অ্যানিমিয়ার লক্ষণ ও কারণ

Published by

পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১৪-এর নীচে হলে এবং মহিলার ক্ষেত্রে ১২-এর নীচে নেমে গেলে তখন বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি অ্যানিমিয়ায় (anemia) আক্রান্ত হয়েছেন। ষাট বছরের উর্ধ্বে পুরুষের (aged people) প্রতি ডেসিলিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হল ১৪ থেকে ১৭ গ্রাম। নারীর ক্ষেত্রে মাত্র ১২ থেকে ১৫ গ্রাম।

অ্যানিমিয়া লক্ষণগুলি হল :-

• মাথা ঘোরা ।

• ক্লান্তি বোধ ।

• দুর্বল বোধ করা ।

• ত্বকের রং ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ।

• কিছু কিছু বয়স্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও কারণ ছাড়াই তাঁরা বারবার ঘরের মেঝেয়, রাস্তায় বা বাথরুমে পড়ে যাচ্ছেন। এমন সমস্যা হলে সতর্ক হতে হবে। এই শারীরিক উপসর্গগুলিই অ্যানিমিয়ার বাহ্যিক লক্ষণ। এই ধরনের সমস্যার দিকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীকালে রোগীর বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকসময় হার্ট ফেলিওরের আশঙ্কাও থাকে।

অ্যানিমিয়ার মূল কারণগুলি হল :-

দাঁতের স্বাস্থ্য: বয়স হলে অনেকেরই দাঁত ক্ষয়ে যায়, দাঁত পড়েও যায়। ভালো করে চিবিয়ে খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। বয়স্করা তাই শক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলেন। কেউ কেউ সঠিকভাবে খাবারও খাননা। ফলে শরীরে প্রয়োজনমাফিক ক্যালোরি প্রবেশ করে না। দেখা দেয় অপুষ্টি। অপুষ্টির কারণেও হতে পারে রক্তাল্পতা।

আয়রনের ঘাটতি: পাতে আয়রনযুক্ত খাদ্য রাখতেই হবে। না হলে হতে পারে আয়রনের ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া।

খাদ্যাভ্যাস: কিছু বয়স্ক মানুষ মাছ-মাংস- ডিম খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। তাঁরা নিরামিষ খাদ্যের উপর ভরসা রাখেন বেশি। এই কারণে তাঁদের আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফোলিক অ্যাসিডের ঘাটতি দেখা দেয়।

রক্তপাত: মনে রাখবেন পাইলস (piles) থাকলে ও সেই কারণে রক্তপাত হলেও অ্যানিমিয়া দেখা যেতে পারে। আবার কোলনে আলসার হলে সেখান থেকেও হতে পারে ব্লিডিং। অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরেও মেনস্ট্রুয়েশনের মতো রক্তপাত হলে তা কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয়। লজ্জার কারণে অনেকেই এই বিষয়গুলি লুকিয়ে যান। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে ও চিকিৎসা করাতে হবে।

কিডনির সমস্যা: এরিথ্রোপয়েটিন নামে বিশেষ হরমোন তৈরি হয় কিডনি থেকে। রক্তের কোষ তৈরিতে কাজে লাগে এই হরমোন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে অনেক বয়স্ক মানুষের কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। এদিকে কিছু মানুষ অনিয়ন্ত্রিত হাই ব্লাড প্রেশার, সুগারের সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অতএব কিডনির সমস্যা থেকে এরিথ্রোপয়েটিনের উৎপাদনে বাধা তৈরি হয়। এই জটিলতা থেকেও দেখা দিতে পারে অ্যানিমিয়া।

হরমোনের সমস্যা: অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় অ্যান্ড্রোজেন নামে হরমোন। এই হরমোন রক্তের উৎপাদনে সাহায্য করে, এই হরমোনের ঘাটতিতেও হতে পারে রক্তাল্পতা।

প্রদাহজনিত সমস্যা: রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হলে বা দীর্ঘদিনের প্রদাহজনিত কোনও সমস্যা থাকলে রোগীর অস্থিমজ্জায় লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে রোগী ভুগতে পারেন রক্তাল্পতার সমস্যায়।

মারাত্মক জটিল কারণ: মায়েলোডিসপ্ল্যাস্টিক সিনড্রোম নামের ক্যান্সার, মাল্টিপল মায়েলমার মতো ক্যান্সারের কারণেও হতেপারে রক্তাল্পতার মতো জটিলতা।

রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা

কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট কিংবা কমপ্লিট হিমোগ্রাম পরীক্ষায় অসুখ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। আন্দাজ করতে পারেন। প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসক রোগীকে লিভার ফাংশন টেস্ট করাতে দিতে পারেন। চিকিৎসক ব্লাড ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করাতেও দিতে পারনে কিডনির অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে। এছাড়া আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফোলিক অ্যাসিডের অভাব আছে কি না তা জানতে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। প্রদাহজনিত সমস্যা থাকলে সি রিয়্যাকটিভ প্রোটিন, ইএসআর করতে দেওয়া হয়। এই ধরনের টেস্ট করার পরেও রক্তাল্পতার মূল কারণ ধরা না পড়লে বোন ম্যারো টেস্ট করাতে হতে পারে রোগীকে। এই টেস্ট করালে বোঝা যায় সেখান থেকে তৈরি হওয়া কোষগুলিতে কোনও অস্বাভাবিকত্ব আছে কি না। অর্থাৎ বোন ম্যারো এবং জেনেটিক স্টাডি কর রক্তাল্পতার মূল কারণ ধরা পড়ে যায়।

চিকিৎসা

• আয়রন ঘাটতি জনিত কারণে অ্যানিমিয়া হলে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতিজনিত কারণে সমস্যা হলে ভিটামিন বি১২ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, এছাড়া দেওয়া হয় ফোলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট। তার সঙ্গে খেতে হয় পুষ্টিকর খাদ্য। মাছ-মাংস- ডিম খেতে হবে ।

• অ্যান্ড্রোজেন, এরিথ্রোপয়েটিন হরমোনের ঘাটতিজনিত কারণে অ্যানিমিয়া হলে এই হরমোনের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।

• পাইলস, আলসারের মতো অসুখ বা প্রদাহ জনিত সমস্যার কারণে অ্যানিমিয়া হলে মূল সমস্যাটির চিকিৎসা করাতে হবে। ক্যান্সারের কারণে অ্যানিমিয়া হলে সেক্ষেত্রে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে হবে।

মনে রাখবেন

বয়স্কদের অনেকেরই হার্টের সমস্যা থাকে। হার্টের সমস্যার সঙ্গে অ্যানিমিয়া থাকলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সবসময়েই নয়-দশের ওপরে রাখতে হবে। কারণ হিমোগ্লোবিন নয়ের নীচে নেমে গেলে হার্ট ফেলিওর হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

রোগ প্রতিরোধ

সুষম খাদ্য খেতে হবে। বয়স্ক এবং মহিলাদের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম না খাওয়ার প্রবণতা থাকে। এর ফলে অপুষ্টিজনিত কারণে রক্তাল্পতা বেশি হতে দেখা যায়। সুতরাং পরিবারের বাকিদের এই বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago