কতখানি মদ খেলে হতে পারে লিভার ডিজিজ?

Published by

অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজ-এর অর্থ হল, অতি মাত্রায় অ্যালকোহল পানের কারণে হওয়া লিভারের অসুখ। অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজ-এর নানা পর্যায় আছে। পর্যায় অনুসারে বদলে যেতে থাকে রোগ লক্ষণ। মুশকিল হল খুব খারাপ পরিস্থিতিতে না পৌঁছানো অবধি লিভার ডিজিজের কোনও লক্ষণ থাকে না।

অ্যালকোহল এবং লিভার
লিভার অত্যন্ত জটিল এক অঙ্গ। লিভার রক্তের নানা দূষিত পদার্থকে ছেঁকে বের করে। খাদ্য হজমে সাহায্য করে। রক্তে সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সংক্রমণ ও নানা ধরনের অসুখের সঙ্গে লড়তেও সাহায্য করে।

লিভার এক আশ্চর্য অঙ্গ। বহু ক্ষতিকর পদার্থের সঙ্গে লড়াই করেও লিভার নিজেকে সুস্থ রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এমনকী এও দেখা গিয়েছে, লিভার নিজের ক্ষত নিজেই পূরণ করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, অ্যালকোহল আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত হানিকারক। প্রতিবার আমরা যখন অ্যালকোহল পান করি, ততবার লিভারের প্রচুর কোষ নষ্ট হয়। লিভার পুনরায় ক্ষত পূরণ করে। সমস্যা হল দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপানের অভ্যেস লিভারের কোষের এই পুনরজ্জীবনের ক্ষমতা নষ্ট করে। এর ফলে লিভারে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের পর্যায়
সাধারণভাবে বলা যায়, অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের তিনটি পর্যায় আছে।

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ

প্রতিদিন অনেকটা পরিমাণ অ্যালকোহল পানের অভ্যেস লিভারে ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। এমনকী অল্প কয়েকদিনের জন্য অনেকটা করে অ্যালকোহল পান করলেও লিভারে ফ্যাট জমে। এই সমস্যা অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলে। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার জিজিজ হল অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের প্রথম পর্যায়।

সমস্যা হল ফ্যাটি লিভার ডিজিজ-এর সেভাবে কোনও লক্ষণ থাকে না। তবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ইঙ্গিত দেয় যে একজন ব্যক্তি অনেকখানি মাত্রায় অ্যালকোহল পান করছেন। তবে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে লিভারকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব। মাত্র ২ সপ্তাহ অ্যালকোহল পান বন্ধ রাখলে লিভার পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করে।

অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস
সংক্রমণের কারণে হওয়া হেপাটাইটিসের তুলনায় অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস ভিন্ন। কারণ অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস সম্ভাব্য ভয়াবহ শারীরিক অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল পানের অভ্যেসের কারণে হতে পারে অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস। মুশকিল হল অনেক অ্যালকোহলিকই মদ্যপানজনিত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর বুঝতে পারেন তিনি বিপজ্জনকভাবে মদ্যপান করছেন।

কিছু ক্ষেত্রে আবার অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলেও হতে পারে অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস।

সিভিয়র অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি।

সিরোসিস
সিরোসিসে লিভারে তৈরি হয় স্থায়ী স্কার টিস্যু। এই পর্যায়েও যে বহু লক্ষণ দেখা যায় এমন নয়। সমস্যা হল সিরোসিস অবস্থা থেকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফেরা সাধারণত সম্ভব হয় না। তবে অ্যালকোহল পান বন্ধ করলে নতুন করে সমস্যা হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।

অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের চিকিৎসা

  • অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের সেভাবে কোনও চিকিৎসা নেই। প্রধান চিকিৎসাই হল সারাজীবনের জন্য অ্যালকোহল পান বন্ধ করা। অ্যালকোহল পান বন্ধ করলে সেক্ষেত্রে লিভার পুনরায় তার আগের সুস্থ অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করে।

মুশকিল হল, কোনও মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তির পক্ষে হঠাৎ করে মদ্যপান ত্যাগ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্ট বা মদ্যপান ছাড়তে সাহায্য করে এমন সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যায়।

  • লিভার সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিলে সেক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার দরকার পড়তে পারে।

জটিলতা
ধূমপান, রক্তচাপ এবং মদ্যপানজনিত লিভারের অসুখ এখন ভারতের অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের কারণে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে যদি গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল ট্র্যাক্টে রক্তপাত, ব্রেনে টক্সিন জমে যাওয়া, পেটে ফ্লুইড জমা এবং কিডনির সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম থাকে।

অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজ প্রতিরোধ

প্রথম এবং শেষ শর্ত একটিই— মদ্যপান বন্ধ করতে হবে।

এমনকী আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপানে অভ্যস্ত থাকনে তাহলেও আজ থেকেই মদ্যপান বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করুন।

অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের উপসর্গ

অ্যালকোহল থেকে লিভার খারাপ হওয়ার সেভাবে কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কারণ অ্যালকোহল পানই একটি বড় বিপদ। তবু কিছু কিছু লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত—
প্রাথমিক লক্ষণ

  • মাঝেমধ্যেই পেটে ব্যথা।
  • খিদে কমে যাওয়া।
  • ক্লান্তি
  • বারংবার অসুস্থ হয়ে পড়া।
  • ডায়ারিয়া।

অসুখের পরবর্তী পর্যায়ের উপসর্গ
যত লিভার বেশি মাত্রায় খারাপ হতে থাকে ততই আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে—

  • ত্বকে হলুদ ভাব। চোখ সাদা হয়ে যাওয়া।
  • ফ্লুইড জমে যাওয়ার কারণে পা ফুলে যাওয়া, বিশেষত গোড়ালি এবং পা।
  • পেটে ফ্লুইড জমে পেট ফুলে যাওয়া।
  • উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে জ্বর এবং কাঁপুনি।
  • ত্বকে চুলকানি।
  • চুল ঝরার সমস্যা।
  • ওজন কমে যাওয়া।
  • কারও কারও স্মৃতির সমস্যা হয়। ঘুম আসতে চায় না। ব্রেনে টক্সিন জমে যাওয়ার কারণে বের্নের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটে ও রোগী অস্বাভাবিক আচরণ করেন। রক্তবমি করেন কেউ কউে।

কখন চিকিৎসা করাবেন
রোগের অগ্রগতি হলে তবেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরে উপসর্গ প্রকাশ পায়। না হলে সেভাবে কোনও লক্ষণই থাকে না। তাই মদ্যপানের অভ্যেস থাকলে এখনই সতর্ক হন।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago