ওভারিয়ান ক্যান্সারের চিকিৎসা

Published by

মহিলাদের ডিম্বাণু বা ওভাম সৃষ্টিকারক অঙ্গের টিস্যুর ক্যান্সারকে ওভারিয়ান ক্যান্সার বলে।ওভারিতে বা ডিম্বাশয়ে তিন ধরনের কোষ থাকে । ওভারির একেবারে ভিতরের দিকে স্তর গঠিত হয় এন্ডোডার্মাল সেল দিয়ে। এক্টোডার্মাল সেল দিয়ে গঠিত হয় মাঝের স্তর। মেসোডার্মাল সেল তৈরি করে বাইরের দিকের স্তর। এই তিনটি স্তরের যে কোনও একটি স্তরে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দেখা গিয়েছে এন্ডোডার্মাল স্তরে টিউমার কম বয়সি মেয়েদের হয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ৩০ বছর বয়সি মেয়েদের এন্ডোডার্মাল লেয়ারে টিউমারের সমস্যা হতে দেখা যায়। এমনকী বালিকা বয়সেও এন্ডোডার্মাল স্তরে টিউমার হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের টিউমার বিনাইন (সাধারণ টিউমার) হয়। তবে ম্যালিগন্যান্ট ধরনের ডায়ময়েড টিউমারও দেখা যায়। আবার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এন্ডোডার্মাল সাইনাস টিউমার। দ্বিতীয় স্তরে যে টিউমার হয় তাকে বলে ফাইব্রোমা বা লিপোমা। এই ধরনের টিউমার সাধারণত বিনাইন হয়।

ক্যান্সারযুক্ত টিউমার সবচাইতে বেশি দেখা যায় বাইরের স্তরে। একটু বেশি বয়সে বা মেনোপজ হয়েছে এমন হিলাদের এই ধরনের টিউমার হতে দেখা যায়। এই সমস্যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় সিরস অ্যাডিনোকার্সিনোমা বলে। এছাড়া ‘প্যাপিলারি সিরস কার্সিনোমা’ হতেও দেখা যায়।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ

সব ধরনের ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ অনেক পরে প্রকাশ পায়। ওভারির আকার খুব ছোট হয়। তাই ক্যান্সারের আকার বড় হয়ে যতক্ষণ না ইউটেরাস ও খাদ্যনালীর মধ্যের জায়গা দখল করে ফেলছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রায় কোনও উপসর্গই প্রকট হয় না। টিউমার আকারে বড় হওয়ার সঙ্গে পেট ফুলতে থাকে। টিউমার থেকে একধরনের তরল বেরতে থাকে যা পেটে জমতে থাকে। এতদূর রোগ ছড়িয়ে পড়ার পরেই নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। উদাহরণ হিসেবে পেটে গ্যাস জমা, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যার কথা বলা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার পরেই পায়খানার বেগ চাপে। ওভারিয়ান ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হল আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম। এই কারণে মেনোপজের পর কোনও মহিলার নানা ধরনের হজমের সমস্যা দেখা দিলে ওভারিয়ান ক্যান্সারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

ওভারিয়ান ক্যান্সার কাদের বেশি হয় ?

এন্ডোমেট্রিওসিস হয়েছে এমন মহিলা, সন্তানহীন মহিলা, ফ্যালোপিয়ান টিউবে জটিলতা রয়েছে এমন রোগী, ওভ্যুলিউশনে সাহায্যকারী ওষুধ খেতে হয় এমন মহিলার ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিন দায়ী থাকে। অর্থাৎ কোনও মহিলার মা, মাসি, দিদা, ঠাকুমার ব্রেস্ট ক্যান্সার বা ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে, তারও এই রোগ হওয়ার ভয় এড়ানো যায় না। ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে বিআরসিএ জিনের মিউটেশন। তাই কোনও মহিলার ওভারিয়ান ক্যান্সার হলে, তাঁর ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। আবার ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে তাঁর পরবর্তীকালে ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ভয় থাকে।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের জন্য কিছু টেস্ট

মেনোপজ হয়ে গেলে নিয়মিত সময়ের অন্তরে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ম্যামোগ্রাম করাতে হবে। সমস্যা হল, ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কোনও স্ক্রিনিং টেস্ট নেই। তবে সংযত জীবনযাপন করার পরে এবং ওজন স্বাভাবিক রাখার পরেও হঠাৎ নিয়মিত গ্যাস, অ্যাসিডিটি, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের মতো সমস্যা তৈরি হলে সতর্ক হওয়া দরকার। সাধারণত ট্রান্স ভ্যাজাইনাল সোনোগ্রাফি করে জানা যায় ওভারিতে টিউমার আছে কি নেই।

এছাড়া টিউমার খুব বড় হয়ে গেলে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল সোনোগ্রাফির সঙ্গে অ্যাবডোমিনাল সোনোগ্রাফিও করাতে হয়। আলট্রাসাউন্ডের সাহায্যে দেখা হয় টিউমারটির আকার আকৃতি কেমন। টিউমার শুধু জলভরা বেলুনের মতো দেখতে হলে সাধারণত বিনাইন টিউমার হয়। তবে বেলুনটি কঠিন উপাদানে ভরতি মনে হলে ম্যালিগন্যান্সি সন্দেহ করা হয়। টিউমার ম্যালিগনেন্ট কি না তা জানতে টিউমার মার্কার টেস্ট (সিএ১২৫, এলজিএইচ, বিটাএইচসিজি, আলফা ফিটো প্রোটিন) করানো যায়। এরপর মার্কার থেকে রিস্ক অব ম্যালিগন্যান্সি ইনডেক্স (আরএমআই) বা ম্যালিগন্যান্সি হওয়ার ঝুঁকি নির্ণয় করা হয়।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের চিকিৎসা

টিউমার খুব বড় না হলে বা অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে না গেলে সার্জারি করে টিউমার বাদ দেওয়া হয়। মেনোপজ শুরু হয়ে গেলে ও সন্তান হয়ে গেলে, দুই দিকের ওভারি, ইউটেরাস, ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তার আগে রোগী ও তাঁর আত্মীয়ের অনুমতি নিতে হয়। মহিলার বয়স কম হলে, সন্তান না থাকলে সেক্ষেত্রে টিউমার সহ ওভারি বাদ দেওয়া হয়। এরপর অন্য ওভারি থেকে বায়োপ্সির জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর দেওয়া হয় কেমোথেরাপি

সমস্যা হল, রোগীর মেটাস্টেসিস শুরু হয়ে গেলে বা ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে সার্জারি করা হয় না। আগে বায়োপ্সির জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় ওভারি থেকে। পরীক্ষায় ক্যান্সার আছে কি না তা দেখা হয়। ক্যান্সার থাকলে অঙ্কোলজিস্টের পরামর্শ মতো কেমোথেরাপি দিয়ে টিউমারের আকার প্রথমে ছোট করা হয়। টিউমার আকারে ছোট হয়ে গেলে তারপর সার্জারি করে যতটা সম্ভব টিউমার বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার কেমোথেরাপি চলে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago