অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি? অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কি?

Published by

সংক্রমণের কারণে অ্যাপেনডিক্স ফুলে গেলে তীব্র ব্যথা হয়। এই অবস্থাকেই বলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস। প্রশ্ন হল অ্যাপেনডিক্স অঙ্গটি আসলে কী? কাজই বা কী এই অঙ্গের? ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের পাতলা ছোট্ট থলির মতো অংশ হল অ্যাপেনডিক্স। বৃহদন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে থাকে এই অঙ্গ। মানবশরীরে কেন অ্যাপেনডিক্স থাকে তা কেউ জানে না। অবশ্য সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা যাচ্ছে, অ্যাপেনডিক্সের অন্দরে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া মজুত থাকে। কোনও অসুখ বা অন্য কোনও কারণে পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে গেলে অ্যাপেনডিক্স থেকে ভালো ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসে ও পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। তবে এই নিয়ে গবেষণা এখনও জারি আছে। মোট কথা অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্স বাদ দিলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ

তলপেটের মাঝামাঝি অংশে বা নাভির চারপাশে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা শুরু হয়। প্রথম দিকে ব্যথা একটু চাগাড় দেয় ও কিছুক্ষণ পরে ফের কমে যেতে পারে। পুনরায় ব্যথা শুরু হতে পারে। তবে কয়েকঘণ্টার মধ্যে ব্যথা পুনরায় চাগাড় দেয় ও তলপেটের ডানদিকে বা ঠিক যেখানে অ্যাপেনডিক্স নামে অঙ্গটি রয়েছে সেখানে ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা স্থায়ী হয় এবং ক্রমশ ব্যথা বাড়তে থাকে।

রোগী পেটের ওই অংশে হাত দিয়ে চেপে রাখার চেষ্টা করেন। এছাড়া রোগীর কাশির উপসর্গ দেখা দেয়। ব্যথার চোটে রোগী নিজের থেকে হাঁটতে পারেন না। কমে যেতে পারে খিদে। শরীরে অস্বস্তি হয়। কারও কারও ডায়ারিয়াও হতে পারে। কনস্টিপেশনের সমস্যাও দেখা যায় কারও কারও ক্ষেত্রে।

কখন বুঝবেন পরিস্থিতি খারাপ?

পেটের ব্যথা ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠলে কখনওই দেরি করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্ভব হলে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে চলে যান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথার প্রাবল্যের জন্য রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস বার্স্ট

অ্যাপেন্ডিসাইটিস বার্স্ট হওয়ার সম্পর্কে নিশ্চয় অনেকেই শুনেছেন। অ্যাপেডিক্স বার্স্ট অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। কারণ চিকিৎসার অভাবে অ্যাপেনডিক্সে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে ও সেই ছিদ্র দিয়ে অন্ত্রের ভেতরের নানা উপাদান, পরিপাক হয়ে যাওয়া খাদ্যের অংশ এবং মল বেরিয়ে যেতে পারে ও যা পেটের খালি অংশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে পেটের ভিতরে নানা অঙ্গের মধ্যে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে তেমনই সংক্রমণ রক্তেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অনেকক্ষেত্রেই এমন ঘটনা থেকে প্রাণ নিয়ে টানটানি পড়ে যেতে পারে। তাই পেটে অসহ্য ব্যথা হলে অপেক্ষা করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কেন হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস?

অ্যাপেনডিক্স কেন হয় তা এখনও অজানা। তবে মল প্রবেশ করে পাথরের মতো জমে গেলে, খাদ্যবস্তু প্রবেশ করলে, গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে অ্যাপেনডিক্সে থাকা ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে প্রদাহ দেখা দেয় ও অ্যাপেনডিক্স ফুলে যায়। শুরু হয় ব্যথা।

কাদের হয়?

প্রতি ১৩ জন ব্যক্তির মধ্যে ১ জন জীবনের কোনও না কোনও সময় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যায় পড়েন বলে জানা গিয়েছে। মনে রাখবেন, যে কোনও বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বেশি হয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস নির্ণয়

পেটের যে অংশে অ্যাপেনডিক্স থাকে সেই অংশে হাত দিয়ে চিকিৎসক বোঝার চেষ্টা করতে পারেন যে ব্যথা অ্যাপেনডিক্সের কারণেই হচ্ছে কি না! তবে দরকার পড়লে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে সংক্রমণ আছে কি না তা বোঝা যায়। এছাড়া আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করলেও অ্যাপেনডিক্সের ফোলা ভাব ধরা পড়ে যায়। সমস্যা হল ব্যথা খুব তীব্র হলে সেক্ষেত্রে এত পরীক্ষা করার সময় থাকে না। এমন অবস্থায় চিকিৎসক সরাসরি রোগনির্ণায়ক ল্যাপারোস্কোপি করে বোঝার চেষ্টা করেন পেটের অন্দরে ঠিক কী হয়েছে। অ্যাপেডিক্সের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেইসময় অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়লে সার্জারি করে অ্যাপেনডিক্স বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা

মনে রাখবেন কোনও ওষুধ খেয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিস সারানো সম্ভব নয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের একমাত্র চিকিৎসা সার্জারির মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্স বাদ দিয়ে দেওয়া। অ্যাপেনডিক্স বাদ দেওয়ার সার্জারির নামে অ্যাপেনডেকটমি বা অ্যাপেনডিসেকটমি।

বর্তমানে ল্যাপারোস্কোপি বা কি হোল সার্জারির মাধ্যমে দ্রুত এবং সহজেই অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্স বাদ দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে পেটে ছোট্ট ফুটো করে তার মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা এবং অপারেশনের যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো হয়। এরপর বাদ দিয়ে দেওয়া হয় অ্যাপেনডিক্স। তবে অ্যাপেনডিক্স বার্স্ট হলে বা ফেটে গেলে সেক্ষেত্রে ওপেন সার্জারি করে অ্যাপেনডিক্স বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ল্যাপারোস্কোপি সার্জারিতে এক থেকে দু’সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যান।

সতর্কতা

অল্প বয়সি মহিলাদের পেটে ব্যথা হলে অনেকেই ভাবেন মেনস্ট্রুয়াল পেন-এর কারণে এমন হচ্ছে। অথচ সবসময় যে বিষয়টা পিরিয়ড সংক্রান্ত ব্যথা হবে এমন নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথার সঙ্গে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সিকে গুলিয়ে ফেলেন অনেকে। এমন ক্ষেত্রেও সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কোনও মহিলার পেটে তীব্র ব্যথা হলে অ্যাপেনডিসাইটিসের সঙ্গে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির কথাও ভাবতে হবে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago