লিভারের সমস্যা ও তাদের কারন

Published by

লিভার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা খাদ্যের হজম প্রক্রিয়া, তা থেকে শক্তি আহরন এবং বর্জ্যের পরিশ্রুতিকরন করে থাকে। লিভার খাদ্য হজম করে, তা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এবং যতক্ষণ না শরীরের প্রয়োজন হয়, সেই শক্তি শরীরে জমা করে রাখে। লিভার শরীরের রক্ত প্রবাহের ক্রিয়ার অভ্যন্তরে দূষিয়া পদার্থ কে শরীরের বাইরে বের করতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যা বা রোগ বিভিন্ন কারনে হতে পারে, কিন্তু সেগুলো সবই লিভারের কার্যক্ষমতা কে নষ্ট করে।

লিভারের সমস্যার কিছু সাধারণ রোগ লক্ষন

বিভিন্ন ধরনের লিভারের সমস্যার বিভিন্ন রোগ লক্ষন দেখা যায়। কখনো এমনও হয়, যে লিভারের সমস্যা আছে, কিন্তু তার কোনো রোগ লক্ষন নেই। তবে কিছু খুব সাধারণ রোগলক্ষনগুলি হল —

      i.ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব, যা জণ্ডিস নামে পরিচিত।

     ii.ত্বকের ফ্যাকাসে রঙ, মলের কালো রঙ।

    iii.লিভার আকৃতিতে বড় হয়ে যায়, যার ফলে শুতে বা খেতে সমস্যা হয়।

    iv.এনসেফালোপ্যাথি, যা লিভারের গভীর অসুখের ফলে হয় এবং এর প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের ওপর, যার কারনে মুড, ঘুম এবং চিনতে পারার ক্ষমতায় সমস্যা দেখা যায়।

লিভারের সমস্যা

i.হেপাটাইটিস :

হেপাটাইটিস লিভারের এক প্রকারের প্রদাহ। এটি ভাইরাসের কারনে হলে, একে ভাইরাল হেপাটাইটিস বলা হয়। হেপাটাইটিস লিভারের ক্ষতি করে, যার ফলে তা সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অধিকাংশ ভাইরাল হেপাটাইটিস সংক্রামক, তবে টাইপ এ এবং টাইপ বি এর ভ্যাক্সিন নিয়ে, অন্যান্য প্রিভেন্টিভ পদ্ধতি গ্রহণ করে, যেমন যৌন সংসর্গের সময় কন্ডোম ব্যবহার এবং একবার ব্যবহারকৃত সূঁচ আর ব্যবহার না করা, ইত্যাদি পদ্ধতি গ্রহণ করে এর থেকে বাঁচা যেতে পারে। পাঁচ প্রকারের হেপাটাইটিস আছে। সেগুলো হল —

      হেপাটাইটিস এ :– সাধারণত সংক্রমিত খাদ্য ও জল থেকে হেপাটাইটিস এ ছড়ায়। রোগলক্ষন খুব তাড়াতাড়ি সেরে গেলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

     হেপাটাইটিস বি :- এই ভাইরাল হেপাটাইটিস অ্যাকিউট বা ক্রনিক উভয়ই হতে পারে। এটি শরীরের তরলের মাধ্যমে যেমন রক্ত বা বীর্যের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের ভেতর ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসা সম্ভব হলেও এটি সম্পূর্ণ ভাবে সারে না। প্রথমেই রোগ ধরা পড়ে চিকিৎসা শুরু হলে রোগের জটিলতা এড়ানো যায়। তাই হেপাটাইটিস বি হওয়ার ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।

    হেপাটাইটিস সি :- হেপাটাইটিস সি অ্যাকিউট বা ক্রনিক উভয়ই হতে পারে। এটি অধিকাংশ সময়ই হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের সাথে সংস্পর্শে আসলে ছড়িয়ে থাকে। যদিও প্রথম দিকে এর কোনো রোগলক্ষন তেমন দেখাই যায় না, তবে পরবর্তীতে এটি লিভারের স্থায়ী ক্ষতি করে।

    হেপাটাইটিস ডি :- এটি হেপাটাইটিস এর একটা অত্যন্ত গুরুতর অবস্থা, যা কেবল হেপাটাইটিস বি রোগীদেরই হয়ে থাকে।

   হেপাটাইটিস ই :– এটি সাধারণত সংক্রমিত জল পান করার ফলে হয়ে থাকে। কয়েক সপ্তাহের ভেতর এটি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায় এবং সেইভাবে কোনো জটিলতাও থাকে না।

 ii.ফ্যাটি লিভার ডিজিজ :

লিভারের অভ্যন্তরে মেদ জন্ম নিলে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়ে থাকে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ দুই প্রকারের হয়ে থাকে।

    অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, যা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহনের ফলে হয়ে থাকে।

     ননঅ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, যা অন্যান্য নানা কারণে হয়ে থাকে এবং সেই কারন গুলো জানার জন্য এখনও পরীক্ষা চলছে।

সঠিক চিকিৎসা ছাড়া এই উভয় প্রকার ফ্যাটি লিভার ডিজিজই লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। লিভার

সিরোসিস এবং লিভারের কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন

রোগলক্ষনের কিছুটা উন্নতি ঘটায় এবং জটিলতার সম্ভাবনা কমায়।

iii. অটোইমিউন কন্ডিশন :

অটোইমিউন কন্ডিশনে আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমই শরীরের সুস্থ কোশগুলিকে আক্রমণ করে। বিভিন্ন অটোইমিউন কন্ডিশনে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম লিভারের কোশগুলিকেও আক্রমণ করে, যেমন

      অটোইমিউন হেপাটাইটিস :- এই পরিস্থিতিতে রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই লিভারকে আক্রমণ করে, ফলে লিভারে প্রদাহ তৈরি হয় এবং যদি এর চিকিৎসা না হয়, তাহলে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে।

      প্রাইমারি বাইলারি সিরোসিস :- লিভারের পিত্তথলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অতিরিক্ত পিত্ত তৈরি হয়।

      প্রাইমারি স্ক্লেরোসিং চোলাংগাইটিস :- এই প্রদাহজনিত সমস্যাটিতে পিত্তথলি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। পিত্তথলিতে ব্লক তৈরি হয়, ফলে লিভারের ভেতর পিত্ত জমা হতে থাকে। এর থেকে সিরোসিস বা লিভার ফেলিওর হতে পারে।

বংশগতি জনিত কারন

বিভিন্ন বংশগতি জনিত কারণ, যা রোগী তার মা অথবা বাবার কাছ থেকে পেয়ে থাকে, তার ফলেও নানারকম লিভার ডিজিজ হতে পারে।

   হেমোক্রোম্যাটোসিস : এর ফলে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়। এই আয়রন লিভার সহ শরীরের অন্যান্য অংশেও জমা হয়। এটির সঠিক চিকিৎসা না হলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 উইলসন ডিজিজ : এই রোগের ফলে কপার বা তামাকে পিত্তথলিতে পাঠানোর পরিবর্তে লিভার নিজেই তা শোষণ করে নেয়। ফলে লিভারে অতিরিক্ত কপার জমা হলে, তা রক্তজালিকার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং মস্তিষ্ক সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

 আল্ফা ১ অ্যান্টিট্রিপসিন ডেফিসিয়েন্সি : এটি তখন হয়, যখন লিভার প্রয়োজনীয় আল্ফা ১ অ্যান্টিট্রিপসিন উৎপাদন করতে পারে না। আল্ফা ১ অ্যান্টিট্রিপসিন হল একটি প্রোটিন, যা শরীরে উপস্থিত উৎসেচকগুলিকে ভাঙতে সাহায্য করে। এটির অভাবের ফলে লিভারের সাথে সাথে ফুসফুসেরও নানা রোগ হয়ে থাকে। এটি কখনই সম্পূর্ণ ভাবে সেরে যায় না, তবে চিকিৎসা করালে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বিভিন্ন ওষুধের কারনে হওয়া লিভার ডিজিজ

কিছু কিছু ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং সেই সাথে কিছু সাপ্লিমেন্টের অতিরিক্ত সেবএর ফলে লিভার ভীষণআবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখন আপনি এই ওষুধ খাওয়া বন্ধকরে দেন তখন ক্ষতি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওই ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট চলতে থাকলে লিভারের ক্ষতি স্থায়ী হয়ে পড়ে।

ক্যান্সার

 সরাসরি লিভারে যে ক্যান্সার এর সূচনা হচ্ছে, তাকে লিভার ক্যান্সার বলে। যদি শরীরের অন্য কোথাওক্যান্সার আরম্ভ হয় এবং লিভারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাকে সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার বলে।হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা নামক লিভার ক্যান্সারটি সবথেকে বেশি মানুষের হয়ে থাকে। এরফলে সমগ্রলিভার জুড়ে ক্যান্সারের ছোট ছোট স্পট তৈরি হয় বা একটি টিউমারও হতে পারে। লিভার ডিজিজগুলোর যদিচিকিৎসা না করা হয়, তাহলে তা থেকে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।

সিরোসিস

সিরোসিস হল লিভারের ক্ষত, যা বিভিন্ন লিভার ডিজিজ থেকে হতে পারে এবং লিভারের ক্ষতির অন্যান্যকারন, যেমন অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের গলে লিভার সিরোসিস হয়। সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং সিফিলিসেরকারনেও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর ফলে ধীরে ধীরে লিভার সিরোসিস হতে পারে। যদিও সিরোসিসের এইকারনগুলি খুব রেয়ার।

আমাদের লিভার যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটিকে ঠিককরার চেষ্টা করে, কিন্তু এই কাজটি যত বেশি হবে, তত লিভারে স্কার টিস্যু তৈরি হয় এবং যত বেশি স্কারটিস্যু তৈরি হয়, তত লিভার সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সিরোসিস প্রথমেই ধরা পড়লে, সিরোসিসেরকারনগুলির চিকিৎসা করা হয়, কিন্তু চিকিৎসা সঠিকভাবে চালু না রাখলে, অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে,যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷

লিভার ফেলিওর

ক্রনিক লিভার ফেলিওর তখন হয়, যখন লিভারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে লিভারের নানা রোগ এবং ধীরে ধীরে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। প্রথম প্রথম লিভার ফেলিওর এর কোনো রোগলক্ষন থাকে না, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যে যে রোগ লক্ষনগুলি দেখা যায়,সেগুলো হল —জণ্ডিস, ডায়ারিয়া, ক্লান্তি ও দুর্বলতা বমিভাব।

যদিও অ্যাকিউট লিভার ফেলিওর হঠাৎ করেই হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরীরে অতিরিক্ত বিষাক্ত জিনিস প্রবেশ করলে হয়।

কারা বিপদে আছে?

কিছু কিছু বিষয় কিছু কিছু মানুষকে লিভার ডিজিজ হওয়ার উপযোগী করে তোলে। এরমধ্যে সবথেকে বেশি যে কারণ টি দেখা যায়, তা হল অতিরিক্ত মদ্যপান (মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ৮ টি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১৫ টি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।) এছাড়া অন্যান্য যে কারনগুলি থাকলে লিভার ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তা হল —

       i.অন্য রোগীর ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহার করলে।

      ii.ননস্টেরাইল সূঁচের মাধ্যমে ট্যাটু বা পিয়ারসিং করলে।

     iii.প্রায়ই রক্ত বা শরীর থেকে নির্গত অন্যান্য তরলের সংস্পর্শে আসতে হয়, এমন পেশায় নিযুক্ত থাকলে।

   iv.অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গের ফলে সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ইনফেকশান হয়ে থাকলে।

   v. ডায়াবেটিস ও হাই কোলস্টেরল থাকলে।

   vi.পরিবারে লিভার ডিজিজ এর ইতিহাস থাকলে।

   vii. অতিরিক্ত ওজন।

   viii.টক্সিন ও পেস্টিসাইড এর সংস্পর্শে আসলে।

   ix. কিছু বিশেষ সাপ্লিমেন্ট ও হার্বস অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহন করলে।

   x.অ্যালকোহল এর সাথে কিছু অন্যান্য বিশেষ ওষুধ খেলে

   xi. ডোজের অতিরিক্ত ওষুধ খেলেও লিভার ডিজিজ হতে পারে।

লিভার ডিজিজ কে রোধ করার উপায় —

 i.প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, লিন প্রোটিন, দানা শস্য ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

ii.ব্যায়াম ও এক্সারসাইজ বাড়িয়ে শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে।

iii. অ্যালকোহল পানের পরিমান একদম সীমিত করে দিতে হবে।

iv.একটা স্বাভাবিক শারীরিক ওজন বজায় রাখতে হবে।

 v.ড্রাগ এবং ধূমপানের থেকে দূরে থাকতে হবে।

vi. ক্ষতিকারক কেমিক্যাল, যেমন,— এরোসল ক্লিনার, কীটনাশক এবং এই জাতীয় অন্যান্য পদার্থ

থেকে দূরে থাকতে হবে।

vii. সুরক্ষিত যৌন সংসর্গ করতে হবে।

viii.বছরে একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তপরীক্ষা সহ সসম্পূর্ণ চেকআপ করাতে হবে।

লিভার ডিজিজ কি ভাবে নির্নয় করা হয়?

আপনার চিকিৎসক আপনার লিভার প্রবলেম বোঝার জন্য আপনার মেডিকেল হিস্ট্রি ও ফ্যামিলি হিস্ট্রি সম্বন্ধে জানতে চাইবেন। এরপর তিনি আপনাকে প্রশ্ন করে বিভিন্ন রোগলক্ষন এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে তা বাড়ে বা কমে, সে সম্বন্ধে জানতে চাইবেন।

আপনার রোগলক্ষন এর ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক আপনাকে আপনার খাদ্য ও পানীয় অভ্যাস সম্পর্কে জানতে চাইবেন। আপনি কি কি ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত খান, তা চিকিৎসককে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন।

এই সমস্ত তথ্যগুলো পাওয়ার পরে, চিকিৎসক যে যে পরীক্ষাগুলি করতে দেবেন, সেগুলো হল —

i.লিভার ফাংশন টেস্ট

ii. কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট টেস্ট।

iii.সি.টি স্ক্যান, আল্ট্রাসাউন্ড এবং M.R.I করতে বলতে পারেন, লিভার ড্যামেজ বা টিউমার বোঝার জন্য ।

iv.লিভার বায়োপসি, যেটায় লিভারের একটি ছোট্ট অংশ নিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

লিভার ডিজিজের চিকিৎসা কিভাবে হয়?

অনেক লিভার ডিজিজই ক্রনিক, অর্থাৎ তারা বছরের পর বছর থাকে এবং কখনো সারে না। কিন্তু ক্রনিক লিভার ডিজিজকেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে জীবন ধারণ পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই লিভার ডিজিজ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এগুলো হল —

 i.অ্যালকোহল পানের পরিমান একদম সীমিত করে দেওয়া।

  ii.একটা স্বাভাবিক শারীরিক ওজন বজায় রাখা।

 iii.বেশি জল খাওয়া।

iv.অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, রিফাইন্ড সুগার ও সল্ট খাবার থেকে বাদ দিয়ে, খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রাখতে হবেআপনার লিভারের সমস্যা বুঝে চিকিৎসক আপনার ডায়েটে পরিবর্তন আনতে পারেন, যেমন — যাদের উইলসন্স ডিজিজ আছে, তাদের কপার যুক্ত খাদ্য, খোলশযুক্ত জলজ প্রানীর মাংস, মাশরুম এবং বাদাম খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

লিভারের অবস্থা অনুযায়ী বিশেষ চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে। যেমন —

i. হেপাটাইটিস থাকলে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ।

ii. লিভারের প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড।

iii. ব্লাড প্রেশারের ওষুধ।

iv. অ্যান্টিবায়োয়িক।

v. লিভার হেলথ ভালো রাখার জন্য ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারীর মাধ্যমে সমগ্র লিভার বা তার কিছু অংশ কেটে বাদ দিতে হতে পারে। যখন অন্য আর কোনো ওষুধ বা পদ্ধতি কাজ করে না, তখন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়। অধিকাংশ লিভার ডিজিজকেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যদি তা প্রথম দিকেই ধরা পড়ে। যদিও চিকিৎসা না হলে লিভারের চিরস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। লিভারের চিকিৎসা না হলে তা থেকে লিভার সিরোসিস হতে পারে এবং তা হলে লিভারে চিরস্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়। সিরোসিস অতিরিক্ত পরিমানে হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস, অ্যালকোহল পান না করা ইত্যাদি মেনে লিভার কে সুস্থ রাখা যায় ।

Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago