মূত্রথলির অন্দরের গাত্রে অস্বাভাবিক ধরনের কোষের বৃদ্ধিকেই ব্লাডার ক্যান্সার বা মূত্রথলির ক্যান্সার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে টিউমার ছড়িয়ে পড়ে মূত্রথলির আশপাশের পেশিতেও।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্লাডার ক্যান্সারের রোগী ইউরিনের সঙ্গে ব্লাড বেরনর সমস্যা নিয়েই চিকিৎসকের কাছে হাজির হন। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যার নাম হিমাচুরিয়া। সাধারণত কোনও ব্যথা-যন্ত্রণা ছাড়াই ইউরিনের সঙ্গে রক্ত বেরতে দেখা যায়। ইউরিনের ধারার সঙ্গে রক্তের রেখা দেখতে পান রোগী। আবার, রক্তের কারণে ইউরিনের রং বাদামি হয়ে যেতে পারে। সবসময় যে ইউরিনে রক্ত দেখা যাবে এমন নয়। রক্তপাত একবার হয়ে ফের বন্ধ হয়ে আবার শুরু হতে পারে।
ব্লাডার ক্যান্সারের অনান্য লক্ষণ:
ইউরিনে রক্ত আসার পিছনে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কিডনি সংক্রমণ, কিডনি স্টোন, ইউরেথ্রাইটিস, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি এমন নানা কারণ দায়ী থাকতে পারে। তবে ক্যান্সারও একটি বড় কারণ। তাই ইউরিন পাসের সময় সামান্যতম রক্ত দেখতে পেলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ব্লাডার ক্যান্সার ফোর্থ স্টেজে পৌঁছে গেলে দেখা যেতে পারে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি—
একবার নির্ণীত হলে তখন দেখতে হয় ক্যান্সার কতখানি ছড়িয়েছে এবং কোন পর্যায়ে অসুখটি রয়েছে।
সঠিক কারণ জানা না গেলেও, কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নানা উপাদানের সংস্পর্শে থাকলে হতে পারে ব্লাডার ক্যান্সার।
ধূমপান একটি বড় কারণ। কোনও কোনও গবেষকের দাবি, যত মানুষের ব্লাডার ক্যান্সার হয় তার মধ্যে অর্ধেক লোকের ব্লাডার ক্যান্সার হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে ধূমপান।
বয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে ব্লাডার ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। বিশেষ করে সত্তরোর্ধ্বদের মধ্যে ব্লাডার ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। এছাড়া নারীর তুলনায় পুরুদের এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে।
অন্যান্য ঝুঁকি
ইউরিনে রক্তের দেখা পেলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমে ইউরিনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় ও ইউরিনে রক্ত, অস্বাভাবিক কোষ, ব্যাকটেরিয়া আছে কি না তা বোঝার চেষ্টা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক রেকটাম এবং ভ্যাজাইনা একজামিনেশন করাতে দিতে পারেন। কারণ কিছু ক্ষেত্রে ব্লাডার ক্যান্সার বড়সড় লাম্প বা ফোলা অংশ তৈরি করে যা রেকটাম এবং ভ্যাজাইনায় চাপ দেয়। চিকিৎসক কোনওভাবে ব্লাডার ক্যান্সার সন্দেহ করলে সিস্টোস্কোপি করানোর প্রয়োজন হয়।
নন মাসল ইনভেসিভ ক্যান্সার বা যেক্ষেত্রে ক্যান্সার পেশিকে ভেদ করেনি , সেক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে মূত্রথলির অন্দরের দেওয়াল থেকে টিউমার বাদ দিয়ে বাকি মূত্রথলির আকার অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব। এই সার্জারিকে বলে ট্রান্সইউরেথ্রাল রিসেকশন অব এ ব্লাডার টিউমার। সার্জারির পরে কেমোথেরাপি দেওয়ার দরকার পড়তে পারে রোগীকে।
মুশকিল হল ব্লাডার ক্যান্সারের ফিরে আসা বা রেকারেন্সের আশঙ্কা থাক. যথেষ্ট বেশি। সেক্ষেত্রে আলাদা করে রোগীর পরিস্থিতির দিকে দিতে হয় নজর।
তবে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ নন মাসল ইনভেসিভ ব্লাডার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্লাডার বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্লাডার বাদ দিতে হলে অন্যভাবে শরীরে থেকে ইউরিন বের করার দরকার পড়তে পারে। এক্ষেত্রে অ্যাবডোমেনে একটি ছোট ছিদ্র করে সেখানে একটি ইউরিন সংগ্রহের ব্যাগ আটকানো হয়। ওই ব্যাগের মধ্যে জমা হয় ইউরিন। অথবা নতুন করে একটি ব্লাডার তৈরির প্রয়োজন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আবার অপারেশনের অবস্থা না থাকলে তখন শুধু কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির আশ্রয় নেওয়া হতে পারে।
সিস্টোস্কোপি
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইউরেথ্রার মধ্যে দিয়ে সিস্টোস্কোপ প্রবেশ করান ও ব্লাডারের অন্দরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। সিস্টোস্কোপে থাকে ক্যামেরা ও আলো।
ইমেজিং
সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করাতেও দিতে পারেন চিকিৎসক। কারণ অনেক সময়েই ব্লাডারের অন্দরের প্রকৃত অবস্থা বোঝার দরকার পড়ে চিকিৎসকের।
কিছুক্ষেত্রে ইন্ট্রাভেনাস ইউরোগ্রাম করতেও দেন চিকিৎসক।
বায়োপ্সি
অসুখ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অব এ ব্লাডার টিউমার (TURBT) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্লাডার থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় ও বায়োপ্সির জন্য পাঠানো হয়।
ব্লাডার ক্যান্সার প্রতিরোধ
সবসময় যে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে তা নয়। তবে ঝুঁকি বাড়ায় এমন অবস্থাগুলি প্রতিরোধ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধূমপান বন্ধ করা দরকার। এছাড়া রাসায়নিক নিয়ে কাজ করতে হয় এমন কারখানায় সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
খাদ্যাভ্যাস
শাকসব্জি, ফল বেশি করে খেলে এবং কম ফ্যাটযুক্ত খাদ্য খেলে শরীরে রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতার বৃদ্ধি হয় যা ব্লাডার ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে বলে কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে। নিয়মিত এক্সারসাইজও রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা নেয়।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment