আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের কারণ ও চিকিৎসা

Published by

আলসারেটিভ কোলাইটিস কি ?

আলসারেটিভ কোলাইটিস হল ইনটেসটাইনের একটি অটো ইমিউন ডিজিজ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইনটেসটাইনকে আক্রমণ করলে আলসারেটিভ কোলাইটিস হয়। এই রোগ হলে আমাদের digestive tract এ প্রদাহ এবং আলসার (ঘা) সৃষ্টি হয়। আলসারেটিভ কোলাইটিস হলে বৃহদন্ত্র বা লার্জ ইনটেসটাইনের সবচেয়ে ভেতরের আস্তরণ (কোলন) ও রেক্টাম (মলনালী) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের সমস্ত উপসর্গ অনেক সময় নিয়ে মাথা চাড়া দেয়, হঠাৎ নয়।

কোলাইটিস নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকেই এই রোগের উপসর্গগুলিকে পেটের সাধারণ সমস্যা বলে মনে করেন। কেউ ভাবেন গ্যাস কেউ মনে করেন অম্বলের সমস্যা। 

আসলে এটি একটি জটিল ব্যাধি। তাই রোগ সম্পর্কে একটি ধারণা করে নিলে ভালো হয়। তারপরে মনে রাখতে হবে যে এই রোগের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে যেন দেরি না হয়। টেস্ট করানোর পর ডাক্তার নিঃসন্দেহ হয়ে যাবেন। কোলাইটিস হলে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হয় ততই ভালো।

আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের লক্ষণ

.পেটে খুব ব্যথা। 

.ডায়ারিয়া।

.পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত। 

.মলের সঙ্গে রক্তপাত।

.পেট ফেঁপে থাকা।

.পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।

.ক্লান্তি।

.জ্বর।

.শিশুদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ঠিক মতো না হওয়া।

আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের ধরণ

প্রধানত চার ধরণের কোলাইটিস হয় যেগুলি নিচে বর্ণনা করা হল। অনেক সময়, একেকটি টাইপের উপসর্গ আরেকটির মতন হয়।

আলসারেটিভ প্রোকটাইটিস- এই ধরণের কোলাইটিসে প্রদাহ হয় অ্যানাস বা মলদ্বারের কাছে। সাধারণত এই টাইপের একমাত্র উপসর্গ বলতে মলদ্বার বা অ্যানাস থেকে রক্তপাত।

প্রোকটোসিগমোইডিটিস- এ ধরণের কোলাইটিস হলে মলদ্বার এবং কোলনের নিচের অংশ বা সিগময়েড কোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপসর্গ বলতে দেখা যায় ডায়ারিয়ার সঙ্গে রক্ত, পেটে ব্যথা এবং তাগিদ এলেও মলত্যাগ করতে না পারা। এই সমস্যাকে টেনেস মাস বলা হয়।

লেফট সাইডেড কোলাইটিস – এই টাইপে  মলদ্বার বা রেক্টাম থেকে সিগময়েড এবং কোলনের নিম্নবর্তী অংশ পর্যন্ত প্রদাহ সৃষ্টি হয়। উপসর্গ বলতে ডায়ারিয়ার সঙ্গে রক্তপাত, তলপেটে কামড়ানি এবং পেটের বাঁ দিকে ব্যথা এবং মলত্যাগ করার তাগিদ।

প্যানকোলাইটিস- এ ধরণের কোলাইটিস হলে সাধারণত পুরো কোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর উপসর্গ বলতে ঘন ঘন ডায়ারিয়ার সঙ্গে রক্তপাত যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তলপেটে কামড়ানি ও পেট ব্যথা এবং অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস।

আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের কারণ

প্রকৃত কারণ নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। আগে মনে করা হত, ডায়েট ও মানসিক চাপ এই রোগের কারণ। তবে এখনকার গবেষণা বলছে, এগুলো কোলাইটিসের কারণ নয়। অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু ডায়েট ও মানসিক চাপ (স্ট্রেস) কোলাইটিসের উপসর্গগুলিকে বাড়িয়ে তোলে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ না করলে এই রোগ হয়। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন কোনও আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই শুরু করে, তখন এই ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিপাক নালী বা ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্টকেও আক্রমণ করে বসে।

এই রোগের পেছনে বংশগতিরও একটা ভূমিকা থাকতে পারে। পরিবারে কারোর এই রোগ হয়ে থাকলে অন্যদেরও হতে পারে। তবে বংশগত কারণের ওপরে বেশি জোর দেওয়া যায় না যেহেতু আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগীদের বেশিরভাগেরই এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে না।

রোগ নির্ণয়

সব রোগ নির্ণয় করতেই আজকাল অত্যাধুনিক মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়। প্রায় সব রোগই এখন আগের তুলনায় সহজে নির্ণয় করা যায়। কোলাইটিসের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। কোলাইটিস হয়েছে বলে বোঝা না গেলেও রোগী বেশ কয়েকটি উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি কয়েকটি টেস্ট করাতে বলেন যেগুলির মধ্যে আছে কোলোনোস্কোপি ও বায়োপসি। এই দুই টেস্টের মাধ্যমে খুব সহজেই কোলাইটিস নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা

রোগীকে যথা সময়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। দেরি করলে রোগ নিরাময় শক্ত হয়ে পড়ে। সংক্রমণ থেকে কোলাইটিস হয়ে থাকলে, কিছু দিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরে ঠিক হয়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের এই রোগের ওষুধ দেওয়ার সময় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। রোগের বাড়াবাড়ি হলে চিকিৎসা হিসেবে সাধারণত স্টেরয়েড এবং সালফাস্যালাজিন দেওয়া হয়।  

বায়োলজিক্যাল থেরাপি

আজকাল কোলাইটিস সারাতে বায়োলজিক্যাল থেরাপি করা হয়। এই থেরাপি অত্যন্ত আধুনিক। রোগ সারানোর জন্য অনেক ওষুধ রয়েছে। তবে কোলাইটিস চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলে এভাবে চিকিৎসা করে ফল হয় না। তখন সার্জারি করে ইনটেসটাইন বাদ দিতে হয়। এই বিষয়টা এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago