Categories: হৃদরোগ

হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

Published by

মাঝে মধ্যেই আমরা দেখতে পাই খুব কম বয়সেই বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। প্রশ্ন হল কেন এমন ঘটনা ঘটে? এমন সমস্যা বাড়ছেই বা কেন? দেখা যাক। গত ২০ বছর ধরে অল্প বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ-এ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমন ভাবর কোনও কারণ নেই যে হাসপাতাল, চিকিৎসক, রোগ নির্ণায়ক কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে বলেই এত সংখ্যক হার্টের রোগী ধরা পড়ছেন। আবার এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে আগে গ্রামের দিকে কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল না বলে কিংবা জেলার দিকে হয়তো একজন কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন তাই হার্টের অসুখ নির্ণয় হতো না। বিষয়টি এমন নয়। রোগী বুকের ব্যথা নিয়ে তখনও চিকিৎসকের কাছে ছুটতেন, এখনও ছোটেন। তবে সেই সময়ে যে রোগীরা ছুটে যেতেন তাঁর বয়স হতো ৫০-৬০ বছর। এখন রোগীর বয়স ঘোরাফেরা করছে ২৬-২৮-৩২-৩৮-৪০-এর মধ্যে! বলা ভালো, হার্টের সমস্যায় ভোগা রোগীর মধ্যে ৩ ভাগের ১ ভাগই অল্পবয়সি! ফলে একবাক্যে প্রায় সব কার্ডিওলজিস্টই স্বীকার করবেন অল্প বয়সে সত্যিসত্যিই হার্টের সমস্যা হচ্ছে।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ কী?

  • প্রথম কারণ হল ধূমপান। বিশেষ করে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই ধূমপান এখন একটা ভয়ঙ্কর কুঅভ্যেসে পরিণত হয়েছে। • ভারতীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিসের সমস্যাও যথেষ্ট বেড়েছে। • এক্সারসাইজের অভাব। • জীবন এবং কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধি। • অসংযমী খাদ্যাভ্যাস। • অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের সমস্যা। • স্থূলত্ব।

এই হল নিজের মন্দগামী জীবনযাত্রার ফলশ্রুতি হিসেবে তৈরি হওয়া হার্টের রোগের ঝুঁকি। আমাদের বুঝতে হবে উপরিউক্ত সবগুলি বিষয়ের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে।

তবে আরও কিছু বিষয় আছে। দক্ষিণ এশিয়ার অধিবাসী হিসেবে ভারতীয়রা অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক ডিজিজ-সহ করোনারি আর্টারি ডিজিজ-এর প্রতি বেশি সংবেদনশীল। পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় অন্তত ১০ বছর আগে হার্টের অসুখ দেখা যায়।

এছাড়া ভারতীয়দের শরীরে লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি যা রক্তবাহী নালিকায় প্লাক তৈরিতে ও র‌্যাপচারেও সাহায্য করে। এর ফলেই দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক।

পরিবারে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে ওই পরিবারের সুস্থ ব্যক্তিরও অল্পবয়সে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এছাড়া কিছু কিছু পরিবারে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি থাকে। জিনগত কারণেই এমন হয় যাকে বলে হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া। এই ধরনের জটিলতা থাকলেও দেখা দিতে পারে অল্পবয়সে হার্ট অ্যাটাক।

এই সমস্ত কারণ মিলেমিশে তরুণ বয়সে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ছে।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

  • বুকে ব্যথা যা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে রয়েছে এবং সাধারণ গ্যাস-অম্বলের ওষুধ খাওয়ার পরেও যাচ্ছে না এমন হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

দ্রুত চিকিৎসা কেন জরুরি?

মনে রাখবেন যত দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন ততই ভালো। কারণ যত দেরি হবে ততই হার্টের পেশির ক্ষতি হতে খাকবে। রোগীর সুস্থভাবে জীবনযাপন করাও জটিল হয়ে পড়বে। এমনকী অকালে প্রাণহানি ঘটাও আশ্চর্য নয়। মনে রাখবেন হার্ট অ্যাটাকের পর গোল্ডেন টাইম হল ১-২ ঘণ্টা।

জেনে রাখুন

অল্প বয়সে হার্টের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে দেখা যায়, এই ধরনের রোগীর হার্টে খুব যে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, স্টেনোসিস হয়ে থাকে এমন নয়। এমনকী এও দেখা যায়, হার্টের করোনারি আর্টারিতে হয়তো একটিই প্লাক ছিল। সেই প্লাক র‌্যাপচার করে এমনই ব্লাড কট তৈরি হয়েছে যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে!

এই কারণেই যত দ্রুত এই অল্পবয়সি রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে আর্টারির ব্লক খুলে দেওয়া যাবে ততই মঙ্গল। সবচাইতে বড় কথা এই অল্পবয়সি জনগোষ্ঠী যদি বিপন্মুক্ত হওয়ার পর নিয়ম মেনে ওষুধ খান, জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন তাহলে বাকি জীবন তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই কাটাতে পারবে। হয়তো অনেকরই আর হার্টের অসুখ হবেও না!

সতর্কতা

তাই সব বুকের ব্যথাকে গ্যাস বলে ফেলে না রেখে চট করে হাসপাতালে গিয়ে একটা ইসিজি করিয়ে নিলেই হয়! তাতেই রোগ ধরা পড়ে যাবে। প্রাণও বাঁচবে।

মানসিক চাপ মুক্ত থাকা জরুরি কেন?

আধুনিক জীবনযাত্রার সবচাইতে বড় সমস্যা হল চাহিদার কোনও শেষ নেই। এর ফলে জীবনে বাড়ছে উৎকণ্ঠার মাত্রা যা ক্রমশ অবসাদে পরিণত হচ্ছে। এই ধরনের মানসিক সমস্যা কিন্তু হার্টের নানা সমস্যা ত্বরান্বিত করে। এমনকী প্রি ম্যাচিওর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসও দেখা দেয়। সবচাইতে বড় কথা এই ধরনের সমস্যায় ভোগা মানুষরা চিকিৎসকের সাহায্য নিতেও অনেক দেরি করে ফেলেন।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়

ইন্টার হার্ট স্টাডি নামে একটি সমীক্ষা হয়েছিল ভারতে। তাতে বোঝা যায় অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের পিছনে দায়ী কতকগুলি জীবনযাত্রাজনিত সমস্যা। সেগুলি খুব সহজেই সংশোধন করা যায়। আর তার ফলে কমে যায় অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও। সেগুলি কী কী?

  • ধূমপান বর্জন • ওজন নিয়ন্ত্রণ • প্রতিদিন একটি করে মরশুমি ফল খাওয়া • সপ্তাহে পাঁচদিন এক্সারসাইজ করা • সুষম খাদ্য গ্রহণ • পর্যাপ্ত ঘুম • স্ট্রেস দূরে রাখতে যোগা বা ধ্যান করা।

দেখা গিয়েছে উপরিউক্ত বিষয়গুলি ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন থেকে একজন ব্যক্তিকে দূরে রাখতে পারে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago