সিওপিডি-এর পুরো কথা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত তথ্য অনুসারে বিশ্বে যে সকল কারণে বেশি প্রাণহানি ঘটে তার মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিওপিডি।
সিওপিডি হওয়ার প্রধান কারণ হল ধূমপান। দ্বিতীয় কারণটি হল বায়ুদূষণ। তৃতীয় কারণ হল কলকারখানাজাত দূষণ। অর্থাৎ বিভিন্ন কলকারখানায় দূষণের মধ্যেই যাদের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের সিওপিডি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। অর্থাৎ পাথর ভাঙার কাজ, বয়লার প্ল্যান্ট, ওয়েল্ডিং-এর কাজ করেন এমন ব্যক্তির ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে। চতুর্থ কারণ হল বদ্ধ রান্নাঘরে কাঠ, কয়লা, পাতা পুড়িয়ে রান্না করা। এই রান্নার সময়ে বেরনো ধোঁয়া ফুসফুসের চরম ক্ষতি করে।
সিওপিডি শরীরে থাবা বসায় দু’টি পর্যায়ে—১) ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস পর্ব। ২) এমফাইসিমা পর্ব।
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস পর্ব :- কোনও ব্যক্তি যদি দীর্ঘ কয়েকবছর একটানা ধূমপান করেন বা কলকারখানার দূষিত পরিবেশে কাজ করেন কিংবা বায়ুদূষণে দুষ্ট শহরে থাকেন অথবা বদ্ধ পরিবেশে জৈব জ্বালানির সাহায্যে রান্না করেন তাহলে ওই ব্যক্তির একসময় কাশির উপসর্গ দেখা দেবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই কাশি হবে, সামান্য কফও বেরবে। তারপর শরীরে খানিকটা স্বস্তি ফিরবে। কিছুটা চাঙ্গা হবে। এই ধরনের ব্যক্তির সারা বছরে এক-দুইবার মারাত্মক কফের সমস্যায় ভোগার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায় ও তার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হয়। এই হল ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস পর্ব। এরপরেও রোগী ধূমপান বন্ধ না করলে বা কলকারখানায় কাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিলে অথবা বায়ুদূষণপূর্ণ শহর ত্যাগ না করলে কিংবা জৈব জ্বালানির ব্যবহার না বন্ধ করলে কয়েক বছর পর তিনি এমফাইসিমা পর্বে প্রবেশ করবেন।
এমফাইসিমা পর্ব :- এই পর্বে রোগীর কাশির মাত্রা বাড়তে থাকে। দিনে তো কাশি হয়, তার সঙ্গে রাতেও কাশি হতে থাকে। কাশির জন্য ঘুম ভেঙে যায়। সামান্য পরিশ্রমেও শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। সিঁড়ি ভাঙতে প্রবল সমস্যা হয়। এমফাইসিমা পর্যায়ে ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফুসফুসের অন্দরে থাকা অতি ক্ষুদ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ অ্যালভিওলাস নষ্ট হতে থাকে। অ্যালভিওলাসই কিন্তু শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগের কাজটি করে। অ্যালভিওলাসের গঠনটাই পালটে যায়। লাং-এর বাতাস ধারণের ক্ষমতা এবং ফুলে ওঠার ক্ষমতাও নষ্ট হতে থাকে। এমফাইসিমা পর্যায়ে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয় তা অপূরণীয় এবং স্থায়ী। রোগের অগ্রগতির সঙ্গে একসময় অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে রোগীর বিছানা থেকে উঠে বাথরুম পর্যন্ত হেঁটে যেতেও শ্বাসকষ্ট হয় । কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে সর্বক্ষণ নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রাখতে হয়। তবে ব্রঙ্কাইটিস পর্ব থেকে এমন ধরনের পরিবর্তন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। গড়ে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময়ও লাগতে পারে। তবে কার বেশি সময় লাগবে আর কার কম তা আগে থেকে বলা যায় না।
এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখি উপরিউক্ত চারটি কারণ ছাড়াও আরও একটি কারণে সিওপিডি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর তা হল টিউবারক্যুলোসিস বা ফুসফুসে ক্রনিক সংক্রমণ।
সিওপিডি প্রতিরোধযোগ্য অসুখ। অসুখটি তৈরি হওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলি দায়ী থাকে সেগুলিকে এড়িয়ে চললে রোগটি হবে না। রোগটি হওয়ার ভয় বাড়ায় এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসুন। কারণ একবার এমফাইসিমা হলে আর ফুসফুসের ক্ষতি পূরণ কর যায় না। অতএব ধূমপানের অভ্যেস থাকলে তা ছাড়ুন। জৈব জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করুন। কলকারখানায় উপযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তবেই কাজ করুন।
মনে রাখবেন রোগকে অবহেলা করলে একটা পর্যায়ে রোগীর শ্বাসকষ্ট চরম আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা প্রবল হলে তখন তাকে বলে অ্যাকিউট একসারবেশন। এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। রোগী সতর্ক না হলে অসুখ বাড়তে থাকবে এবং রেসপিরেটরি ফেলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। রেসপিরেটরি ফেলিওর থেকে হার্ট ফেলিওর হওয়ার ভয়ও থাকে।
উপসর্গ শুনেই চিকিৎসক সাধারণত রোগ নির্ণয় করেন। তবে লাং ফাংশন টেস্ট করালে তখন বোঝা যায় শ্বাস যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কিনা। এই পরীক্ষায় ফুসফুসের ক্ষতিও নির্ণয় করা যায়।
শ্বাসনালীর সংকোচনের জন্য প্রবল শ্বাসকষ্ট হয় রোগীর। শ্বাসনালী খুলে দেওয়ার জন্য ইনহেলার দেওয়া হয়। এই ব্রঙ্কোডায়ালেটর দিলে উপসর্গের অনেক উন্নতি হয়। তাই চিকিৎসকের কথা মতো ব্রঙ্কোডায়ালেটর ব্যবহার করুন।
শীতকালে বায়ুপ্রবাহের মাত্রা কমে। ঠান্ডা বাতাস ভারী হয়ে থাকে। বাতাসে বাড়ে ধূলিকণার মাত্রা। এই কারণে সিওপিডির রোগীর কষ্টও বাড়ে।
বসন্তকালে আবার বাতাসে ধূলিকণার সঙ্গে যোগ হয় ফুলের রেণু। এছাড়া শীত ও বসন্তে কিছু ভাইরাসের সংখ্যায় বৃদ্ধি ঘটে। তাই ভাইরাল ইনফেকশনের মাত্রাও বেড়ে যায় এইসময়। তাই রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যাও বাড়ে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment