুদ্রিক মাছ, শেল ফিশ এমনকী বেগুন খেলেও কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে অ্যালার্জি। অনেকের বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা জাঙ্ক জুয়েলারি ব্যবহারে, ব্যথা কমার বিভিন্ন ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খেলে, অ্যাজমা (Asthma) থাকলেও অ্যালার্জি হতে পারে। আবার দোলে সময় কমবেশি সবাই রং খেলে। রঙে বিভিন্ন কেমিক্যাল দেওয়া থাকে। সেই কেমিক্যাল বা রাসায়নিক থেকেও ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর থেকে অ্যালার্জিও হতে পারে।
নির্দিষ্ট কিছু পরিবেশ পরিস্থিতিতে একই রকম সমস্যা হতে শুরু করলে একটু সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। সামান্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত সমস্যা তৈরি বা শুরু হয়, সেগুলির ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ধরন থাকে। সেই সময় সতর্ক থাকলে, অ্যালার্জির সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
অ্যালার্জি হওয়ার পিছনে জিনের কিছু বৈশিষ্ট্য দায়ী থাকতে পারে। আবার পরিবেশজনিত কারণেও অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির আবার দুই ধরনের। সিজনাল ও পেরেনিয়াল। শুধুমাত্র শরতে বা বসন্তে ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জি হলে তাকে সিজনাল এবং যে অ্যালার্জির প্রকোপ সারা বছর থাকে, তাকে পেরেনিয়াল বলে।
অ্যালার্জির চিকিৎসা মূলত তিনটি ধাপে হয়। প্রথম ধাপে রোগীর কাছে তাঁর ইতিহাস জানতে চাওয়া হয়। অর্থাৎ কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে, ঋতু পরিবর্তনের সময় তা বাড়ছে কি না প্রভৃতি জেনে নেন চিকিৎসক। এর মাধ্যমে অ্যালার্জির কারণ নির্ণয় চেষ্টা করা হয়।
এরপর চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপে স্কিন প্রিক টেস্ট (Skin Prick Test)এবং রেডিও অ্যালার্জোসোরবেন্ট টেস্ট নামে একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যালার্জির কারণ জানা যায়।
একেবারে শেষ ধাপে শুরু হয় চিকিৎসা। এক্ষেত্রে যে কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে, তা জীবন থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনমতো কিছু ওষুধও দেন ডাক্তারবাবুরা।
শরীরে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টি-হিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়েটার জাতীয় ওষুধ যেমন লিউকোস্টাইন, প্রস্টা গ্ল্যাসডিনও প্রয়োগ করা হয়।
সমস্যা জটিল হলে সেক্ষেত্রে অনেক সময় স্টেরয়েড দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। মোট কথা, অবস্থা বুঝে প্রয়োজনমতো ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে নিজে ওষুধ খেতে যাবেন না। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিন বা পরামর্শ নিন। কারণ, অনেক সময় অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ ব্যবহার করার পর অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাধ্য হয়ে স্টেরয়েড প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment