মানবদেহে রক্ত তৈরি হয় বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা থেকে। সেখানে প্রথমে অপরিণত রক্ত কোষ থাকে। সেগুলি ক্রমশ পরিণত রক্তকোষে পরিণত হয়। এই ধরনের কোষগুলি হল— লোহিত রক্তকণিকা। যার মধ্যে হিমোগ্লোবিন থাকে যা আমাদের দেহে অক্সিজেন বহন করেন। শ্বেত রক্তকণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তৃতীয়ত রয়েছে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা যা রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করে। পরিণত রক্তকোষগুলি বোন ম্যারো থেকে তৈরি হওয়ার পর আমাদের রক্তে মেশে। ব্লাড ক্যান্সার হলে সেক্ষেত্রে বোন ম্যারোর মধ্যে অপরিণত ব্লাড সেল বা রক্তকোষের সংখ্যা বেড়ে যায় অনেক বেশি। এরা আর পরিণত হয় না।
পরিণত না হলে রক্তপ্রবাহে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা , অনুচক্রিকা রক্তে মেশে না। বোনম্যারোর অন্দরে অপরিণত শ্বেতরক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। বেশিরভাগ বোন ম্যারোর কোষগুলিই ওই অপরিণত শ্বেত রক্তকণিকা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। এই সমস্যাকেই মূলত বলে ব্লাড ক্যান্সার।
বোন ম্যারো এবং লিম্ফয়েড টিস্যু— এর যে কোনও রকম ক্যান্সারই কিন্তু হিমাটোলজিক্যাল ম্যালিগনেন্সি বা ব্লাড ক্যান্সার। ব্লাড ক্যান্সারকে মূলত দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়— ১) অ্যাকিউট ব্লাড ক্যান্সার।
এক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক নানা উপসর্গজনিত জটিলতা অনেক বেশি থাকে। রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার দরকার পড়ে। না হলে রোগীর জীবন সংশয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ২) আর একটি সমস্যা হল— ক্রনিক ব্লাড ক্যান্সার। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রোগীর শরীরে অসুখটি থাকতে পারে। চিকিৎসাও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে ক্রনিক ব্লাড ক্যান্সারে অ্যাকিউট অবস্থার মতো তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হয় না। পরিকল্পনা করে এগনো যায় কারণ চিকিৎসকের হাতে সময় থাকে।
অ্যাকিউট এবং ক্রনিক ব্লাড ক্যান্সার
অ্যাকিউট এবং ক্রনিং ব্লাড ক্যান্সারেরও আবার অনেকরকম ভাগ আছে। উদাহরণ হিসেবে লিউকেমিয়ার কথা বলা যায়।
অ্যাকিউট লিউকেমিয়াস, ক্রনিক লিউকেমিয়া, অ্যাকিউট মাইলয়েড লিউকেমিয়া, অ্যাকিউট লিম্ফয়েড লিউকেমিয়া ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে লিম্ফোমা, মাল্টিপল মাইলোমা, মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম ইত্যাদি। এইরকম বিভিন্ন নামের ব্লাড ক্যান্সার রয়েছে।
আমাদের বোন ম্যারো থেকে তৈরি হয় পরিণত রক্তের কোষ। এই ধরনের রক্তকোষগুলির নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। ফলে ব্লাড ক্যান্সার থাকলে রক্তে পরিণত ব্লাড সেলের অভাব দেখা যাবে। আর তাদের ঘাটতির জন্য শরীরে নানা ধরনের উপসর্গও তৈরি হয়।
অ্যানিমিয়া নিয়ে আলাদা চিন্তা
আমাদের দেশে অ্যানিমিয়া অতিপরিচিত সমস্যা। আমাদের দেশে সবচাইতে বড় সমস্যা হল আয়রন ডেফিশিয়েন্সি জনিত অ্যানিমিয়া।
বেশিরভাগ অ্যানিমিয়া রোগীর চিকিৎসা হয় আয়রন সাপ্লিমেন্ট দিয়ে। আর এক্ষেত্রেই আলাদা করে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে রাখতে হয় নজর। আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার পরেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না মনে হলে ও শরীরে প্রবল দুর্বলতা থাকলে, একটানা জ্বর গায়ে লেগে থাকলে, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাত হলে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে বিষয়টি সাধারণ অ্যানিমিয়া নয়। এমতাবস্থায় একজন হেমাটোলজিস্ট বা হেমাটোঅঙ্কোলজিস্টের কাছে গিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে যে কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যা আছ কি না। যদি ক্যান্সার থাকে তাহলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। ক্যান্সার না থাকলে দেখতে হবে অন্য কোন কারণে এমন অ্যানিমিয়া হচ্ছে।
ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা করার আগে দেখতে হবে ঠিক কোন ধরনের রক্তের ক্যান্সার হয়েছে। তা জানতে হলে দরকার অস্থিমজ্জার পরীক্ষার। লিম্ফনোডের ক্যান্সার হলে সেক্ষত্রে লিম্ফনোডের বায়োপ্সি করে দেখতে হবে কোন ধরনের ক্যান্সার হয়েছে। তারপর করতে হবে তার চিকিৎসা। রক্তের ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা হল কেমোথেরাপি আর অন্যান্য উপসর্গ কমানোর থেরাপি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপিও দিতে লাগে।
ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা না করালে রোগী শেষ পর্যন্ত অকালে প্রাণ হারান। তবে সঠিক পথে চিকিৎসা করা গেলে, বেশিরভাগ ব্লাড ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব।
অনেক রক্তের ক্যান্সারই আছে যেমন চাইল্ডহুড অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা হজকিনস লিম্ফোমা। এই ধরনের অসুখ শুধু কেমোথেরাপি দিয়েই সারিয়ে তোলা যায়। আবার অনেক ব্লাড ক্যান্সার আছে যা কেমোথেরাপি দিয়ে সারানো সম্ভব নয় বা প্রাথমিকভাবে সারিয়ে তুললেও রোগটি ফিরে আসে।
এমন ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতি আছে যাকে বলে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। তার জন্য দরকার স্বাস্থ্যকর দাতা যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হন রোগীর ভাই বা বোন।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment