লিভার সুস্থ রাখার ১৩ টি সহজ উপায়

Published by

লিভারের রোগের সাথে লড়াই করার সবথেকে ভালো উপায় হল লিভারের রোগ না হতে দেওয়া। লিভার সুস্থ রাখার জন্য আমাদেরকিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।

লিভার সুস্থ রাখার ১৩ টি সহজ উপায় হল :-

১. স্বাস্থ্যকর শারীরিক ওজন বজায় রাখা :- যদি আপনার অতিরিক্ত ওজন হয়ে থাকে তাহলে আপনার ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা থেকে আপনি ননঅ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত হতে পারেন, যা কিনা লিভার ডিজিজ এর ক্ষেত্রে বর্তমানে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমাদের শারীরিক ওজন বজায় রাখা উচিত।

২. সুষম খাদ্যাভ্যাস :- উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, রিফাইন কার্বোহাইড্রেট (যেমন ময়দার রুটি, সাদা ভাত, পাস্তা) এবং চিনি ইত্যাদিকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কাঁচা বা অল্প রান্না করা সামুদ্রিক খাবার খাওয়া যাবে না। সুষম খাদ্যাভ্যাসের জন্য খাদ্যতালিকায় ফাইবার রাখতে হবে, যা তাজা ফল, সবজি, দানাশস্য ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। মাংসও খাওয়া যেতে পারে, তবে রেড মিট এড়িয়ে যেতে হবে। দুগ্ধজাত পন্য (লো ফ্যাট মিল্ক এবং খুব অল্প পরিমানে চিজ) এবং ফ্যাট (ভালো ফ্যাট, অর্থাৎ যেগুলো মোনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড, যেমন ভেজিটেবল অয়েল,বাদাম, বীজ ও মাছ) এবং এর সাথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল প্রচুর জল পান করতে হবে।

৩) নিয়মিত এক্সারসাইজ :- যখন আপনি নিয়মিত এক্সারসাইজ করবেন, তখন শরীর তার প্রয়োজনীয় এনার্জি এবং জ্বালানির জন্য ট্রাইগ্লিসারাইড বার্ন করে, ফলে লিভার ফ্যাটও কম থাকে।

৪) বিষাক্ত ও দূষিত পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে :- দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ লিভারের কোশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কীটনাশক, জীবানুনাশক, রাসায়নিক পদার্থ, আঠা ইত্যাদি বিষাক্ত পদার্থের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিস্কারের জন্য স্প্রে জাতীয় বস্তু ব্যবহার করার সময় দেখতে হবে, ঘরে যাতে যথেষ্ট হাওয়া বাতাস খেলা করে এবং অবশ্যই মাস্ক পরে থাকতে হবে।

৫) দায়িত্বশীল মানুষের মতো অ্যালকোহল পান করতে হবে :- অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। তারা লিভারের কোশগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং লিভারে ক্ষতের সৃষ্টি করে। চিকিৎসকের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন যে কতটুকু অ্যালকোহল পান আপনার জন্য উপযুক্ত। তিনি আপনাকে খুব সামান্য পরিমান পান করতে বলতে পারেন বা সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে দিতেও বলতে পারেন।

৬) অবৈধ ড্রাগের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে :- অবৈধ ড্রাগ, যেমন গাঁজা, কোকেন, হেরোইন, হ্যালুশিনোজেনস, ইনহেল্যান্টস অথবা সাইকোথেরাপিউটিক্স (যন্ত্রণা নাশক ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, স্টিমুল্যান্টস) যা চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াও অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। তাই অবৈধ ড্রাগের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৭) অন্যের ব্যবহার করা সূঁচ, পুনরায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে :- যদিও অন্যের ব্যবহার করা সূঁচ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয় না, তবুও এই বিষয়টাতে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিবার সূঁচ বা ধারালো কোনো জিনিস চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হলে, রোগী বা তার পরিজনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে তা পূর্বে অন্য কারোর ব্যবহার করা না হয়। ট্যাটু বা বডি পিয়ারসিং এর ক্ষেত্রেও কেবল পরিস্কার সূঁচ ব্যবহার করতে হবে।

৮) অন্য যেকোনো ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে আসলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে :- যদি কোনো কারনে অন্য কোনো ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে এসে পড়েন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং তাঁর পরামর্শ নিন।

৯) ব্যক্তিগত ব্যবহারের কিছু জিনিস (পার্সোনাল হাইজিন আইটেম) অন্য কারোর সাথে শেয়ার করবেন না :- নিজের রেজার, টুথব্রাশ এবং নেল ক্লিপার অন্য কাওকে ব্যবহারের জন্য দেবেন না এবং নিজেও অন্য কারোরটা ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলোর ভেতর সূক্ষভাবে খুব সামান্য রক্ত লেগে থাকতে পারে, যা সংক্রমিত হতে পারে।

১০) সুরক্ষিত যৌন সংসর্গের অভ্যাস রাখতে হবে :- অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গ বা একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে হেপাটাইটিস বি ও সি তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

১১) অবশ্যই হাত ধুতে হবে :- খাবার তৈরির আগে, খাওয়ার আগে, ডায়াপার পরিবর্তন করলে এবং শৌচ কার্যের পরে গরম জল ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

১২) যেকোনো ওষুধ খাওয়ার সঠিক পরিমান বজায় রাখুন :- যেকোনো ওষুধ ভুলভাবে খেলে, পরিমানে বেশি খেলে বা বিভিন্ন ওষুধ মিশিয়ে খেলে আপনার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্য কোনো ওষুধ বা নিষিদ্ধ ড্রাগের সাথে অ্যালকোহল কখনই মিশ্রণ করবেন না এবং একইসাথে যদি এগুলো খাওয়া নাও হয়, তাহলেও এই অভ্যাস লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আপনি কোনো ধরনের ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছেন কি না, তা অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে জানান।

১৩) ভ্যাক্সিন অবশ্যই নিন :- হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাক্সিন আছে। সময় মিতো সেগুলো অবশ্যই গ্রহণ করুন, যদিও দুর্ভাগ্যবশত হেপাটাইটিস সি এর কোনো ভ্যাক্সিন নেই।

Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago